বিদ্যালয়ের মাঠে জমানো হয়েছে চামড়ার বর্জ্যের স্তূপ। জমানো বর্জ্যের তীব্র গন্ধে নাক চাপা দিয়ে ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এমনকি বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সময়ও নাক চাপা দিতে হয় তাদের। বিগত দুই মাস ধরে এ অবস্থা চলছে নীলফামারী সদরের ফুলতলা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। ফলে অসহ্য দুর্গন্ধের মধ্যে অস্বস্তিতে দিন কাটাচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার মানুষ।
এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের প্রতিষ্ঠান ‘ভেনচুরা লেদার ম্যানুফ্যাকচার বিডি লিমিটেড ইন্টারন্যাশনাল’ থেকে ওই চামড়ার বর্জ্য কয়েকটি ট্রাকে করে এনে ফেলা হয়েছে ওই স্কুলের মাঠে। বর্জ্য ফেলার পর বিদ্যালয় ও আশপাশের বসতবাড়িতে তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবেশ দূষণের অভিযোগে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু আবেদনের ২৫ দিন অতিবাহিত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা।
ফুলতলা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী জেবা আফ্রিয়া বলেন, ‘ক্লাসে দুর্গন্ধ আসে, আমরা লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারছি না। দুর্গন্ধে মাঠে খেলাও বন্ধ হয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আলিফ ইসলাম বলেন, ‘স্কুলের পাশে আমাদের বাড়ি। স্কুলে গেলেও গন্ধ লাগে আবার বাড়িতেও গন্ধ লাগে। এতে যেমন স্কুলে লেখাপড়ার ব্যাঘাত হচ্ছে, বাড়িতেও লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারছি না।’
বিদ্যালয়ের মাঠ সংলগ্ন বাড়ির গৃহিণী ফাহিমা আক্তার (৫০) বলেন, ‘বাড়ির কাছে ময়লা ফেলার পর থেকেই দুর্গন্ধে দিন কাটাচ্ছি। বৃষ্টি হলে দুর্গন্ধ আরো বাড়ে, তখন বাড়িতে থাকা যায় না। আমরা দ্রুত এর প্রতিকার চাই।’ একই এলাকার হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকাবাসী এবং স্কুলের শিক্ষার্থীদের সমস্যার পাশাপাশি এপথে চলাচলকারী পথচারীরাও সমস্যায় পড়েছে। আমরা দ্রুত এর প্রতিকার চাই।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম মজিবুল হক বলেন, ‘অভিযোগের পর বর্জ্য ফেলা বন্ধ হয়েছে। ফেলানো বর্জ্য মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়ার কথা ছিল। সেটি না করায় দুর্গন্ধ আরো বাড়ছে এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর সমস্যা হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইপিজেড থেকে বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য অপসারণে কোম্পানিগুলো ঠিকাদার নিযুক্ত করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে ভেনচুরা লেদার এর নিযুক্ত ঠিকাদার মেসার্স কুতব উদ্দিন। এ বিষয়ে কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন,‘বিদ্যালয় মাঠে ওই বর্জ্য আমি ফেলিনি। আমার কাছ থেকে কিনে নিয়ে অন্যজন ফেলেছে।’ পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেসার্স কুতুব উদ্দিনের ঠিকাদারি লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে জনৈক মাহবুব নামের একজন ঠিকাদার ওই বর্জ্য সেখানে ফেলেছেন।
এ বিষয়ে ঠিকাদার মো. মাহবুব বলেন, ‘আমি মেসার্স কুতুব উদ্দিন’ নামের একটি লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে ভেনচুরার বর্জ্য অপসারণ করে থাকি। বিদ্যালয়ের খাল ভরাটের জন্য লেবু মিয়া নামের এক ব্যক্তি আমার কাছ থেকে বর্জ্য নিয়ে সেখানে ফেলেছেন। তাদের বলেছিলাম বর্জ্য ফেলার পর সেখানে মাটি চাপা দিতে। এখন সমস্যার কারণে আমি সেখানে মাটি চাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। ঠিকাদার মাহবুবের অভিযোগ অস্বীকার করে লেবু মিয়া বলেন, কুতুব ও মাহবুব নিজেই ইপিজেড থেকে বর্জ্যগুলো এনে ফেলেছে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
এ বিষয়ে ভেনচুরা লেদার-এর ব্যবস্থাপক মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘এসব গার্মেন্ট ওয়েস্ট আমরা ফেলি না। আমাদের নিযুক্ত লোক অপসারণ করে থাকেন। প্রধান শিক্ষকের ওই পত্রটি পাওয়ার পর আমি বিষয়টি জেনেছি। সেখানে একটি ডোবা বন্ধ করার জন্য আমাদের নিযুক্ত লোকের কাছ থেকে ওই এলাকার লেবু মিয়া বর্জ্য নিয়ে ফেলেছেন। যারা নিয়ে গেছেন দায়িত্ব তাদেরই। এরপরও বিষয়টি নিয়ে আমি লেবু মিয়া এবং প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি।