জয়নুল হক
ত্রিশালে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও যৌন হয়রানি বন্ধের জন্য ব্যাপক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে আলোকবর্তিকায় পরিণত হয়েছেন ত্রিশাল উপজেলার মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা জান্নাতুন ফেরদৌস। যার কারণে ইতোমধ্যেই মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের কর্মকর্তা হিসেবে তিনি ‘জনপ্রশাসন পদক-২০১৮’ লাভ করেছেন। তিনি জাতীয় পর্যায়ে জনপ্রশাসন পদকপ্রাপ্ত একমাত্র নারী ব্যক্তিত্ব। মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তিনি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, যৌন হয়রানি বন্ধের জন্য সময়নিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন। ত্রিশাল উপজেলা সভাপতি ইউএনও আবুজাফর রিপনের নেতৃত্বে সদস্য সচিব হিসেবে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের জন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘বাল্যবিবাহ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ব্রিগেড (বাযৌপ্রবি)’ গঠন করেন। যা সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেয়। ত্রিশাল উপজেলাধীন ধলা স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রাইভেট প্রোগ্রাম হিসেবে ‘Prevention is better than cure’ স্লোগানকে সামনে রেখে ৩১ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে ১০ সদস্য নিয়ে এই ব্রিগেড কার্যক্রমের পথচলা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ আরো ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৩৬ সদস্য নিয়ে উপজেলাব্যাপী ব্রিগেড গঠন করা হয়।
বর্তমানে ১৮টি ব্রিগেডে মোট ১৮৬ সদস্য সমন্বয়ে সমগ্র ত্রিশাল উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও যৌন হয়রানি বন্ধে নিয়মিত উঠান বৈঠক, ক্লাস ক্যাম্পেইন, শ্রমজীবী-পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ নানা সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে। পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থ এক লাখ টাকা তিনি ব্রিগেড টিম গঠনের জন্য অনুদান হিসেবে দিয়েছেন, যা দিয়ে পাঁচটি ব্রিগেড টিম গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৫টি বাল্যবিয়ে বন্ধ ও কয়েকটি যৌন হয়রানি প্রতিরোধ করে প্রশংসিত হয়েছে এ ব্রিগেড দল।
ব্রিগেডের কাজ সম্পর্কে ময়মনসিংহ বিভাগের কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন বলেন, বিয়ের দিন আমরা অভিযান চালিয়ে বিয়ে বন্ধ করলে সামাজিকভাবে যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয় তা থেকে মুক্তি পেতে এ ব্রিগেডের কার্যক্রম একটি মাইলফলক।
এ বিষয়ে মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের পরিচালক মো. আতাউর রহমান বলেন, জান্নাতুন ফেরদৌসের কাজ প্রশংসনীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রাপ্ত জনপ্রশাসন পদক অধিদফতরের জন্য গৌরবের বিষয়। অন্যরা তার কাজকে দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করলে বাল্যবিয়ে ও যৌতুকের বিষয়টি দেশব্যাপী কমে আসবে, সুতরাং তার কাজ অনুসরণ করা উচিত অন্য কর্মকর্তাদের। পদক পাওয়ায় অধিদফতরের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানান।
সদাহাস্যোজ্জ্বল জান্নাতুন ফেরদৌস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। সম্মান পর্যায়ে তিনি ‘স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় বড় পুকুরিয়া কয়লাখনির প্রভাব একটি সমাজতাত্ত্বিক সমীক্ষা’ শিরোনামে রিসার্চ মনোগ্রাম সম্পন্ন করেন।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা জান্নাতুন ফেরদৌস বাল্যবিয়ে ও যৌন হয়রানিমুক্ত সমাজ গঠনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, ত্রিশাল উপজেলায় বাল্যবিয়ে এবং যৌতুক প্রথা রোধে আমাদের এই ব্রিগেড অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, সারাদেশে এমন কার্যক্রম চালু করা গেলে বাল্যবিয়ে ও যৌতুক প্রথা আরো কমিয়ে আনা সম্ভব। তিনি তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, আমি সমাজের নারী-পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করে যেতে চাই। সমাজে এখনো নারীরা পিছিয়ে আছে, তাদের কল্যাণে আমি সবসময় কাজ করে যাচ্ছি। সামনের দিনগুলোতেও করে যাব। সমাজের নানা কুসংস্কার দূর করে নারী-পুরুষের মিলিত এক সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি আমি। আমি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই। এর জন্য দেশের সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।