‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৮’-এর পর্দা নেমেছে গত রোববার রাতে। ওই দিন রাত ১২টায় ঘোষণা করা হয় মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের নাম। এবার সেরা সুন্দরীর মুুকুট উঠেছে পিরোজপুরের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশীর মাথায়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৭ ডিসেম্বর মিস ওয়ার্ল্ডের মূল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব তিনিই করবেন। তবে তার আগেই দেশে এবারের বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে উঠেছে বিতর্কের ঝড়।
মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৭ আসরে বিতর্কের কথা এখনো ভোলেনি কেউ। আয়োজক প্রতিষ্ঠান অন্তর শোবিজ চেয়েছিল এবার বিতর্কমুক্ত থাকতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না তাদের। বিতর্ক আর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে এবারের আসরটি নিয়েও। প্রতিযোগী নির্বাচন থেকে শুরু করে সেরা সুন্দরী নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে বিভিন্ন অনিয়মের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান দাবি করছে, এবার প্রায় ৩০ হাজার প্রতিযোগী নাম নিবন্ধন করেছিল। সেখান থেকে কয়েকশ প্রতিযোগীকে বাছাই করে নেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আয়োজকদের এই দাবি মিথ্যা ছিল। মূলত পরিচিত লোকজনদের নিয়ে কয়েকশ প্রতিযোগী নিবন্ধিত হয় এবারের আসরে। সে কারণেই অনেকটা নীরবে শুরু হয়েছে মিস ওয়ার্ল্ডের এবারের আসর।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলতে চলতেই হঠাৎ শোনা গেল ৩০ সেপ্টেম্বর গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হবে প্রতিযোগিতার। এদিন বিকাল ৫টা ১৪ মিনিটে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উড়ো বার্তা আসে— ঐশী হচ্ছেন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৮। বেনামি ওই বার্তাটিতে আরো লেখা ছিল, ‘অন্তর শোবিজের কর্ণধার স্বপন চৌধুরীর অনুগত মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৮ হতে যাচ্ছেন।’ আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই ফল প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। সে ফল মিলে যাওয়ায় আয়োজনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
এখন সর্বত্র আলোচিত, বিশেষ সমঝোতার মাধ্যমে সেরা সুন্দরী নির্বাচিত হয়েছেন ঐশী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দ্বিমত পোষণ করেন ঐশী। তিনি মনে করেন, তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিতর্ক তৈরি করার জন্যই এসব তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই কেউ কেউ এসব ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভেতরের পরিবেশ আমি জানি। আমি তো অংশগ্রহণ করেছি। আমার থেকে ভালো আর কেউ জানবে না। আমাদের আচার-আচরণ, সময়ানুবর্তিতা, হাঁটা-চলা, কথাবার্তা সবকিছু বিবেচনা করেই মিস ওয়ার্ল্ড নির্বাচিত করা হয়। বিচারকরা আমার মধ্যে হয়তো সেসব গুণ পেয়েছেন। তাই আমাকে নির্বাচিত করেছেন।’
ঐশীকে নিয়ে নতুন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে মিডিয়ার অলিগলিতে। অনেকেই বলছে, তার উচ্চতা মিস ওয়ার্ল্ডের জন্য উপযুক্ত না। এ বিষয়ে ঐশী বলেন, ‘উচ্চতার ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা ছিল না। আয়োজকরা ভালো উচ্চতার মেয়েদের বাছাই করে নিয়েছেন। আমার উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। এ উচ্চতা নিয়ে একজন মিস ওয়ার্ল্ডও হয়েছেন। যারা বলছেন আমার উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি, তারা মিথ্যা বলছেন।’
এবারের আসরে গ্র্যান্ড ফিনালেতে ‘আইকন বিচারক’ হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল তারিনের। কিন্তু ফাইনাল অনুষ্ঠানে তারিনকে দেখা যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিচারক জানান, তিনি আগে থেকেই জানতেন তারিন বিচারক হিসেবে আসবেন না। তবে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত এক সূত্র বলেন, ‘তারিন তার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে অনুষ্ঠানে আসেনি। মানুষের ব্যক্তিগত সমস্যা থাকতেই পারে।’ ঠিক কী কারণে আসেননি তারিন সেটা জানার জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
বিভিন্ন সুন্দরী প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে দেখা যায়, নতুন চ্যাম্পিয়নের মাথায় মুকুট তুলে দেন আগের চ্যাম্পিয়ন। সে হিসেবে এবারের মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের মাথায় মুকুট পরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল জেসিয়া ইসলামের। কিন্তু মুকুট পরিয়েছেন অন্তর শোবিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসরিন চৌধুরী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত আসরের অনেক সুন্দরীকে দাওয়াতই করেনি আয়োজক প্রতিষ্ঠান। শুধু জেসিয়াই নয়, অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পাননি মিডিয়াকর্মীরাও। এমনকি স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের দাওয়াত দিতেও ভুলে গিয়েছিল আয়োজক প্রতিষ্ঠান।