বিশ্বের বড় বার্ন হাসপাতাল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় নির্মিত শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের মডেল প্রতক্ষ্য করেন

ছবি: পিআইডি

সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ

বিশ্বের বড় বার্ন হাসপাতাল

  • প্রকাশিত ২৫ অক্টোবর, ২০১৮

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ন হাসপাতালের উদ্বোধন হলো বাংলাদেশে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পাশে নির্মিত ‘শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ নামক বিশেষায়িত এ প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধনের প্রাক্কালেই রোগী, চিকিৎসক ও অভিভাবকদের মনে আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে। বিগত কয়েক বছরে আমরা দেখেছি পোড়া মানুষের আহাজারি। কেউ হয়েছেন রাজনৈতিক সহিংসতায় পেট্রোল বোমার শিকার, কেউ বাসাবাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার বিসে¹ারণে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন, আবার অনেক শ্রমজীবী মানুষ কর্মের তাগিদে রিজার্ভ ট্যাঙ্কি পরিষ্কার করতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন, আবার পারিবারিক ও সামাজিক নৃশংসতায়ও অনেককে পুড়তে হয়েছে। এসব অগি²দগ্ধের দুঃখ-কষ্ট-ব্যথায় সমব্যথী হয়েছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তারই নির্দেশে নির্মিত হলো পোড়া রোগীদের চিকিৎসায় আধুনিক সব ব্যবস্থা ও সুবিধা নিয়ে আপাতত বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিশেষায়িত এই বার্ন হাসপাতাল।

চানখাঁরপুলে অবস্থিত দুই একর জমির ওপর ৯১২ কোটি টাকা খরচে নির্মিত ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট এ বার্ন হাসপাতালে রয়েছে ২৪টি ডবল ও ২৮টি সিঙ্গেল কেবিন, ১০ রোগীর একসঙ্গে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা এবং ৫০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটসহ ১২টি অপারেশন থিয়েটার ও অত্যাধুনিক পোস্ট-অপারেটিভ ওয়ার্ড। উপরন্তু দূরের রোগীদের সরাসরি ইনস্টিটিউটে আনার সুবিধার্থে এর ছাদে নির্মাণ করা হয়েছে হেলিপ্যাড। হেলিপ্যাড সুবিধাসম্পন্² দেশের প্রথম সরকারি হাসপাতালও এটি। এ ছাড়া বহুতলবিশিষ্ট এ হাসপাতালে রয়েছে তিনতলা বেজমেন্ট, যেখানে গাড়ি পার্কিং ও রেডিওলজিসহ আরো কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা আছে। সুতরাং ‘শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ দেশের চিকিৎসাসেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করি।

চিকিৎসাসেবায় আমরা যে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলেছি, তার প্রমাণ অতীতে আমাদের চিকিৎসকরা রেখেছেন। মাথা জোড়া লাগা দুই শিশু তোফা ও তহুরার সফল অস্ত্রোপচার, মুক্তামণির ডান হাত অক্ষত রেখে তিন কেজি ওজনের অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড অপসারণ, বৃক্ষমানব হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পাওয়া আবুল বাজানদারের অস্ত্রোপচার এবং মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়াকে সুস্থ অবস্থায় প্রসব করানোর সাফল্য বিদেশি গণমাধ্যমেও প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কেবল তা-ই নয়, বাংলাদেশের চিকিৎসকের উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহূত হচ্ছে অনেক দেশে মাতৃমৃত্যুরোধে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ রচিত ছয়টি বই ৪০টিরও অধিক দেশে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশি দুই চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা. মামুন আল মাহতাব ও ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর উদ্ভাবিত হেপাটাইটিস-বি’র ওষুধ ‘ন্যাসভ্যাক’ ব্যবহার করা হয় বিভিন্² দেশে। এ সবই বাংলাদেশের চিকিৎসক ও চিকিৎসাশাস্ত্রে গর্বের বিষয়। উত্তরোত্তর আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধির নিয়ামক এসব সাফল্য।

এরই ধারাবাহিকতায় পোড়া রোগীদের চিকিৎসাসেবায় এই বার্ন হাসপাতাল বিশ্বমানের হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সব পক্ষ আন্তরিক হলে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দেশেই দেওয়া সম্ভব। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বার্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের বললেন রোগীদের প্রতি সংবেদনশীল হতে। প্রধানমন্ত্রীর এই মানবিক মনের নিদর্শন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল দেশ ও জাতির সামনে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads