বাড়ছে বৃক্ষরোপণ, হচ্ছে বাণিজ্যিক ফলবাগান

ছবি : সংগৃহীত

জীব ও পরিবেশ

বাড়ছে বৃক্ষরোপণ, হচ্ছে বাণিজ্যিক ফলবাগান

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ২২ জুলাই, ২০১৯

গাছ মানুষের এত উপকার করার পরও অকাতরে চলছে বৃক্ষনিধন। নগরায়ণ, শিল্পায়ন, আসবাবপত্র তৈরি, শিল্পের কাঁচামাল তৈরি, জ্বালানি কাঠের সরবরাহ-এসব অজুহাতে গাছ কেটে বনভূমি উজাড় করছি আমরা। আর এর ফলে প্রকৃৃতির ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়েছে।

কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, লিথেনসহ ক্ষতিকর গ্যাসের প্রভাবে বায়ুমণ্ডল দূিষত হচ্ছে। তবে আশার খবরটি হচ্ছে, সবুজ বনভূমি ও বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা, আগ্রহ এবং বৃক্ষরোপণ প্রবণতা আগের তুলনায় বেড়েছে।

জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। আগামী প্রজন্মের কথা চিন্তা করে নিকটস্থ জেলা ও উপজেলার নার্সারি বা বৃক্ষমেলা থেকে চারা সংগ্রহ করে আপনিও ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা লাগিয়ে লাভবান হতে পারেন। এ ছাড়া সারা দেশে এখন চলছে বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং বৃক্ষমেলা। এসব বৃক্ষমেলায় জনগণের ভিড় প্রমাণ করে দেশের মানুষের মধ্যে বৃক্ষপ্রীতি আগের তুলনায় বেড়েছে।

এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গ্রামের মানুষ এখন গাছকে তার ‘সামাজিক বীমা’ হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। তাই গাছের ফল, জ্বালানি, পরিবেশগত সুবিধা এবং গাছের আর্থিক অবদানের জন্য বৃক্ষরোপণের প্রতি মানুষ উৎসাহিত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে নতুন প্রকল্প গ্রহণকালে প্রাকৃতিক জলাধার সৃষ্টি ও তা সংরক্ষণ এবং অধিকহারে বৃক্ষরোপণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি দেশের নাগরিকদের প্রত্যেককে কর্মস্থলে ও বাসস্থানে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে সন্তানদেরও এই পরিবেশবাদী কাজ শেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০১৯ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

জানা গেছে, বন বিভাগ উপকূলে নতুন জেগে ওঠা চরসহ ফাঁকা জমিতে গাছ লাগানোর বিষয়টিকে দেশে জনপ্রিয় করে তুলতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছে। ফলে বনের বাইরেও গ্রামের মানুষ বাড়ির চারপাশে, পতিত জমিতে, পুকুর ও নদীর পাড়ে, ফসলের জমির আইলে বৃক্ষরোপণ করছে। বিশেষত ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাণিজ্যিকভাবে ফলবাগান করার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে বন বিভাগ ও গ্রামীণ জনগণের যৌথ উদ্যোগে সামাজিক বনায়নের পরিধিও বাড়ছে। বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের প্রচেষ্টায় বৃক্ষের প্রতি মানুষের দরদ লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।  শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বাড়ছে বৃক্ষরোপণ প্রবণতা। শহরাঞ্চলে বাড়ির ছাদে, বারান্দা, করিডোর এমনকি জানালার কার্নিশে  ফল, ফুল, ভেষজ গাছ লাগানোর পরিমাণ বেড়েছে। আরো আশাবাদের বিষয় হলো, শহরের মানুষ শৌখিনতায় হলেও ঘরের ভেতরে ছায়া-উপযোগী বৃক্ষের শোভায় গৃহসজ্জায়ন করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রবণতার সুফল মানুষই ভোগ করবে।

অন্যদিকে দেশে প্রাকৃতিক বনভূমি যখন সংকুচিত হয়ে আসছে, তখন এর বিপরীত প্রবণতায় বনের বাইরে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণও ক্রমেই বাড়ছে। পরিবেশবিদদের মতে, বৃক্ষের পরিবেশ ও অর্থনৈতিক মূল্য, কমিউনিটি উদ্যোগ এবং সরকারের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির ফলে লোকালয়ে গাছের সংখ্যা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও বন বিভাগের একটি যৌথ গবেষণায় দেখা  গেছে, ২০০০ সাল  থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে বনের বাইরে নতুন করে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা বেড়েছে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গেছে, ৫০ বছর বয়স্ক একটি ফল গাছ তার সারা জীবেন মানুেষর যে উপকার করে তার আর্থিক মূল্য ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। আবার পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, সুস্বাস্থ্যের জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ১১৫ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার। কিন্তু প্রয়োজন ও প্রাপ্তি ব্যবধানের কারণে আমরা মাত্র ৪০-৪৫ গ্রাম ফল খেতে পারছি। অপরপক্ষে যদি ফলজ বৃক্ষরোপণ করে আমরা সমৃদ্ধ ফলবাগান গড়ে তুলতে পারি তাহলে আমরা দেশীয় ফল থেকে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারব। এজন্য আমাদের বেশি বেশি ফলের গাছ লাগাতে হবে। ফলদ বৃক্ষ পরিবেশ রক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আবার ওষুধ তৈরির জন্য ভেষজ গাছের প্রয়োজন। তাই বনজ ও ফলদ গাছের পাশাপাশি  ভেষজ গাছও লাগাতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads