চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্র আহমদ সালমান। দীর্ঘদিন তিনি তার অস্বাভাবিক আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। তার এই আবেগ অন্যের ক্ষতির কারণ হচ্ছিল। তিনি সম্প্রতি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ চিকিৎসাকেন্দ্র্র থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিলেন তাকে। কয়েকদিন কাউন্সেলিং করলেন। অল্প কিছু দিনেই আহমদ সালমানের অবাক করার মতো পরিবর্তন এলো। এক সপ্তাহ অবজারভেশনে ফিরে এসেছেন প্রায় স্বাভাবিক জীবনে।
তার মতো কাউন্সেলিং নিয়ে চবি শিক্ষার্থীদের অনেকে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে ফিরছেন স্বাভাবিক জীবনে। ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ চিকিৎসাকেন্দ্র চালু হওয়ার পর, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ জন শিক্ষার্থী মনোরোগের চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবনের পর্যায়ে চলে এসেছেন।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাদের কাছে যে ৩৫ জন শিক্ষার্থী মনোরোগ চিকিৎসার জন্য এসেছেন তাদের মধ্যে সাধারণ চিন্তা, সামাজিক উদ্বেগ ব্যাধি, প্যানিক ব্যাধি, ভেতরে ভয়ের ব্যাধি, আবেগপূর্ণ বাধ্যতামূলক ব্যাধি, পরীক্ষা চিন্তা ও ভয়সহ নানা ধরনের সমস্যা ছিল। তাদেরকে এসব বিষয়ে চারদিন পরপর কাউন্সেলিং করা হচ্ছে।
চিকিৎসা নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, কাউন্সেলিং নেওয়ার পর আগের চেয়ে তাদের মন-মেজাজ স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। চবি মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি লাইলুন
নাহার বলেন, আমাদের কাছে যখন একজন শিক্ষার্থী সমস্যা নিয়ে আসেন তখন প্রাথমিকভাবে তার সমস্যাটা ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করি। তারপর প্রাথমিক পর্যায়ে তাকে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে না আসা পর্যন্ত তাকে কাউন্সেলিং করা হয়।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের তত্ত্বাবধানে এ কাউন্সেলিং সেন্টারে বিনা মূল্যে এ সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ সেন্টারে আছে আল্ট্রাসনোগ্রাফি ইউনিট, কাউন্সেলিং ইউনিট, ফিজিওথেরাপি ইউনিট এবং আধুনিকায়নকৃত প্যাথলজি।
কাউন্সেলিং ছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন মনোসামাজিক প্রশিক্ষণ যেমন ‘রাগ ব্যবস্থাপনা’, ‘উদ্বেগ ব্যবস্থাপনা’, ‘সামাজিক দক্ষতার’ সেবাও দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এ চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবা নেওয়া একজন ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনার্স পাস করার পর এখন মাস্টার্সে পড়ছি। অনার্সের একাডেমিক পড়ালেখা করার পাশাপাশি চাকরির পরীক্ষার জন্যও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু ৮টি চাকরি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পরও কোনোটাতে চাকরি হয়নি। পারিবারিক চাপ ও চাকরি না পাওয়ার হতাশায় সামনে এগোতে পারছিলাম না।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোরোগ চিকিৎসাকেন্দ্রে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে তাদের বিষয়টি জানাই। তারা যেভাবে পরামর্শ দিলেন অনেক ভালো লাগল। নিজের মধ্যেও এখন একটা আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি। পড়াশোনা আবারো শুরু করে দিয়েছি।
চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কিছুদিন আগে ব্লু হোয়েল গেম খেলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। আমাদেরও এক ছাত্র এ খেলায় মজেছিল। পরে কাউন্সেলিং সেন্টারের অভাবে তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যেতে হয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোরোগ চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে। এ চিকিৎসাকেন্দ্র মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসসহ নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।