ফেনীর লেমুয়া ইউপির নেওয়াজপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত চার শিক্ষক বিনা বেতনে শত শত শিক্ষার্থীর মাঝে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন। জাতীয়করণের আশায় দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে পাঠদান করে যাচ্ছেন তারা। সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকেই সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে উচ্চপদে সুপ্রতিষ্ঠিত হলেও বিদ্যালয়টি রয়ে গেছে অবহেলিত।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ১৯৯৩ সালে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় নেয়াজপুর গ্রামে জুলফিকার হায়দার বাড়ীর সামনে মক্তবের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ১৯৯৬ সালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ৩৩ শতক জায়গার ওপর স্কুলটি নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে ওই ভবনের দরজা-জানালা ভাঙা, দেখতে মনে হয় টিনশেডের পরিত্যক্ত ঘর। কর্মরত শিক্ষকরা দীর্ঘদিন থাকায় স্কুলের মায়া ত্যাগ করতে পারছেন না। ফলে তারা বর্তমানে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এ বিদ্যালয়ের উন্নয়নে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ১ লাখ ও ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ১ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। স্কুল পরিচালনা করার জন্য ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। ওই টাকা দিয়ে স্কুলের মেঝে ঢালাইয়ের কাজ করা হয়। সরকারি ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের কোনো সাহায্য-সহযোগিতা না পাওয়ায় স্কুলটি জরাজীর্ণ অবস্থায়। জীর্ণ টিনের কারণে বর্ষাকালে শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হয়। স্কুলটিতে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দেড়শতাধিক শিক্ষার্থীর বই-খাতা বৃষ্টির পানিতে ভিজে যায়। এমনকি শ্রেণিকক্ষে বসতে কষ্ট হয়। স্কুলে জাতীয় দিবসগুলোতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের জন্য এলাকা মানুষদের সহযোগিতা নেয়া হয়। ঈদের সময় এলাকার মানুষ থেকে টাকা নিয়ে শিক্ষকদের সম্মানী দেওয়া হয়।
শিক্ষক সাইদুল হক জানান, এ বিদ্যালয় থেকে তিনি ২০০০ সালে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। সরকারি কোনো অনুদান না পাওয়ায় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়। যে কারণে বিনা বেতনে এখানে শিক্ষকতা করতে হচ্ছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বাররা স্কুলটির কোনো খবর রাখেন না। এলাকার কোমলমতি শিশুদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে এ বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য তিনি স্থানীয় এমপির সহযোগিতা কামনা করেন। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আরিফুল হক স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার অজিউল্যাহ বলেন, স্কুল পরিচালনা কমিটি সক্রিয় না হওয়ার কারণে স্কুলের বেহাল দশা। শিক্ষকরা বেতনের জন্য অনেক সময় আমার কাছে আসেন। অনুদান না থাকায় সহযোগিতা করা সম্ভব হচ্ছে না।