বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে অপরিবর্তিত গুঁড়োদুধ

গুঁড়োদুধ

সংগৃহীত ছবি

পণ্যবাজার

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে অপরিবর্তিত গুঁড়োদুধ

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ৪ অক্টোবর, ২০১৮

বিশ্ববাজারে গত এপ্রিলের পর থেকে গুঁড়োদুধের দাম টানা নিম্নমুখী। গত ছয় মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কমেছে ১৭ শতাংশ। কিন্তু এর কোনো প্রভাব নেই দেশের বাজারে। এর মধ্যে কখনো গুঁড়োদুধের দাম কমাননি ব্যবসায়ীরা। ফলে বাড়তি দামে এ পণ্য কিনে ঠকছেন ভোক্তারা। আর পকেট ভারী হচ্ছে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের।

যদিও এর আগে বছরের শুরুতে বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কথা বলে গুঁড়োদুধের দাম বাড়িয়েছিল প্রতিটি কোম্পানি। সে সময় মানভেদে পরিমাণ অনুপাতে দেশি-বিদেশি দুধের দাম বাড়ে ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। ওই সময় শিশুখাদ্য হিসেবে বিক্রীত দুধগুলোর দাম আরো বেশি বেড়েছিল।

দেশে মিল্কভিটা ও আড়ং গুঁড়োদুধ তৈরি করলেও সেটা বাজারে চাহিদার তুলনায় যৎসামান্য। ফলে আমদানির মাধ্যমেই এ চাহিদা পূরণ হয়। এসব দুধ প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বহুজাতিকের পাশাপাশি দেশি কোম্পানিও।

তবে দুধের দাম না কমার বিষয়ে তারা বলছে, উৎপাদনকারী দেশগুলো থেকে গুঁড়োদুধ আমদানি করে দেশে আনতে অনেক সময় লাগে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে প্রভাব পড়তে দেরি হয়। আবার অনেক কোম্পানি বছরব্যাপী চুক্তি করায় হঠাৎ বাজারে দাম কমাতে পারে না।

তবে ভোক্তারা বলছেন, এসব নিয়ম ও অজুহাতের ব্যত্যয় ঘটে যখন বিশ্ববাজারে দুধের দাম বেড়ে যায়। বিশ্ববাজারে দুধের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেয় কোম্পানিগুলো।

বিশ্বব্যাপী দুধের দাম নিয়ে কাজ করা ‘গ্লোবাল ডেইরি ট্রেড’ ওয়েবসাইটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এপ্রিলে বিশ্ববাজারে এক টন গুঁড়োদুধের দাম ছিল তিন হাজার ৩১১ ডলার, যা কমতে কমতে ২ অক্টোবরে এসে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৫৩ ডলারে। অর্থাৎ গত ছয় মাসে বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণে আরো দেখা যায়, গত পাঁচ বছরের বিশ্ববাজারে গুঁড়োদুধের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে বিশ্ববাজারে এক টন গুঁড়োদুধের দাম ছিল পাঁচ হাজার ২৪৫ ডলারে। এর পর থেকেই বিশ্ববাজারে গুঁড়োদুধের দাম নিম্নমুখী। ওই দামের সঙ্গে তুলনা করলে বিশ্ববাজারে বর্তমানে দুধের দাম এখন অর্ধেক। কিন্তু দেশে দুধের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে গত ছয় মাস যাবত। এমনকি পাঁচ বছরের ব্যবধানে কিছুটা দাম কমলেও তা বিশ্ববাজারের তুলনায় সামান্য। দেশে এখন প্রতি কেজি ডানো ও ডিপ্লোমা ব্র্যান্ডের গুঁড়োদুধ বিক্রি হচ্ছে ৫৯০ টাকা। আর দেশি কোম্পানির বিপণন করা ফ্রেশ ও মার্কস ব্র্যান্ডের দুধের ৪০০ গ্রামের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২০৫ এবং প্রতি কেজি ৪৩০ থেকে ৪৫০ টাকা।

এ বিষয়ে নেসলে বাংলাদেশের পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) নকিব খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমরা একটি গ্লোবাল কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে পুরো এক বছরের জন্য দেশে দুধ আমদানি করি। ফলে হঠাৎ দাম কিছুটা কমলেই দেশে দাম কমানো সম্ভব নয়। এ ছাড়া শুধু র-দুধের দাম কমলেই হবে না এটা ডিউটি, ট্রান্সপোর্টসহ আরো অন্যান্য খরচের ওপর নির্ভর করে। 

তবে কোম্পানিগুলোর এমন তথ্য বিভ্রান্তিকর বলে মনে করেন ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। তিনি বলেন, এসব কোম্পানির আচরণ আগ্রাসনমূলক। এরা মুনাফা ছাড়া কিছুই বোঝে না। বিশ্ববাজারে দাম কমলে তারা সে সুবিধা ভোক্তাকে দেয় না। কিন্তু দাম বাড়লে তারা হুহু করে দাম বাড়িয়ে দেয়।

দেশে গুঁড়োদুধের বার্ষিক চাহিদা কত, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে দেশে এ পণ্যের আমদানি বাড়ছে দ্রুত। গত সাত বছরে দেশে গুঁড়োদুধের আমদানি বেড়েছে প্রায় ১৭১ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানিতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৭৩৬ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এটি বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৯৯৯ কোটি টাকায়। অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাথমিক হিসাবে এ আমদানি ব্যয় নিরূপণ হয়েছে দুই হাজার ৩৭১ কোটি টাকা।

যদিও গুঁড়োদুধের এ আমদানি বৃদ্ধি দেশের জন্য সুখবর নয়। কারণ পণ্যটি পুষ্টি তালিকায় কতটা কার্যকর, সেটা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। এর ব্যবহার নিয়েও রয়েছে নানা আলোচনা ও ভিন্নমত। দেশে শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধুই বুকের দুধ এবং দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য খাওয়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে গুঁড়োদুধ খেতে দেখা যায়। এটাকে সুস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ছাড়া এখন প্রচুর নিম্নমানের গুঁড়োদুধ আমদানির কারণে দেশে দুধ উৎপাদনকারী খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ভর্তুকি পাওয়া দেশ থেকে নিম্নমানের গুঁড়োদুধ কম শুল্কে আমদানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমদানি বৃদ্ধির পেছনে শুল্ক সুবিধা কাজ করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এক দশক আগে দেশে গুঁড়োদুধ আমদানিতে যে শুল্ক আরোপ করা ছিল, তা এখন আরো কমানো হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads