নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিড়াল একটি আদুরে প্রাণী। স্তন্যপায়ী ও শান্তশিষ্ট পোষ্য প্রাণী। আমাদের আশপাশে অনেক মানুষই এমন আছেন, যারা বিড়ালকে ভালোবাসেন। বিড়াল লালন-পালন করেন অনেকেই। বিড়ালকে ভালোবাসার নানা গল্প প্রচলিত আছে আমাদের সমাজে ও ইতিহাসের পাতায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও বিড়াল পছন্দ করতেন। তিনি যখন অজু করতেন, অজুর পাত্র থেকে বিড়ালকে পানি পান করাতেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বিড়াল অপবিত্র নয়। এরা তোমাদের আশপাশেই ঘোরাফেরা করে।’ হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি দিয়ে আমি রাসুলকে (সা.) অজু করতে দেখেছি।’(আবু দাউদ, হাদিস নং-৭৬)
বিখ্যাত সাহাবী আবু হোরায়রা (রা.)-এর আসল নাম ছিল আব্দুর রহমান। তিনি বিড়ালকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। সব সময় বিড়াল সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা করতেন। তার এই বিড়ালপ্রীতির কারণে একদিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাসুল (সা.) তাকে আবু হোরায়রা বা বিড়ালের পিতা বলে সম্বোধন করলেন। এরপর থেকে তার আসল নাম আব্দুর রহমানের পরিবর্তে রাসুলের সম্বোধিত নাম বেশি পরিচিত হতে শুরু করল এবং এই নামেই খ্যাতি লাভ করলেন তিনি। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পরিশুদ্ধ-সহিহ হাদিসের বর্ণনাকারী হিসেবে আবু হুরায়রা (রা.) সর্বাধিক সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য।
বিড়ালকে ভালোবাসা এবং লালন-পালন করা যেমন বৈধ, এ প্রাণীটিকে কষ্ট দেওয়াও তেমন অবৈধ। বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমে এ বিষয়ক হাদিস এসেছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একজন নারী একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে যাবে। কারণ সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। তাকে খেতে দেয়নি এবং ছেড়েও দেয়নি- যাতে সে জমিনে বিচরণ করে কীটপতঙ্গ বা অন্য কিছু খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে।’ (বুখারি, সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়, হাদিস নং-৩৩১৮)
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার সামনে জাহান্নাম পেশ করা হলো। সেখানে আমি বিড়ালকে শাস্তি দেওয়ার কারণে বনি ইসরাইলের এক নারীকে শাস্তি পেতে দেখলাম। সে নারী বিড়ালটির খাবারের ব্যবস্থা নিজে করেনি এবং তাকে ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে নিজের খাবার নিজে সংগ্রহ করতে পারে। বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। (মুসলিম, সূর্যগ্রহণের সালাত অধ্যায়, হাদিস নং-০৯, ৯০৪)
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে বিড়াল বা পশুপাখি পালনের ব্যাপারে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা রয়েছে। সেগুলো হলো- পশুপাখি বা অন্য যেকোনো প্রাণীর ওপর দয়া দেখানো বা সহানুভূতি দেখানো উত্তম কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যারা দয়া করেন, আল্লাহও তাদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো। তা হলে যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৯৪১)
যেসব পশুপাখি পালনের উদ্দেশ্যে বন্দি করে রাখা হয়, তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব মালিকের বহন করা আবশ্যক।
খাবার প্রদান করা ছাড়া কোনো পশুপাখিকে বেঁধে রাখা জায়েজ নেই। পশুপাখি বা কোনো প্রাণীর ওপর যেকোনো প্রকারের জুলুম করা হারাম। (কসাসুল হাদিস, শায়খ ড. মুস্তাফা মুরাদ আজহারী, মুফতি আবুল ওয়াফা শামসুদ্দিন আজহারী, মাকতাবাতুস সুন্নাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২৪১)
বিড়াল পালন করা বৈধ। শর্ত হলো এ প্রাণীটিকে কোনো প্রকারের কষ্ট দেওয়া যাবে না এবং তার পর্যাপ্ত খাদ্য-পানীয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বিড়ালের মাংস খাওয়া হারাম। তবে এর ঝুটা বা উচ্ছিষ্ট মাকরুহ। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২০৪)
ইসলামি স্কলারদের মধ্যে বিড়ালের ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেই বিশুদ্ধ মতামত হলো এর ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ বা হারাম। আবু জুবাইর (রহ.) বলেন, ‘আমি একবার জাবের (রা.)-এর কাছে কুকুর ও বিড়াল কেনাবেচা করার বিষয়টি জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ব্যাপারে আমাদের সাবধান করে দিয়েছেন।’ (মুসলিম, হাদিস নং-১৫৬৯)
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) কুকুর ও বিড়ালের বিক্রয় মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৪৭৯)