বছরের শেষ মাস বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনের সঙ্গে বেড়েছে নির্বাচনী ভোজ। এতে নিম্নমুখী দেশি ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সরবরাহ না থাকার অজুহাত দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য মতে, কয়েকটি কারণে চাহিদা বাড়ার পরও শীতে সব ধরনের মুরগির সরবরাহ কম। কারণ শীতে মুরগির রোগবালাই বেশি হওয়ায় অনেক খামারি এ সময় মুরগি পালন করে না। পাশাপাশি দীর্ঘদিন মুরগির দাম নিম্নমুখী থাকায় অনেক খামার বন্ধ রয়েছে। এতে বাজারে এমন প্রভাব পড়েছে। রাজধানীর বাজারে গত এক-দেড় সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা। আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। এ ছাড়া লেয়ার মুরগির দাম একই হারে বেড়ে হয়েছে ১৯০ টাকা। আর এ দুই পদের থেকেও বেশি বেড়েছে কক মুরগির দাম। প্রতি কেজি কক কিনতে এখন ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, যা আগে ১৮০ টাকায় পাওয়া যেত। সঙ্গে দেশি মুরগি আকারভেদে আগের থেকে প্রতি হালি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, শান্তিনগর ঘুরে বাজারভেদে দামের বেশ পার্থক্য পাওয়া গেছে। তবে দাম বৃদ্ধির হার সবখানেই একই ছিল। খিলগাঁও বাজারে সাজ্জাদ হোসেন নামের এক বিক্রেতা বলেন, এক সপ্তাহ আগে এ বাজারের ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করেছি ১৩০ টাকায়। এখন সেটা ১৫০। কারওয়ানবাজার ও কাপ্তানবাজারে পাইকারি মুরগির দামও ২০ টাকা হারে বেড়েছে। আগের মতো এখন আর মুরগি আসছে না।
কারওয়ানবাজারে পাইকারি মুরগির দোকানগুলো তেজগাঁও রেলস্টেশনের কাছাকাছি। সেখানে বিক্রেতা শুক্কুর শেখ বলেন, শীতে মুরগির রোগ হয়। আর নানা অনুষ্ঠানে গ্রামগঞ্জেই মুরগি বিক্রি বেশি হচ্ছে। এ কারণে সরবরাহে বেশ টানাটানি। প্রতি গাড়ি মুরগি এখন ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি দিয়ে আনতে হচ্ছে।
এদিকে মুরগির দাম বাড়েনি বরং স্বাভাবিক হয়েছে এমনটা জানিয়ে শরিফ উদ্দিন নামের উত্তরবঙ্গের এক ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে ১৪০ টাকা মুরগির দাম স্বাভাবিক। কিন্তু এ দাম এক মাস আগে কমে এসেছিল। এখন আবার আগের দামে ফিরেছে।
তিনি জানান, ডিম ও ফিডের (মুরগির খাবার) যে দাম, এতে খামারিরা বহুদিন থেকে নিম্নমুখী মুরগির দামে লোকসানে ভুগেছে। একে একে উত্তরবঙ্গের প্রচুর খামার বন্ধ হয়ে গেছে। প্রচুর খামারি এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে বলে তার দাবি।
এদিকে মুরগির দাম বাড়লেও কমে এসেছে ডিমের দাম। এক মাসের ব্যবধানে প্রতি ডজন ডিমের দাম প্রায় ২০ টাকা কমেছে। পাড়া-মহল্লার দোকানে প্রতি হালি ডিম ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি বাজারে প্রতি ডজন ডিম ৮২ টাকা।
অপরদিকে রাজধানীর বাজারগুলোতে সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে আরো ৫ টাকা কমেছে । এ নিয়ে গত এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমল কেজিতে ২০ টাকা। পেঁয়াজের পাশাপাশি স্বস্তি রয়েছে সকল পদের সবজির দামেও।
রাজধানীর বাজারগুলোয় প্রায় সব ধরনের সবজি মিলছে ৪০ টাকার মধ্যে। আর শিম, শালগম, মুলা মিলছে ২০ টাকা কেজিতে। আর নতুন চাল আসার পর থেকে এ বাজারও নিম্নমুখী। দীর্ঘদিন পরে চালের দাম কমায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে দরিদ্র মানুষরা।