বিদেশি মদের আমদানি কমলেও বিক্রি কমেনি

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

বিদেশি মদের আমদানি কমলেও বিক্রি কমেনি

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২২ মার্চ, ২০২১

কয়েক বছর ধরে দেশে বিদেশি মদের আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমলেও কমেনি ব্যবহার। সংশ্লিষ্টদের কড়া নজরদারির পরও সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন বার থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিয়ার। ধারণা করা হচ্ছে, চোরাইপথে কিংবা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বা বন্ডেড সুবিধায় আনা বিদেশি মদ বাইরে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের ফলে ওয়্যারহাউস বা ক্লাব থেকে অবৈধভাবে বিদেশি মদ বিক্রিতে কড়া নজরদারি আরোপ করা হয়। অভিযানের ফলে কিছুদিন বিদেশি মদ কম পাওয়া গেলেও সম্প্রতি আবারো আগের অবস্থা ফিরে আসছে।

গত বুধবার হোটেল এরাম ইন্টারন্যাশনালে অভিযান চালিয়ে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে মদ বিক্রির অপরাধে প্রায় ১৮ লাখ টাকা জরিমানা করে শুল্ক গোয়েন্দারা। বৈধ কাগজ না থাকায় জব্দ করা হয় উদ্ধার করা মদ ও বিয়ার। এর আগে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর এই হোটেলটির ছাদ, মেঝে ও গ্যারেজের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৭৪ বোতল বিদেশি হুইস্কি এবং তিন হাজার ৬৭২ ক্যান বিদেশি বিয়ার জব্দ করেছিল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

ভ্যাট গোয়েন্দা মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, বারগুলোতে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে মদ বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। করোনাকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অনেক বারে মদ বিক্রি হয়েছে। সেসব বার চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্ত র(ডিএনসি) গুলশান-১-এ ৫৩ গুলশান অ্যাভিনিউ ভবনের নিচতলায়  ‘হর্স অ্যান্ড হর্স’ নামে অবৈধ বার থেকে ২০৩ বোতল বিদেশি মদ, ৮১০ ক্যান বিয়ার এবং দুই কেজি সিসা উদ্ধার করে।

একই বছরের ১৭ নভেম্বর গুলশানের লেকশোর হোটেলের বার থেকে ৩৪৯ বিদেশি মদের বোতল জব্দ করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এ সময় হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনো বৈধ কাগজ দেখাতে পারেনি।

ডিএনসির ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের উপপরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ পথে আনা মদ বারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে বলে অনেক সময় অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে সেখানে অভিযান চালানো হয়। বারগুলোতে অবৈধভাবে আনা বিদেশি মদ বিক্রি পূর্বের তুলনায় অনেক কমেছে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, অতীতে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধাপ্রাপ্ত বারগুলো বিপুল পরিমাণ শুল্কমুক্ত মদ এনে বাইরে বিক্রি করে দিত। এতে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাত। এজন্য ২০১৭ সালে ছয়টি বন্ডেড ওয়্যারহাউসে মদ আমদানি, তা বিক্রির পাস বই সংরক্ষণ, ক্রেতার শুল্কমুক্ত সুবিধার সনদ দেখানো এবং কোন ব্র্যান্ডের কতটুকু মদ বিক্রি হলো তা প্রতি মাসে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। তবে শুরুর দিকে তা পরিপালন না হলেও সম্প্রতি এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যায় এনবিআর। আদেশটি সঠিকভাবে পরিপালনের জন্য এনবিআর থেকে সংশ্লিষ্ট ছয়টি বারসহ দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

শুল্কমুক্ত সুবিধায় দেশে ৬টি বার মদ আমদানি ও বিক্রি করে থাকে। কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা প্রিভিলেজড পারসনরাই এসব বার থেকে মদ ক্রয় করতে পারেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুল্কমুক্ত সুবিধার সনদ দিয়ে থাকে। এই বারগুলো মনিটরিং করে এনবিআরের অধীন কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট অফিস। বারগুলো হলো-সাবের ট্রেডার্স লিমিটেড, ইস্টার্ন ডিপ্লোমেটিক সার্ভিসেস, টস বন্ড, ন্যাশনাল ওয়্যারহাউস, ঢাকা ওয়্যারহাউস ও এইচ কবির অ্যান্ড কোম্পানি।

অন্যদিকে বাংলাদেশে মদ আমদানিতে উচ্চ হারে শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে বিয়ার ও ওয়াইন আমদানিতে ৪৫০ শতাংশ কর এবং হুইস্কি বা ভদকার মতো পানীয় আমদানিতে শুল্কের হার ৬০০ শতাংশেরও বেশি।

এদিক ডিএনসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সারা দেশে ১৪১টি লাইসেন্স করা মদের বার রয়েছে, যার অধিকাংশই রাজধানীতে। এই বারগুলো বন্ডেড ওয়্যারহাউসসহ চোরাইপথে আসা মদ সংগ্রহ করে বিক্রি করে বলে অভিযোগ আছে।

করোনাকালীন পরিস্থিতি এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে গত কয়েক মাসে বিদেশি মদের ঘাটতি দেখা দেয়। তবে উচ্চ মূল্যে এখনো অনেক বারেই পাওয়া যাচ্ছে বিদেশি মদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একাধিক বারে কর্মরতরা জানান, প্রশাসনের কড়াকড়ি আরোপের পর কিছুদিন বিদেশি মদের ঘাটতি দেখা দিলেও এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। দাম বেশি হলেও দেশি মদের পাশাপাশি অধিকাংশ বারেই বিদেশি মদ বিক্রি হচ্ছে।

এনবিআর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত তিনটি অর্থবছরে বিদেশি মদের আমদানি উলেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৯ টন ৪৮৩ কেজি মদ বন্ড সুবিধায় আমদানি হয়েছে, যেখানে ওই অর্থবছরে বন্ড সুবিধার বাইরে আমদানি হয় ১৪০ টন ৫৭৬ কেজি মদ। বন্ড সুবিধা ও বন্ড সুবিধার বাইরে আমদানি করা মোট অ্যালকোহল জাতীয় পণ্যের পরিমাণ ২ হাজার ২২০ টন ৫৯ কেজি।

বন্ড সুবিধায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ হাজার ৭৭৫ টন ২০৯ কেজি মদ আমদানি হয়। ওই সময়ে বন্ডের বাইরে আমদানির পরিমাণ ছিল ১৮৫ টন ১১৬ কেজি মদ। ওই বছর মোট আমদানি করা মদ বা সমজাতীয় পণ্যের পরিমাণ ৪ হাজার ৯৬০ টন ৩২৫ কেজি।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে বন্ড সুবিধায় দেশে আমদানি হয় ৪ হাজার ২৫৮ টন ৬০ কেজি মদ। আর বন্ডের বাইরে আমদানির পরিমাণ ছিল ২১২ টন ৩২৫ কেজি। মোট আমদানির পরিমাণ ৪ হাজার ৪৭০ টন ৩৮৫ কেজি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাস্টমস বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কাছে বিভিন্ন সময়ে তথ্য এসেছে, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা মদের একটি অংশ বাইরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি ও  চোরাইপথেও মদ আসে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads