বিক্রি বেড়েছে শীতবস্ত্রের

শীতের প্রকোপে চাহিদা বেড়েছে গরম কাপড়ের। ছবিটি গতকাল গুলিস্তান এলাকা থেকে তোলা

ছবি : মিজানুর রহমান খান

পণ্যবাজার

বিক্রি বেড়েছে শীতবস্ত্রের

# বাজার প্রায় ৫ হাজার কোটির # দাম বেশির অভিযোগ ক্রেতার

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮

শীত কড়া নেড়েছে বেশ আগেই। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ‘ফেথাই’ সারা দেশে বৃষ্টি নিয়ে আসার পর থেকে সেটা যেন জেঁকে বসেছে; সে শীতকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফেথাই শেষে এখন দিনে রোদের দেখা মিললেও শীত কমছে না। আর এতে বেড়েছে শীতবস্ত্রের বাজারে ভিড়। নগরের বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্রের বাজারসহ জমজমাট হয়ে উঠেছে ফুটপাতের ব্যবসা।

দেশে শীতকে কেন্দ্র করে যে ব্যবসা হচ্ছে, সেটার আকার কিন্তু ছোট নয়। আমদানির পাশাপাশি দেশে তৈরি আর পুরনো শীতবস্ত্রের সঙ্গে কম্বল ও অন্যান্য সামগ্রী হিসেবে নিলে সেটা প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার কম নয়, এমন জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আর নির্বাচন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ বছর পুরোপুরি সুবিধা নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

এদিকে রাজধানীর নিউমার্কেট, বঙ্গবাজার, গুলিস্তান ও ধানমন্ডির বিপণিবিতানগুলো এবং বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে ঘুরে দেখা যায়, এ বছর হাল ফ্যাশনের শীতবস্ত্রের সমাহার বেশি। ছেলেমেয়েদের শীতের পোশাকের মধ্যে আছে নানা ধরনের সোয়েটার ও জ্যাকেট। নানা রঙের এসব পোশাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে নতুনত্ব। চামড়া, রেকসিন অথবা উলের তৈরি এসব জ্যাকেটের দামও কম নয়। পাশাপাশি ডেনিম বা গ্যাবার্ডিন কাপড়ের ব্লেজারও আছে।

আর গতকাল বৃহস্পতিবার এসব মার্কেটে ক্রেতার কমতি ছিল না। বিশেষ করে রাজধানীর শীতের পোশাকের বড় বাজার বঙ্গবাজারের অলি-গলিতে পা রাখা দায়। ব্যবসায়ীরা বলেছে, শৈতপ্রবাহ শুরুর পর থেকেই এ অবস্থা। আর কয়েকদিন মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম চত্বর, গুলিস্তান, নিউ মার্কেট, মিরপুর, মৌচাক-মালিবাগ, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার ফুটপাথে শীতবস্ত্রের পসরা চোখে পড়েছে। সবখানেই চলছে জমজমাট বিক্রি বাট্টা।

দৈনিক বাংলা থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত রাস্তার দক্ষিণ পাশের ফুটপাথেই দেখা গেল অন্তত প্রায় অর্ধশত শীতবস্ত্রের দোকান। সেখানে এক বিক্রেতা ফজলু মিয়া বলেন, পুরোদমে ব্যবসা শুরু হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার আরো মানুষের ভিড় হবে। আর আগামী মাস পর্যন্ত এ অবস্থা থাকবে।

তবে এবার শীতবস্ত্রের দাম বেশি এমন অভিযোগ ক্রেতাদের। নিউ মার্কেটের নুরজাহান কমপ্লেক্সের আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, দেশি পোশাকের দাম কিছুটা কম হলেও বিদেশিগুলোর দাম তুলনামূলক আকাশছোঁয়া। আর হঠাৎ জেঁকে বসা শীতের সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরাও বেশি দাম হাঁকছে। একই অভিযোগ করে বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেটের সুমাইয়া আকতার বলেন, ছয়শ টাকায় গত বছর একই ধরনের সোয়েটার কিনেছি। এ বছর সেটা ৮০০ টাকা চাচ্ছে। এ বছর দাম বেশি। এদিকে ওই মার্কেটের এসএস ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী এজাজুল হক বলেন, হঠাৎ করেই চাহিদা বাড়ায় পাইকারিতে দাম ছাড়ছে না ব্যবসায়ীরা। তবে গত বছরের থেকে এ বছর পোশাকের দামে ৫০-১০০ টাকা পার্থক্যও নেই বলে দাবি তার।

তবে গুলিস্তানের সুন্দরবন, বংশাল, বঙ্গবাজার মার্কেট ও সদরঘাটে পাইকারি কাপড়ের দোকানগুলোও এখন শীতবস্ত্রে ঠাসা। এসব বাজারে এখন দেশের সকল এলাকার পাইকাররা ভিড় করছে। গতকাল কথা হয় ফরিদুল হাসানের সঙ্গে। তিনি নওগাঁ থেকে পোশাক কিনতে এসেছেন। তিনিও এ বছর দাম বেশ বেশি বলে জানান।

এসব মার্কেটে দেশে তৈরি শীতবস্ত্রের বেশিভাগ আসে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট থেকে। শীত মৌসুমে কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লীতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার পোশাক তৈরি হয়। সেখানকার পোশাকপল্লীর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লীতে বিক্রয়কেন্দ্র ও কারখানার সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। সারা দেশে দেশি নতুন শীতের পোশাকের অর্ধেকের বেশি তারা সরবরাহ করেন।

অপরদিকে শীতের পোশাকের আরেক বড় জোগান আসে চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে। এসব পোশাকের বাজারের আকার দেশি তৈরি পোশাকের বাজারের থেকে কম নয়। পরিমাণে কম হলেও এসব পণ্যের দাম বেশি। পাশাপাশি দেশে হাজার কোটি টাকার পুরনো শীতবস্ত্র আসে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। যা পরবর্তীতে টেন্ডারের মধ্যেমে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগ্রহ করেন।

শীতবস্ত্রের পাশাপাশি চীন থেকে আমাদানি করা কম্বল কেনাবেচাও বড় অংশে রয়েছে। বঙ্গবাজারে কম্বলের পাইকারি বিক্রেতা আবদুস সাত্তার মোল্লা জানান, মূলত চট্টগ্রামের আমদানিকারকদের কাছ থেকে তারা কম্বল সংগ্রহ করছেন। পাইকারিতে এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫-৭ হাজার টাকায় ভালো কম্বল মিলছে। আর দেশে তৈরি কম্বল পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। যা গত বছর থেকে একটু বেশি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads