বিরল জাতের কবুতরের খামার

সংগৃহীত ছবি

কৃষি অর্থনীতি

বিরল জাতের কবুতরের খামার

  • ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৭ অক্টোবর, ২০২০

কাজী শামছুদ্দিন। বয়স ৩৮ বছর। বাবা মৃত আবদুল করিম। তিনি বিরল জাতের কবুতরের খামার করে সাড়া ফেলেছেন দেশের মধ্যে। তার খামার দেখতে দেশের নানা জেলার লোকজন ভিড় করেন। গরুর খামার, হাঁসের খামার, দেশি কবুতরের খামার করেছেন এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে দেশজুড়ে। তবে দেশি-বিদেশি বিরল জাতের কবুতরের খামার গড়েছেন এমন লোকের সংখ্যা কম। অসাধ্যকে সাধ্য করে সখের বশে খামার করে শামছুদ্দিন এখন স্বাবলম্বী। ফেসবুক ও অনলাইনের মাধ্যমে কবুতর ক্রয়-বিক্রয় করে থাকেন। তার খামারের কবুতরের দাম প্রতিটা ৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

যেভাবে শুরু

২০১৪ সালের কথা। কাজী শামছুদ্দিন তার চাচা আমজাদ আলীর হাতে কবুতর দেখে তার সাধ জাগে কবুতর পালনের। প্রথমে মধুপুর হাট থেকে ১ জোড়া গিরিবাজ কবুতর ৩০০ টাকা দিয়ে ক্রয় করেন। বাড়িতে বক্স বানিয়ে শুরু করেন কবুতর পালন। এভাবে হাটবাজারে ঘুরতে ঘুরতে দেখেশুনে কবুতর কিনে এনে বাড়িতে পালন করেন। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ আশপাশের জেলা থেকে প্রতিজোড়া কবুতর ৫ হাজার, ১০ হাজার টাকা দামেও ক্রয় করেছেন। এভাবে শখ থেকে গড়ে তোলেছেন বিরল জাতের কবুতরের খামার। তার খামারে এখন ১১০টি কবুতরের বক্স রয়েছে। একসঙ্গে ১১০ জোড়া কবুতর পালন করতে পারেন।

কয় জাতের কবুতর

তার খামারে বর্তমানে ৩০ জাতের বিদেশি দুর্লভ জাতের কবুতর রয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকান ইংলিশ টামোপিটার, লাহুর সিরাজী, হাউজ পিজন, সুন্ডিয়ান, কিং পিটার, আর্জ-এনজেল, আমোরিকানজেইড, মোড়হেন্ড, এস পেনিস করলা, শ্যালো, ডেনিস স্টামলার, বুখারা, মং, মরেশ পিটার, এলমন পিটার, মেঘপাই, মডেনা, রাশিয়ান টামলার, পরমনা, আমেরিকান, নানা আমেরিকান, হোমা, গিরিবাজ, বিদেশি গিরিবাজ আরো অনেক জাত।

কবুতরের খাদ্যপ্রণালি

এসব কবুতরকে নানা জাতের খাদ্য দিতে হয়। পালন করা হয় সৌখিনভাবে। কবুতরের যত্নের জন্য সে নিজে ও তার একজন শ্রমিক রয়েছে। প্রতিদিন দিতে হয় খাদ্য। খাদ্যের মধ্যে গম, ভূট্টা, মশুর ডাল, খেসারি ডাল, পাকনা, বাজরা, সরিষা, ঘাসের বীজ, সূর্যমুখী ফুলের বীজ, কুসুম ফুলের বীজ, রেজা, কালো মটর, সবুজ মটর ভাবরী। কবুতরের খামারে মধ্যে বক্সের সামনে খাদ্যের বক্স দেওয়া আছে। এখানে পানি ও খাদ্য দিয়ে দেন।

ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতি

বাজারে তোলে এই কবুতর বিক্রি করতে হয় না। বাড়ি থেকে কিনে নেয় সৌখিন মানুষরা। অনলাইন ও ফেসবুকের মাধ্যমেও বিক্রি করা হয়। দেশের বাইরেও এ কবুতর বিক্রি করা হয়। তার খামারে এখন ১৫-২০ লক্ষ টাকা পুঁজি রয়েছে। তার প্রতিমাসে আয় ৫০-৬০ হাজার টাকা। প্রতিমাসে ব্যয় ২০-৩০ হাজার টাকা।

খামারের অবস্থান

তার খামার মধুপুর পৌরসভার মালাউড়ি গ্রামে। মালাউড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পার্শ্বে পাঁকা ঘরে শুরু করেছেন কবুতরের খামার। বিশাল ঘরের মধ্যে খামার করেছেন। সহজে বৃষ্টির পানি উঠে না। সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন খামার। সারিবদ্ধভাবে বক্সগুলো রেখেছেন ঘরের মধ্যে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটান।

কবুতর পালনকে কেন্দ্র করে ন্যাশনাল সংগঠন

সারাদেশে দেশি-বিদেশি বিরল জাতের কবুতর পালন ও ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে দেশের খামারীরা গড়েছেন কবুতরের সংগঠন। সংগঠনের নাম দিয়েছেন ন্যাশনাল পিজন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। রয়েছে জেলা শাখা। কাজী শামছুদ্দিন টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। প্রতিবছর জাতীয় পর্যায়ে কবুতরের প্রদর্শনী হয়। দেওয়া হয় সম্মাননা। তিনি জাতীয় পর্যায়ে ৩ বার পুরস্কার পেয়েছেন। এতে তার উৎসাহ আরো বেড়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

কাজী শামছুদ্দিনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বড় আকারের খামার গড়ার। আরো জাত বৃদ্ধির আশা তার। তিনি বড় আকারের খামার করে দেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপনা করার প্রত্যাশা তার। তার সংসারে ২ মেয়ে। সে এখন কবুতর পালন করে স্বাবলম্বী। সে দেশের শিক্ষিত অশিক্ষিত বেকারদের কবুতর খামার করার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads