কৃষি অর্থনীতি

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে নতুন দিগন্তের সূচনা

  • প্রকাশিত ২৮ অগাস্ট, ২০২০

কাজী মফিকুল ইসলাম,আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে:

আধুনিক যুগে মাছ চাষ পুকুর, খাল বিল নালার যেন কোনো প্রয়োজন নেই। প্রযুক্তি ব্যবহারে বাড়ির আঙ্গিনার ভিতর মাছ চাষ ঢুকে গেছে । স্বল্প জায়গায় বায়োফ্লক প্রদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছে চাষীরা।

নতুন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে সফলতা পেয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের কলেজ পাড়া (টিএন্ডটি) সংলগ্ন এলাকার মো. উজ্বল মিয়া। নির্দিষ্ট কলাকৌশল আর প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে চৌবাচ্চা বা (ট্যাংকিতে) মাছ চাষ করে এ সফলতা পান তিনি। ইতোমধ্যে তার হাত ধরে নতুন প্রদ্ধতিতে মাছ চাষে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে । কম শ্রমে স্বল্প জায়গায় মূল্যবান মাছ চাষের ফলে তিনি অধিক লাভের আশা করছেন । বাড়ির আঙ্গিনায় বায়োফ্লগ পদ্ধতিতে তার এই মৎস্য চাষের সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই এগিয়ে আসছে এ চাষে।

উজ্জল এলাকার মো. আনু মিয়ার ছেলে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সে সবার বড়। উজ্জল বলেন দারিদ্রতার কারণে সে লেখা পড়া বেশী করতে পারেননি। পরিবারে অভাব অনটন থাকায় প্রায় ৮ বছর আগে চট্রগ্রামে একটি গামের্ন্টেসে চাকরিতে চলে যান তিনি । সেখানে বেশ কয়েক বছর কাজ করার পর চাকুরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন।

এরপর কিছু দিন অলস সময় পর করেন তিনি। এক পর্যায়ে ইউটিউব চ্যানেল বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের ভিডিও দেখে তার মনে আগ্রহ জন্মায় । বায়োফ্লক পদ্ধতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয় তার। অধির আগ্রহে রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও ঢাকায় তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহন করে বলে জানায়।

প্রশিক্ষণ শেষে গত দুই পূর্বে নিজ বাড়ি সংলগ্ন স্থানে একটি জায়গা ভাড়া নিয়ে ১৫ হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন গোল আকৃতির একটি চৌবাচ্চা তৈরী করেন। যা তৈরী করতে তার ৫০ হাজার টাকার উপর ব্যয় হয়। এরপর দেশীয় প্রজাতির শিং, কৈ মাছের ১৭ কেজি পোনা দিয়ে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু হয় । ওইসব মাছের পোনা ছিল শুন্য থেকে ১৫ দিনের। কৈ মাছের পোনা কেনা হয় ১৮ হাজার টাকায় ও শিং ৭ হাজার ৬ শত টাকায় কেনা হয়। খাবারসহ আনুসঙ্গিক খরচ হয় আরো প্রায় ১২ হাজার টাকা। কিন্তু যে ট্যাংকি বা চৌবাচ্চা তৈরী করা হয়েছে তা ১৫-২০ বছরেও কিছু হবে না বলে জানায়।

গত প্রায় দুমাস ধরে ট্যাংকি বা চৌবাচ্চা মাছ যত্ন করা হচ্ছে। আগামী মাসে মাছগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হবে। তিনি আশা করছেন ৩ মাসে ১লাখ ৬০ হাজার টাকার উপর মাছ বিক্রি করা যাবে।

এরপর আবার পুনরায় শিং মাগুর, কৈসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছের পোনা চাষ করা হবে বলে জানায়। মাছের যে চাহিদা আর খবর কম লাভ বেশী হওয়ায় আরো দুটি চৌবাচ্চা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানায়।
এ পদ্ধতির ফলে দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা করেন। উজ্জল জানান, তার এই মাছের সাফল্য দেখে এলাকার অনেক তরুণ বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
ইতিমধ্যেই উপজেলার কয়েক তরুণ তার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন। তিনি আরো বলেন, বায়োফ্লক এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে অল্প জায়গায় অধিকসংখ্যক মাছ চাষ করা যায়। এ পদ্ধতিতে স্বল্প

eজিতে কম সময়ে বিপুলসংখ্যক মাছ উৎপাদন সম্ভব। এ পদ্ধতি মাছ চাষ করতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। সরকারী ভাবে এ পদ্ধতির মাছ চাষের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হলে যুবকরা উৎসাহিত হয়ে মাছ চাষে বেকারত্ব দুর ও মাছ রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব ।

এদিকে উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নে প্রবাসী মো. রনি তিন হাজার লিটার পানির ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ট্যাংকি তৈরী করে তেলাপয়িা মাছের পোনা ১ কেজি ২ হাজার পিচ দিয়ে পরীক্ষামূলক মাছ চাষ করেছে। মাত্র দুই মাসে খরচ বাদে আয় হয় ৫০ হাজার টাকা। ট্যাংকি বাদে মাছ ও খাবারসহ অন্যান্যা খরচ হয় ১১ হাজার টাকা।

তিনি বলেন এই পদ্ধতিতে কম সময়ে অল্প পুজিতে অধিক লাভবান হওয়া যায়। বর্তমানে তার চৌবাচ্চায় কৈ, শিংসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ রয়েছে। সে ডেইলি বাংলাদেশকে আরো জানায় পুকুরে ১০ মণ মাছ উৎপাদন করতে ১৫-২০ শতক জায়গার প্রয়োজন। আবার সময় দিতে হবে ১ বছর। এতে নানা কারনে মাছ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে। অথচ বায়োফ্লকে সঠিক পরিচর্যায় মাত্র ১০ হাজার লিটার পানির ট্যাংকে ৭-৮ মণ বা ততোধিক মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় তেলাপিয়া, শিং, মাগুর, পাবদা, পাঙ্গাশ, সব নানা প্রজাতির মাছ উৎপাদন করা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ট্যাংকে মাছ চাষের বেশ কয়েকটি পদ্ধতি চালু রয়েছে তার মধ্যে রিসাইক্লিং অ্যাকুয়াফিনিক সিস্টেম বা সংক্ষেপে রাস, আলাস, বায়োফ্লক। সবগুলো মধ্যে সহজ ও লাভজনক হচ্ছে বায়োফ্লক পদ্ধতি রয়েছে। এ পদ্ধতিতে চাষে মাছের খাবার খরচ খুবই কম হয়। জৈব বর্জ্যের পুষ্টি থেকে পুন ব্যবহার যোগ্য খাবার তৈরি করা হয়। পানিতে ব্যাকটেরিয়া, অণুজীব ও শৈবালের সমম্বয়ে পাতলা একটি আস্তরণ তৈরি হয়। যা পানিকে ফিল্টার করে। পানি থেকে নাইট্রোজেন জাতীয় ক্ষতিকর উপাদানগুলি শোষণ করে প্রোটিন সমৃদ্ধ যে উপাদান গুলো থাকে সেগুলো মাছ খাবার হিসেবে গ্রহণ করে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মেআব্দুস সালাম বলেন, বায়োফ্লক পদ্ধতির মাছ চাষে দিন দিন আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগ্রহীদের সব ধরনের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads