বিশ্বসেরা ১০ গোয়েন্দা সংস্থা

সেরা ১০ গোয়েন্দা সংস্থার লোগো

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

বিশ্বসেরা ১০ গোয়েন্দা সংস্থা

  • প্রকাশিত ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন দেশের সরকারি গোপনীয় কার্য সম্পাদনের লক্ষ্যেই ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বা গোয়েন্দা সংস্থার সৃষ্টি। গোয়েন্দা সংস্থার কাজ হলো নিজ দেশের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা, গবেষণা করা এবং দেশ ও দেশের নাগরিকদের নিরাপদে রাখা। এ ধরনের সংস্থাকে ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, গুপ্তচর সংস্থা, সিক্রেট সার্ভিস এজেন্সিও বলা হয়। বিভিন্ন গোপনীয় তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, গুপ্তচরবৃত্তি, সরকারকে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে তথ্য প্রদান, এমনকি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থরক্ষার্থে হত্যাকাণ্ডের মতো কাজও করে থাকে এ সংস্থাগুলো! এসব সংস্থার মধ্যে ভিনদেশিদের হুমকি মোকাবেলায় কাজ করে ইমপ্রোব অবলম্বনে বিশ্বের এমন শীর্ষ ১০টি দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে আজকের এই আয়োজন। গ্রন্থনা করেছেন সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন ও ইশতিয়াক আবীর

 

১. মোসাদ (ইসরাইল)

বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ও দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাটি কোন দেশের? আমেরিকা, ভারত নাকি রাশিয়া? এই দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থা বেশ শক্তিশালী হলেও সবচেয়ে দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাটি আসলে ইসরাইলের। তাদের গোয়েন্দা সংস্থাটির নাম ‘মোসাদ’। মোসাদের নীতি খুবই সহজ, নিজেদের স্বার্থরক্ষায় যেকোনো কিছুই করতে তারা প্রস্তুত। আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মোসাদ’ নাম দিয়ে এটির কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫১ সালের মার্চের শেষের দিকে। এর কর্মচারী-কর্মকর্তারা সংখ্যায় কত তার সঠিক তথ্য নেই। তবে ধারণা করা হয়, এই সংখ্যা ১ হাজার দুইশ’র মতো হতে পারে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, গোপন কার্যক্রম চালানো, আধাসামরিক অভিযান পরিচালনা করা তদপুরি ইসরাইলের স্বার্থরক্ষায় যেকোনো কিছু করাই এর প্রধান কাজ। মোসাদ ফিলিস্তিনের পিএলও সদস্যদের উৎখাতে ভূমিকা পালন করেছিল যখন ১৯৭২ সালের জার্মানির মিউনিখ অলিম্পিকে ১১ ইসরাইলি অ্যাথলেটকে হত্যা করা হয়েছিল। এ ছাড়া তারা ফ্রান্সের তৈরি মিগ-৫ বিমান চুরি করে আনে। মোসাদের এই রহস্যময় শক্তির পেছনে আছে তাদের দুর্ধর্ষ পরিচালনা পদ্ধতি। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে কাজ করে থাকে মোসাদ। তাই তাদের সম্পর্কে সবটুকু জানা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে জানা যায়, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় মোসাদের ৮টি বিভাগ। এই বিভাগের এজেন্টরা ডিপ্লোম্যাট, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ অন্যান্য ছদ্মবেশে কাজ করেন। তাদের মূল কাজ তথ্য, ঘটনা, ঘটনার গতি-প্রকৃতি সংগ্রহ করা।

 

২. এমআইসিক্স (যুক্তরাজ্য)

এমআইসিক্স ব্রিটিশ মিলিটারির ইন্টেলিজেন্সের একটি বিশেষায়িত শাখা। সংস্থাটির অফিসিয়াল নাম সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এসআইএস)। ১৯০৯ সালের অক্টোবরে সিক্রেট সার্ভিস ব্যুরো নামে এটি গঠিত হয়। এমআইসিক্স, মোসাদ এবং আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ একসঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখে। এই তিন সংস্থা একে অপরের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে। এমআইসিক্সের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্ব্বী দেশে হামলা ও হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার বিভিন্ন ইস্যুতে এ তিনটি সংস্থা একসঙ্গেই কাজ করেছে বলে জানা যায়। ১৯৮৮ সালে তিনজন আইরিশ রিপাবলিকান আর্মিকে জিব্রালটারে হত্যা করে ইউকে স্পেশাল ফোর্সেস। এতে সহায়তা করে মোসাদ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার মোসাদের কাছে তার দেশের নাগরিকদের জন্য হুমকি এমন লোকদের একটি তালিকা দিয়েছিল। এ ছাড়া মিসরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুল নাসেরকে হত্যার পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছিল এমআইসিক্স। অবশ্য ১৯৭০ সালে তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। ১৯৬০ সালে এমআইসিক্স হত্যার পরিকল্পনা করে কঙ্গোর প্রধানমন্ত্রী জাতীয়তাবাদী নেতা প্যাটরিক লুমামবাকে। পরে ১৯৬১ সালে তিনি নিহত হন। অফিসিয়ালি তাকে হত্যার অনুমতি দেয় হাওয়ার্ড স্মিথ নামের এক কর্মকর্তা। ১৯৭২ সালে জন ওয়াইম্যান আয়ারল্যান্ডের রাজনৈতিক নেতাদের বোমা হামলা করে হত্যার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ওয়াইম্যান আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি নেতা লিটলজনসকে এ সংক্রান্ত একটি তালিকা দেয়। তালিকায় স্যামুয়েস কস্টেলো, সিন কারল্যান্ড ও সিন মাইকেল স্টাইফেনের নাম ছিল।

 

৩. এসভিআর (রাশিয়া)

ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস হচ্ছে রাশিয়ার বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা। সংক্ষেপে এটি ‘এসভিআর’ নামে পরিচিত। মস্কোর ইয়াসেনেভোতে এর সদর দফতর অবস্থিত। এটি তাদের আগের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির পরিবর্তিত রূপ। রাশিয়ার অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে সংস্থাটি। রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দেখাশোনা করে ‘দ্যা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস’। ‘ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস’ (এসভিআর) রাশিয়ার বৈদেশিক বিষয়গুলো দেখাশোনার পাশাপাশি বিদেশে বিভিন্ন সামরিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে গোয়েন্দাগিরি করে থাকে। তারা বিভিন্ন উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে। সংস্থাটির বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড এবং ইন্টারনেটে অসত্য তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে ধারণা করা হয়, এসভিআর ও চীনা গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে। এদের মূল দায়িত্ব বৈদেশিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা, গুপ্তহত্যা, বর্ডার সার্ভেইল্যান্স, রফতানি নিয়ন্ত্রণ, কাউন্টার টেরোরিজম, নিজস্ব লোক সংগ্রহ ও নেটওয়ার্ক তৈরি, বিদেশি কূটনীতিকদের ওপর নজরদারি। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এসভিআর গোয়েন্দারা, যারা নিয়মিত গোপন তথ্য সরবরাহ করে যাচ্ছে। সংস্থাটির মোট কর্মকর্তার সংখ্যা এবং এদের জন্য বরাদ্দ করা বাজেটের পরিমাণ নিজস্ব কৌশল হিসেবে গোপন রাখা হয়।

 

৪. সিআইএ (যুক্তরাষ্ট্র)

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির কয়েক মাইল পশ্চিমে ভার্জিনিয়ায় ন্যাশনাল সিকিউরিটি আইনের আওতায় ১৯৪৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সিআইএ গঠিত হয়। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ও তুখোড় এ গোয়েন্দা সংস্থা, যারা শুধু নিজ দেশেই নজরদারি করছে না, নজর রাখছে পুরো বিশ্বে। সিআইএ এতটাই গোপন ও সূক্ষ্মভাবে কাজ করে যে, এদের কার্যক্রম সম্পর্কে কোনো ধরনের অনুমান করা কঠিন। বলা হয়ে থাকে, প্রযুক্তির দিক থেকে সব গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এগিয়ে সিআইএ। প্রচলিত আছে, সিআইএ এমন সব গোপন মিশন পরিচালনা করেছে যা এখন পর্যন্ত কেউ জানে না। সিআইএ’র প্রাথমিক কাজ হচ্ছে বিদেশি সরকার, সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা এবং তা জাতীয় নীতিনির্ধারকদের কাছে সরবরাহ ও পরামর্শ প্রদান করা। সিআইএ এবং এর দায়বদ্ধতা ২০০৪ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। প্রেসিডেন্টের অনুরোধে সিআইএ গোপন কার্যক্রমেও অংশ নেয়। পাশাপাশি আধাসামরিক অপারেশন এবং অন্য দেশে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অপারেশন পরিচালিত হয়ে থাকে বিশেষ কার্যক্রম বিভাগের মাধ্যমে। শোনা যায়, সিআইএ পৃথিবীর সব ধরনের ডিভাইসে একসেস নিতে পারে। বিশেষ সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্যে অনলাইন-অফলাইনের সব ধরনের তথ্য তারা পেতে পারে। এত শক্তিশালী সংগঠনটির ব্যর্থতাও কম নয়। ৯/১১-এর বিমান হামলা প্রতিরোধে সিআইএ ব্যর্থ হয়। আফগানিস্তানে ১০ লাখ সোভিয়েত সৈন্যের আগমন সম্পর্কে কোনো তথ্য তারা পায়নি এবং ইরাকে সাদ্দাম হোসেন সরকারের ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র থাকার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। সিআইএ’র সব থেকে নেতিবাচক দিক হচ্ছে, এদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী হিটম্যান (ভাড়াটে দক্ষ খুনি) নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা পলিটিক্যাল কিলিং করে থাকে।

 

৫. বিএনডি (জার্মানি)

জার্মানির বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থার নাম ফেডারেল ইনটেলিজেন্স সার্ভিস (বিএনডি)। জার্মান চ্যান্সেলরের অফিস থেকে সংস্থাটি সরাসরি নিয়ন্ত্রিত হয় এবং চ্যান্সেলরের কাছে জবাবদিহি করে। এটা ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা। এটি ১৯৫৬ সালের ১ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে সংস্থাটি সিআইএ’র সহযোগী হিসেবে কাজ করে। বার্লিনে অবস্থিত সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে চার হাজার কর্মী একসঙ্গে কাজ করে। বিশাল এই কার্যালয়টি প্রায় ৩৫টি ফুটবল মাঠের সমান। বিএনডি বৈদেশিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, কাউন্টার ইনটেলিজেন্স পরিচালনা, বিভিন্ন দেশে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা, কাউন্টার টেরোরিজম, নিজস্ব লোক সংগ্রহ ও নেটওয়ার্ক তৈরিতে কাজ করে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকদের বৈদেশিক নীতিনির্ধারণে সহায়তা, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ প্রভৃতি বিষয়ে কাজ করে। এককথায় বহির্বিশ্বে জার্মানির স্বার্থের পক্ষে যা কিছু করার প্রয়োজন, তারা সেটাই করে। বিদেশে জার্মান স্বার্থের প্রতি হুমকির ব্যাপারে তারা সরকারকে আগাম সতর্কীকরণে সোর্স হিসেবে কাজ করে। টেলিফোনে আড়ি পাতা ও ইলেকট্রনিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেও তারা কাজ করে। তারা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বিস্তার, প্রযুক্তির সব ধরনের অবৈধ হস্তান্তর, সংঘবদ্ধ অপরাধ, অস্ত্র ও মাদক পাচার, মানি লন্ডারিং, অবৈধ অভিবাসন ও তথ্যযুদ্ধের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে। তারা বৈদেশিক গুপ্তচরবৃত্তিতে জার্মানির একমাত্র গোয়েন্দা সংস্থা হওয়ায় সামরিক ও বেসামরিক উভয় ধরনের গুপ্তচরবৃত্তিতেই নিয়োজিত থাকে।

 

৬. ‘র’ (ভারত)

রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (Research and Analysis Wing, শব্দ সংক্ষেপ : RAW) ভারতের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা। ‘র’-এর প্রধান কার্যালয় ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এবং এর প্রধান এজেন্সি দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ভারতীয় সংসদের কাছে এটি দায়বদ্ধ না হলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিকট দায়বদ্ধ। ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে যুদ্ধ ও ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে পূর্বতন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ব্যর্থতার কারণে নতুন গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯৬৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রাক্তন ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স অফিসার ও আইবির ডেপুটি ডিরেক্টর আর.এন.কাও’র নেতৃত্বে ভারতে ‘র’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সংস্থাটির প্রধান কাজ হলো বিদেশি গোপন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, কাউন্টার টেররিজম এবং গোপন অপারেশন পরিচালনা করা। পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ, বিশেষ করে যাদের সঙ্গে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা জড়িত তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ওইসব দেশের বৈদেশিক নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখাও ‘র’-এর গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিদেশি সরকার, ব্যবসায়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করার পর ‘র’ সে অনুযায়ী ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিয়ে থাকে। এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘র’-এর এজেন্ট রয়েছে। সংস্থাটিতে নব নিযুক্ত এজেন্টদের বিভিন্ন বৈদেশিক ভাষা ও ভৌগোলিক কৌশলগত বিশ্লেষণ নিয়ে তাদের পারদর্শী করে গড়ে তোলা হয়। তাদের অধ্যয়নের তালিকায় সিআইএ, কেজিবি, মোসাদ ও এমআইসিক্স নিয়েও কেইস স্টাডি রয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সূত্রের বর্ণনা ও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘র’ তাদের যাবতীয় গোয়েন্দা প্রযুক্তি ও অস্ত্রশস্ত্রের জন্য অপর এক বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’-এর সহযোগিতা পেয়ে থাকে।

 

৭. ডিজিএসই (ফ্রান্স)

ডিরেকশন জেনারেল ডি লা সিকিউরিটি (Directorate-General for External Security, শব্দ সংক্ষেপ : DGSE) ফ্রান্সের পুরনো এসডিইসিই এর নতুন সংস্করণ। এর সদর দফতর প্যারিসে। এই গোয়েন্দা সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮২ সালের ২ এপ্রিল। এটি ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চলে। সংস্থাটিকে প্রতিবছর কমপক্ষে ৭৩০ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। দেশের অভ্যন্তরে শান্তি এবং উন্নতিকে নিশ্চিত করাই সংস্থাটির কাজ। দেশের ভেতরে যেন কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না ঘটে সেজন্য এটি কাজ করে। একই সঙ্গে অন্যান্য দেশের বিভিন্ন সূত্র থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং তা মিলিটারি এবং নীতিনির্ধারকদের সরবরাহ করে। জানা গেছে, সংস্থাটি এ পর্যন্ত প্রায় ১৫টি সন্ত্রাসী হামলা ঠেকিয়ে দিয়েছে। ডিজিএসইর প্রায় পাঁচ হাজার লোকবল রয়েছে। ডিজিএসইর অতীত এবং চলমান অপারেশন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা যায় না। ১৯৮০ সালের গোড়ার দিকে একটি সোভিয়েত গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক, যেটি বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্কগুলোর একটি বলে বিবেচিত হয়েছিল— সেটিকে ডিজিএসই খুঁজে বের করে ও তাদের সঙ্গে কাজ করে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একটি যোগ্য গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৯০ সালে রওয়ানান গৃহযুদ্ধের সময় ডিজিএসই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই যুদ্ধে সংস্থাটির কাজ ছিল মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া, যা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ফরাসিদের জড়িত থাকার জন্য ভিত্তি স্থাপন করেছিল। যুগোস্লাভিয়া ও কসোভো লিবারেশন আর্মি ফেডারেল রিপাবলিকের মধ্যে ‘কসোভো যুদ্ধে’র সময়ও ডিজিএসইর ভূমিকা ছিল। ডিজিএসইতে কাজ করেন পাঁচ হাজারের বেশি কর্মকর্তা।

 

৮. সিএসআইএস (কানাডিয়া)

কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (Canadian Security Intelligence Service, শব্দ সংক্ষেপ : CSIS) জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস ম্যাকডোনাল্ড কমিশনের সুপারিশে ১৯৮৪ সালে প্রাক্তন আরসিএমপি বা রয়্যাল কানাডীয় মাউন্ট পুলিশ বাহিনীর মধ্যে তৈরি করা হয়েছিল। আরসিএমপি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দায়ী হলেও সিএসআইএস দেশের নিরাপত্তা নিয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজে জড়িত। কানাডীয় সরকার আরসিএমপি’র কিছু কার্যক্রমের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিল এবং বিশ্বাস করত, নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা একটি পৃথক সত্তা দ্বারা পরিচালনা করা উচিত যা পুলিশ বাহিনীর একটি অংশ নয়। এভাবে সিএসআইএস বা কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস, আরসিএমপি থেকে আলাদা হয়। তবে এই বিভক্তির সমালোচনা ছিল এবং বিশেষজ্ঞরা উপলব্ধি করেছিল উভয় প্রতিষ্ঠানই তাদের নিজ নিজ অপারেশন পরিচালনার জন্য ঘনিষ্ঠ সমন্বয়, স্থানান্তর এবং তথ্য ভাগাভাগি করতে হবে। সেই উপলব্ধি থেকে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি সম্মতির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি ধারায় উল্লেখ করেছে, নিরাপত্তা তদন্ত পরিচালনা করার জন্য আরসিএমপি এবং সিএসআইএস একে অপরের সঙ্গে পরামর্শ ও সহযোগিতা করবে। বর্তমানেও সিএসআইএস কানাডার জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সবকিছু পরিচালনা করে। তথ্য সংগ্রহ, গোপন অপারেশন চালানো এবং সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকি বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেয়। কানাডা এবং এর নাগরিকদের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে এমন যেকোনো কিছু সংস্থাটি বাজেয়াপ্ত করে। জাতীয় নিরাপত্তা নামে তার কার্যক্রম চালানোর সময় সংস্থাটি খুব আক্রমণাত্মক হওয়ার জন্য একটি খ্যাতি অর্জন করেছে।

 

৯. এএসআইএস (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ান সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (Australian Secret Intelligence Service, শব্দ সংক্ষেপ : ASIS) সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা।  গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করলেও এটি প্রধানত আন্তর্জাতিক বা বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং বিশ্বব্যাপী অন্যান্য অনুরূপ সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে। বিশেষ করে এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে এবং অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাইরের যেকোনো হুমকি থেকে দেশের জনগণকে সুরক্ষা দেয়। ১৯৫২ সালের ১৩ মে এটি গঠিত হয়। এর প্রধান কার্যালয় ক্যানবেরাতে। সংস্থাটি ২০ বছর পর্যন্ত গোপন ছিল এমনকি অস্ট্রেলিয়ার সরকারও এই এজেন্সি সম্পর্কে জানত না। এর বাহিনী বিশ্বের অন্যতম বুদ্ধিদীপ্ত কাউন্টার টেরোরিজম ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা বাহিনী হিসেবে অনেক প্রশংসিত ও সুপরিচিত। এটি প্রায় ৩৩০ মিলিয়ন ডলারের বাজেটে চলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ ও ব্রিটেনের এমআই৬-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। অন্যান্য অনেক গোয়েন্দা সংস্থার মতো এএসআইএস অতীতে অনেক ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। সংস্থাটি ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে চিলিয়ান অভ্যুত্থানের সঙ্গেও জড়িত ছিল। কাজের সুবিধার্থে সংস্থাটি বিভিন্ন দেশে এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে রেখেছে। ১৯৮৩ সালে মেলবোর্নের শেরাটন হোটেলে এক ব্যঙ্গ প্রশিক্ষণ মিশনে ব্যায়ামের জন্য হোটেলের স্টাফ এবং অতিথিরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হলে এই সিক্রেট এজেন্সি পরিচিতি লাভ করে। বিশাল এলাকাজুড়ে তাদের এজেন্ট রয়েছে।

 

১০. এমএসএস (চীন)

মিনিস্ট্রি অব স্টেট সিকিউরিটি (Ministry of State Security, শব্দ সংক্ষেপ : MSS) ১৯৮৩ সালে গঠিত চীনের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এর জবাবদিহিতা স্টেট কাউন্সিল অব চায়নার কাছে। এর মূল দায়িত্ব হচ্ছে বৈদেশিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা, গুপ্তহত্যা, বর্ডার সার্ভেইল্যান্স, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, কাউন্টার টেরোরিজম, নিজস্ব লোক সংগ্রহ ও নেটওয়ার্ক তৈরি, বিদেশি কূটনীতিকদের ওপর নজরদারি, শত্রু এজেন্টদের সন্ধান, কাউন্টার রেভ্যুলুশনারি কার্যক্রম দমন, সাইবার ওয়ারফেয়ার পরিচালনা, নতুন প্রযুক্তি সংগ্রহ, বিশ্বের বড় করপোরেশনগুলোর নীতিনির্ধারণের চেষ্টা। দেশটির অন্যান্য নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থাগুলোর মাঝে সমন্বয় করাও এই সংস্থার অন্যতম কাজ। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্যকে জোরদার রাখতে এটি পাকিস্তানের আইএসআই-এর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্কের মাধ্যমেও যৌথভাবে কিছু কাজ করে। এর সদর দফতর দেশটির রাজধানী বেইজিংয়ে অবস্থিত। এবং এর ১৭টি ব্যুরো রয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ধারা-৪ অনুযায়ী এমএসএস রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার হুমকি বিষয়ক অপরাধে জড়িত যেকোনো অপরাধীকে পুলিশের ন্যায় গ্রেফতার করার অধিকার রাখে। ২০০৫ সালের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই এমএসএসের এক হাজার ইনফরমার রয়েছে। এমএসএসের প্রধান বিচরণ এলাকা ম্যাকাও, হংকং, তাইওয়ান, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, পশ্চিম ইউরোপ, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকাসহ সারা দুনিয়ার চাইনিজ বংশোদ্ভূত জনগণ। সংস্থাটির অনেক নামকরা এজেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ল্যারি উ তাইচিন, ক্যাট্রিনা লেউং, পিটার লি, চি মাক, কো সুয়েন মো।

 

 

 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads