বাড়িঘর ছেড়ে গা-ঢাকায় শীর্ষ পাচারকারীরা

সর্বনাশা ইয়াবা

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

বাড়িঘর ছেড়ে গা-ঢাকায় শীর্ষ পাচারকারীরা

  • মাহমুদুল হক বাবুল, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৭ অক্টোবর, ২০১৮

ইয়াবা পাচার প্রতিরোধে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সম্পদের খোঁজ নিতে শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত শনিবার মহেশখালীতে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান ও পরে কক্সবাজারে এক মতবিনিময়ে ইয়াবা পাচার প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র্যাব মহাপরিচালকের কঠোর নির্দেশনায় তৎপর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। উখিয়া থানা পুলিশ ইয়াবা ব্যবসার টাকায় গড়ে তোলা আলিশান বাড়িঘরের তালিকা করা শুরু করে। এই খবর পেয়ে শীর্ষ ইয়াবা পাচারকারীরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।

টেকনাফ থানার সদ্য অফিসার ইনচার্জ প্রদীপ দাশ বলেন, জনবল সঙ্কট ও রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত থাকায় ইয়াবা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন সর্বশক্তি নিয়োগ করা হবে বলে জানান তিনি।

গত বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার টেকনাফ সড়ক সংলগ্ন রাজাপালং জাদিমোরা মসজিদের পাশে গিয়ে দেখা যায় একটি বহুতল ভবনের কাজ চলছে। স্থানীয়রা জানায়, রাজাপালং খালকাছাপাড়া গ্রামের কবির আহম্মদ বাড়িটি তৈরি করছেন। নুন আনতে পান্তা  ফুরানো এই পরিবার ক’বছর আগেও খিলি পান বিক্রি করে সংসার চালাত। কবির আহম্মদ ওই পাড়ার মো. হোছনের ছেলে।

স্থানীয়রা আরো জানায়, কবির আহম্মদের ছোট ভাই মো. ইসলাম সম্প্রতি ইয়াবার চালান নিয়ে ঢাকা যাওয়ার পথে দাউদকান্দিতে আটক হন। এখন কবির কুমিল্লা জেলহাজতে। এ ঘটনার পর ইয়াবা পাচারকারী কবির আহম্মদ ওমরা ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল জলিল (৪৫) জানান, কবির আহম্মেদ তার শ্বশুরবাড়ি হলদিয়াপালং ইউনিয়নে সাবেক রুমখা গ্রামে বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছে। কোটবাজারে কোটি টাকার ক্রোকারিজের দোকান, একাদিক গাড়িসহ বিপুল পরিমাণ সহায় সম্পত্তির স্বত্বাধিকারী। অগাধ সম্পদের মালিক হলেও কবির আহম্মেদের বাবা এখনো জীবিকা নির্বাহ করছে স্থানীয় হাটে বাজারে সুপারি বিক্রি করে।

স্থানীয়দের তথ্যমতে, টিঅ্যান্ডটি লম্বাঘোনা, হিজোলীয়, কুতুপালং, থাইংখালী, বালুখালী, পালংখালী, রাজাপালং, টাইপালং, দরগাহবিল, ডেইল পাড়া, জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, জুম্মাপাড়া, লম্বরীপাড়া, সোনারপাড়া, ডেইলপাড়া, ইনানী, মনখালী, ছেপটখালীসহ বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে গড়ে উঠেছে ইয়াবা ব্যবসার কালো টাকায় ২ শতাধিক আলিশান ভবন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলছেন, এসব ভবন মালিকদের আগের পারিবারিক অবস্থা ও আয়ের উৎস খতিয়ে দেখলে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে।

নির্মূলের পরিকল্পনা নিয়ে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান চলতে থাকলেও ইয়াবার চালান পাচার অপরিবর্তিত থাকায় সবার মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক পথে মাঝে মধ্যে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা কিছু কিছু ইয়াবার চালান উদ্ধার করলেও শীর্ষ পাচারকারীরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের জানান, যে থানায় কমপক্ষে ২০ জন পুলিশ কর্মকর্তা থাকার কথা সেখানে মাত্র দুজন অফিসার দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, ভালো পথে ফিরে আসার জন্য ইয়াবা কারবারিদের অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তথাপিও তারা ভালো পথে ফিরে আসেনি। এবার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে নামতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইয়াবার টাকায় গড়ে তোলা আলিশান ভবনগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads