বিলুপ্তর পথে পরিবেশ বান্ধব তাল গাছ!

পরিবেশ বান্ধব তাল গাছ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

জীব ও পরিবেশ

বিলুপ্তর পথে পরিবেশ বান্ধব তাল গাছ!

  • প্রকাশিত ২৫ অক্টোবর, ২০১৯

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি

কবির ভাষায়- তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে উকি মারে আকাশে। বরেন্দ্র অঞ্চলের সেই পরিবেশ বান্ধব তাল গাছ এখন প্রায় বিলুপ্তর পথে। আগের দিনে বরেন্দ্র অঞ্চলের দুর দিগন্তের দিকে তাকাতে গেলেই আগে চোখে পড়ত উচু তাল গাছের ঝাকড়া মাথা। এখন দুর দিগন্তের দিকে তাকালে তাল গাছের মাথা দেখাতো দূরের কথা, বরেন্দ্র অঞ্চল জুড়ে তাল গাছের দেখা মিলে খুবই কম। অথচ আগের দিনে গ্রামের কৃষক ও সাধারণ মানুষের অনেক কাজ এই তাল গাছ ছাড়া হতো না। গ্রামের সাধারণ মানুষ ও কৃষকেরা বাড়ী তীরে, গরুর গাড়ীর ধুরি, গরুকে খাওয়ানোর পাত্র, লাঙ্গলে রিস, খুটিসহ বিভিন্ন কাজে তালের গাছ ব্যবহার করত।

গভীর মূলী ও শাখা প্রশাখা নেই বলে জমির আঁইলে রোপনে খাদ্য পুষ্টির প্রতিযোগিতা ও ছায়া দিয়ে ফসলের ক্ষতি করে না। তালের পাতা দিয়ে হাত পাখা, মাদুর, টুপি, ঘরের ছাউনী, চাটাই, ছাতা, লাকরী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গাছের ফাইবার বা আঁশ থেকে বিভিন্ন রকমের সৌখিন সামগ্রী তৈরি হয়, যথা- টুপি, ঝুড়ি, ব্রাশ পাপোষ, ছোট বাষ্কেট, ও মাছ ধরার খলশানীতে ব্যবহৃত হয়। পুরুষ গাছের ফুল বা জটা হতে রস সংগ্রহ করে তা দিয়ে গুড়, পাটালি, ভিনেগার, পিঠা, বড়া, লুচি, ইত্যাদি তৈরি করা হয়। পাকা তালের রস দিয়ে পিঠা, বড়া, খির, পায়েস তৈরি করা হয়। কচি ও কাঁচা তালের নরম শাঁস মুখরোচক পুষ্টিকর ও ছোট বড় সবার প্রিয়। পাকা তালের আঁঠি মাটির নিচে পুতে রেখে আঠির মধ্যে তৈরী পিঠা প্রিয় শিশু থেকে বয়বৃদ্ধদের।

গুচ্ছ মূলী বৃহৎ অশাখ বৃক্ষ তালগাছের গোড়ার দিক মোটা, উপরের অংশ তুলনামূলক চিকন, কান্ডের মাথায় বোটা ও পাতা গুচ্ছ ভাবে সাজানো থাকে ও বোটার দু-ধারে করাতের মতো দাঁত আছে, বোটা শক্ত ও খুব পুরু। গাছ উচ্চতায় ২০ থেকে ২৫ মিটার হয়ে থাকে এবং দীর্ঘ জীবি উদ্ভিদের মাঝে অন্যতম হচ্ছে তালগাছ। ১৪০ থেকে ১৫০ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকে। তালগাছের বৃদ্ধি ধীর গতি সম্পন্ন, বীজ রোপনের ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সে গাছে ফল ধরে।

তাল গাছের শিকর মাটির অনেক গভীরে যায়। তাল গাছ কৌশিক প্রক্রিয়ায় শিকরের মাধ্যেমে ভু-গর্ভস্থ পানি রির্চাজে বরেন্দ্র অঞ্চলে অনেক ভুমিকা রাখতো। তাল গাছের পাতায় বাবুই পাখিরা বাসা বেঁধে থাকতো। বাবুই পাখি ধান ক্ষেতের পোকা মাকড় ধরে ধরে খেত। যার ফলে কৃষকদের ধান ক্ষেত পোকা মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পেত। তাল গাছ না থাকায় আশ্রায় স্থলের অভাবে বাবুই পাখি হরিয়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে কৃষি ক্ষেত্রে। তাল গাছ জন্মানোর জন্য বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশ ছিল উপযোগী। তাই বরেন্দ্র অঞ্চলের যেখানে সেখানে তাল গাছ জন্মাতে পারতো।

কালের বির্বতনে ও আধুনিকতার ছোয়ায় তাল গাছ দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আধুনিকতার কারনে বাড়ী ঘর তেরীতে ব্যাবহার হচ্ছে লোহার রড, ইট-বালুর তৈরী খুটি ও কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাবহার হচ্ছে বৈঞ্জানীক যন্ত্রপাতি। ইঞ্জিল চালিত গাড়ীর কারনে গরুর গাড়ী হারিয়ে যাচ্ছে। এতে করে তাল গাছের ব্যাবহার আর নেই বললেই চলে।

তাল গাছ জন্মানোর জন্য বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশ উপযোগী হলেও তাল গাছের চাহিদা এবং ব্যবহার না থাকায় বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ আর তাল গাছ লাগাচ্ছে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads