বিশ্ববিদ্যালয় কখনো ‘প্রাইভেট’ হতে পারে না : প্রফেসর মুহাম্মদ আলী নকি

প্রফেসর মুহাম্মদ আলী নকি

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

বিশ্ববিদ্যালয় কখনো ‘প্রাইভেট’ হতে পারে না : প্রফেসর মুহাম্মদ আলী নকি

  • প্রকাশিত ১৫ অক্টোবর, ২০১৮

দাদা ও বাবা-মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষকতা পেশায় আসেন প্রফেসর মুহাম্মদ আলী নকি। তার জন্ম ১৯৬৫ সালে। ১৯৮০ সালে এসএসসি ও ১৯৮২ সালে এইচএসসি পাস করেন তিনি। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ‘আর্কিটেকচার গ্র্যাজুয়েট’ ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৪ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯১ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে সহকারী অধ্যাপক এবং ২০০১ সালে সহযোগী অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। এরপর ১৪ বছর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটিয়ে ২০০৫ সালে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যার্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দান করেন। পাশাপাশি তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় ও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন। ২০১৭ সালে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চালেন্সর (ভিসি) হিসেবে যোগদান করেন। সফল এ শিক্ষাবিদের সঙ্গে শিক্ষাবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন শফিকুল ইসলাম

ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

প্রফেসর আলী নকি : আমাদের দেশে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার এবং বিস্ময়কর। অন্য অনেক দেশে শিক্ষকদের নাম ধরে শিক্ষার্থীরা ডাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে এমনটা কখনো ভাবাই যায় না। শিক্ষকদের প্রতি ছাত্রদের এই যে শ্রদ্ধাবোধ, এটা আমাদের বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য। এটা আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি। ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে, এটাই স্বাভাবিক এবং এর ভিন্নতা অস্বাভাবিক। 

ছাত্রজীবন কীভাবে কাটানো উচিত?

প্রফেসর আলী নকি : ছাত্র শব্দের অর্থ হলো আচ্ছাদন বা ঢেকে রাখা। শুধু পড়াশোনা করা ছাত্রদের একমাত্র কাজ নয়। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বর্তমানের কোটা আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা আমরা সবাই দেখেছি। তারা দেখিয়ে দিয়েছে আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা একটু বেশিই থাকে। জাতীয় কোনো সমস্যায় ছাত্রদের নেতৃত্ব প্রদানের বিষয়টি গুরুত্ববহ। 

ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে জড়ানোর বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

প্রফেসর আলী নকি : রাজনীতিবিদ হওয়ার জন্য একজন শিক্ষার্থী রাজনীতি করবে। পড়াশোনা শেষে বিসিএস ক্যাডার, সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী হয়ে রাজনীতি করলে তখন দেশ ও জনগণের কথা চিন্তা করার চেয়ে নিজস্ব ফায়দা লোটার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শিক্ষার্থীরা বিসিএস দিয়ে সচিব হবে আর অশিক্ষিতরা এমপি-মন্ত্রী হয়ে দেশ চালাবে। শিক্ষিতরা তখন অশিক্ষত এমপি-মন্ত্রীদের স্যার স্যার বলবে, এমনটা হওয়া উচিত নয়। নেতৃত্ব তৈরির জন্য ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি দরকার। কিন্তু টেন্ডারবাজি, গুজব, ভায়োলেন্স বা দায়িত্বজ্ঞানহীন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়ানো যাবে না। আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কাঁধে নিতে ছাত্রদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

পড়াশোনা শেষ করে ক্যারিয়ার, নাকি আগেই ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হবে?

প্রফেসর আলী নকি : আদর্শ লেখাপড়া ছিল আগে, কিন্তু এখনকার দৃশ্যপট সম্পূর্ণ আলাদা। আমি মনে করি পড়াশোনা চলাকালীন সময় থেকেই ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা উচিত। ক্যারিয়ারের জন্য সঠিক টার্গেট ঠিক করে নিজেকে সঠিকভাবে তৈরির উত্তম সময় ছাত্রজীবন। সরকার ও বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় Institutional Quality Assurance Cell Found Operations Manual (IQAC) বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীদের সুবিধা বাড়বে। এই প্রকল্প আমাদের সন্তানদের দেশের বাইরে গিয়ে ক্যারিয়ার গড়তেও সহায়তা করবে। 

বিদেশে ক্যারিয়ার ভালো নাকি দেশে?

প্রফেসর আলী নকি : পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে যাওয়া ভালো, কিন্তু লেখাপড়া শেষ করে অবশ্যই দেশে চলে আসতে হবে। বুয়েটে লেখাপড়া শেষে আমার বন্ধুরা সবাই পড়াশোনার জন্য বিদেশে চলে গিয়েছিল, কিন্তু দেশকে ভালোবেসে আমি রয়ে গেছি।

এবার একটু ব্যক্তিগত বিষয়ে আসি, আপনি শিক্ষকতা পেশায় কেন এলেন?

প্রফেসর আলী নকি : আমার দাদা অধ্যাপক আলী আকবরের লেখা ব্রিটিশ আমলের পাটিগণিত বই বেশ আলোচিত ছিল। তিনি খুব বিখ্যাত প্রফেসর ছিলেন। এ ছাড়া আমার বাবা প্রফেসর আলী রেজা জগন্নাথ কলেজের জিওগ্রাফিক্স ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ছিলেন। মা শিক্ষক ছিলেন। পরিবারের বেশিরভাগ মানুষই শিক্ষকতা পেশায় জড়িত ছিলেন। সবাই তাদের অনেক শ্রদ্ধা করত ও ভালোবাসত। তাই ছোটবেলা থেকে শিক্ষকতা পেশার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। শিক্ষকতা পেশার শুরুতেই সবাই অনেক সহযোগিতা করেছে বলে আজ আমি এই জায়গায় আসতে পেরেছি।

সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে মানুষ আলাদা ভাবে কেন? 

প্রফেসর আলী নকি : বিশ্ববিদ্যালয় কখনো ‘প্রাইভেট’ হতে পারে না। এটা মানুষের ভ্রান্ত ধারণা। প্রাইভেট বলতে কী বুঝি? একজন ব্যক্তির বিশ্ববিদ্যালয়, যিনি সার্টিফিকেট দেবেন। আসলে কি তাই? গাড়ি প্রাইভেট হতে পারে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কখনো প্রাইভেট হতে পারে না। বরং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকার ও জনগণ উভয়ের সম্পদ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইউজিসি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। সরকারের কাজ সবাইকে শিক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া। সরকার পারছে না বলে কিছু ব্যক্তি উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসছেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্ব কোনো অংশে কম নয়। বরং আমরা ‘প্রাইভেট’ বলে সেটাকে অবমাননা করছি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads