জাতীয়

বিদেশে ফিরতে চান প্রবাসীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৬ জুলাই, ২০২১

মহামারির কারণে দেশে ফিরে আসা প্রবাসীর ৭২ শতাংশই আবার বিদেশে ফিরে যেতে চান। এর মধ্যে ৮৯ শতাংশই গ্রামাঞ্চলের। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সাম্প্রতিক ৪১৭ জনের ওপর পরিচালিত এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

গত এপ্রিলে প্রকাশিত সমীক্ষাটির নাম ছিল-‘মহামারির মধ্যে দেশে ফিরে আসার এক বছর পর প্রবাসীদের আর্থসামাজিক ও মনোসামাজিক অবস্থা’।

সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের ৪৭ দশমিক ২৩ শতাংশের আয়ের কোনো উৎস নেই। তাদের মধ্যে যারা আবার বিদেশে যেতে চান তাদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ। তাদের প্রায় ৮৪ শতাংশের বয়সই ২৬ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। বিদেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুকদের মধ্যে ৮০ শতাংশই চট্টগ্রাম বিভাগের। দেশে ফেরা এক হাজার ৩৬০ জন প্রবাসীর সঙ্গে সমীক্ষার জন্য যোগাযোগ করতে গিয়ে ব্র্যাক দেখতে পায়, তাদের মধ্যে ২০৭ জন ইতোমধ্যে আবারো বিদেশ চলে গেছেন। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে গত বছরের মে মাসে চাকরি ছেড়ে কুয়েত থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন মুস্তাকিম আলম। সাত বছরের বেশি সময় কুয়েতে থেকেছেন তিনি। সেখানে একটি ছাপাখানায় কাজ করতেন। ৩০ বছর বয়সি মুস্তাকিমের বাড়ি খুলনার পাইকগাছায়। গত এক বছর ধরে খুঁজেও কোনো চাকরি পাননি তিনি। তিনি বলেন, ব্যবসা শুরু করার মতো পর্যাপ্ত টাকা নেই আমার। যে টাকাটা নিয়ে এসেছিলাম, তা ইতোমধ্যে পারিবারিক কাজে খরচ হয়ে গেছে।

এখন অর্থসংকট কাটাতে আবারো বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছেন মুস্তাকিম। এরই মধ্যে তিনি কুয়েতে তার পরিচিতদের নতুন একটি ওয়ার্ক ভিসার ব্যবস্থা করতে বলেছেন। আর এজন্য চাকরির ধরনের ওপর ভিত্তি করে তাকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা দিতে হবে।  বাংলাদেশে ফিরে বেকার হয়ে পড়া অন্য প্রবাসীদের অবস্থাও মুস্তাকিমের মতোই। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, চাকরির সুযোগ না থাকা, দেশের চেয়ে বিদেশে বেশি সুযোগ-সুবিধা থাকাসহ বেশ কিছু আর্থ-সামাজিক কারণে প্রবাসীরা দেশ থেকে আবারো বিদেশে চলে যেতে ইচ্ছুক।

৪০ বছর বয়সি মুরাদ ইসলাম গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাতার থেকে দেশে ফিরেন। এরপর থেকেই মুন্সীগঞ্জের এই বাসিন্দা সেখানকার স্থানীয় কারখানাগুলোতে চাকরি খুঁজছিলেন; কিন্তু পাননি। মুরাদ কুয়েতে ছিলেন সাত বছর। এর আগে ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবে ছিলেন তিনি। এরপর  দেশে ফিরে এসে নরসিংদীর মাধবদীতে একটি দোকান খোলেন। কিন্তু দোকানটি ভালো না চলায় এবং অন্যান্য চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৩ সালে কাতারে চলে যান তিনি। মুরাদ বলেন, মনে হচ্ছে, বিদেশ যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই আমার। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান জানান, সমীক্ষায় দেখা গেছে, আয় না থাকা বেশির ভাগ প্রবাসী আবারো বিদেশে যাওয়াকে নিজেদের ‘প্রথম পছন্দ’ হিসেবে রেখেছেন।

এ ছাড়া যারা ছুটিতে দেশে এসে করোনা পরিস্থিতির আটকে গিয়েছিলেন বা চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছিলেন—এমন অনেক প্রবাসীর আগের চাকরিদাতারা তাদের সঙ্গে আবারো যোগাযোগ করেছেন। তাই তারা এখন ফিরে যেতে চান।

গত বছরের আগস্টে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনের মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-চাকরির সুযোগের অভাব (বিশেষত আনুষ্ঠানিক খাতে), অপর্যাপ্ত আয়, আর্থিকসংকট, সামাজিক সেবার অভাব ও সীমিত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা।

‘বাংলাদেশ : সার্ভে অন ড্রাইভারস অব মাইগ্রেশন অ্যান্ড মাইগ্রেন্টস প্রোফাইল’ নামের এ সমীক্ষার জন্য আইওএম ২০১৯ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ১১ হাজার ৪১৫ জন ‘নিয়মিত’ ও ‘অনিয়মিত’ সম্ভাব্য প্রবাসীর সাক্ষাৎকার নেয়।

যেসব অংশগ্রহণকারী ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বিদেশে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, তাদের বেশিরভাগের বয়স কাজের উপযোগী এবং তারা কিছুটা পড়াশোনাও করেছেন।

সমীক্ষাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রায় ৪০ শতাংশ প্রবাসী বেকার ছিলেন এবং ৯০ শতাংশের কোনো ব্যক্তিগত আয় বা পর্যাপ্ত আয় ছিল না।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ৯৯ শতাংশ সম্ভাব্য প্রবাসী জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ভালো চাকরির সুযোগ থাকলে তারা দেশেই থাকতেন।

আইওএমের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যার দিকে থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে ষষ্ঠ অবস্থানে আছে। ২০১৯ সালের হিসাবে সাত দশমিক আট মিলিয়ন বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছে।

প্রতি বছর বাংলাদেশের দুই দশমিক দুই মিলিয়নের বেশি তরুণ শ্রম বাজারে যোগ দেয়। কিন্তু দেশের শ্রম বাজার তাদের সবাইকে চাকরি দিতে সক্ষম নয়। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, এ বছরের মে পর্যন্ত এক দশমিক ৯৫ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে নতুন চাকরি নিয়েছেন।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল বলেন, মানুষ যখন চাকরির সুযোগ বা অন্য বিকল্পের অভাবে বিদেশে পাড়ি জমাতে ইচ্ছুক হয়, তখন অভিবাসনই তাদের পছন্দ এমনটা বলা যায় না। অভিবাসন অবশ্যই একটি চয়েজ হতে হবে, তিনি বলেন।

শরিফুল আরো বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচুর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এগুলো যদি প্রবাসে যেতে ইচ্ছুকদের সামনে ‘দৃশ্যমান’ করে তোলা যায়, তাহলে তাদের হাতে একটি বিকল্প থাকতে পারে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads