বাংলাদেশে রান্নায় কমবেশি ছয় ধরনের ভোজ্যতেল ব্যবহূত হয়। চার দশক আগেও সরিষা ছিল প্রধান ভোজ্যতেল। নব্বই দশক থেকে পাল্টে যেতে থাকে তেলের ব্যবহার। ধীরে ধীরে প্রধান ভোজ্যতেল হিসেবে জায়গা করে নেয় সয়াবিন ও পামতেল। এরই মধ্যে সবচেয়ে বেশি বা ৫২ শতাংশ চলে পামতেল। বাজারে ৩৮ শতাংশ অংশীদারি নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সয়াবিন তেল। সরিষার তেল ও ধানের কুঁড়ার তেল মিলে ৯ শতাংশ বাজার দখল করে নিয়েছে। পঞ্চম অবস্থানে আছে সূর্যমুখী তেল। এই তেলের অংশীদারি দশমিক ২ শতাংশ। ভোজ্যতেলের বাজারে সূর্যমুখী তেলের অংশীদারি খুবই সামান্য। সয়াবিনের চেয়ে দাম দ্বিগুণের কমবেশি হলেও এই তেলের চাহিদা বাড়ছে সবচেয়ে বেশি হারে।
গত পাঁচ বছরের আমদানির তথ্য অনুযায়ী, বছরে গড়ে ৩৭ শতাংশ হারে বাড়ছে সূর্যমুখী তেল আমদানি, যেখানে একই সময়ে সয়াবিন ও পামতেলের চাহিদা বাড়ার হার সাড়ে ৭ শতাংশের মতো। সুস্থ থাকার জন্য মানুষের খাদ্যাভ্যাসে যে পরিবর্তন ঘটছে, তারই প্রভাব পড়েছে ভোজ্যতেলের বাজারেও। এক দশক আগেও সূর্যমুখী তেলের বোতল দেখা যেত সুপার শপ আর অভিজাত দোকানের তাকে। শহরের অভিজাত শ্রেণি ছিল এই তেলের মূল গ্রাহক। এখন শহরে বাড়ির পাশের দোকানের তাকেও ঠাঁই পাচ্ছে এই তেল। স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে অভিজাত শ্রেণির পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও নিয়মিত বা মাঝেমধ্যে রান্নার তালিকায় রাখছেন এই তেল। প্রচলিত তেলের চেয়ে হএদরোগে ঝুঁকি কমায়, পুষ্টিবিদদের এমন পরামর্শেও রান্নার তেল হিসেবে তা জায়গা করে নিচ্ছে। নতুন নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়ে বেড়ে যাচ্ছে এই তেলের চাহিদা।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বাজারে বোতলজাত সূর্যমুখী তেল আসছে আটটি দেশ থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হচ্ছে ইতালি, মালয়েশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক, স্পেন, গ্রিস, সাইপ্রাস ও রাশিয়া থেকে। গত অর্থবছরে বন্দর দিয়ে সূর্যমুখী তেল আমদানি হয় ৫৪ লাখ কেজি বা ৫৯ লাখ লিটার। পাঁচ বছর আগে আমদানি হয় প্রায় ১৯ লাখ কেজি বা ২১ লাখ লিটার। এ হিসাবে প্রায় ৪৬ কোটি থেকে বাজার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটিতে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য, গত মৌসুমে বিশ্বে ২০ কোটি টন ভোজ্যতেল উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে সূর্যমুখী তেলের পরিমাণ ১ কোটি ৯৭ লাখ টন। এর অর্ধেকের বেশি উৎপাদিত হয় ইউক্রেন ও রাশিয়ায়।