মুক্তমত

বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে

  • প্রকাশিত ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০

আতিয়া ফাইরুজ ঐশী

 

 

 

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। ২০২১ সালের মধ্যে একাধিক লক্ষ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যও গ্রহণ করা হয়েছে, যা ভিশন-২০২১ নামে খ্যাত। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে সামনে রেখে বহু উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে, উদাহরণস্বরূপ সমপ্রতি বাংলাদেশ সরকারের অদম্য প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ও স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর কাজও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ছুটে চলা অনাকাঙ্ক্ষিত কোভিড-১৯ এর থাবা সত্ত্বেও এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ কিন্তু এই উন্নয়নের স্থায়িত্ব কতদিন, যদি বিশাল এই জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে! নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যই যদি হতে থাকে আকাশচুম্বী তবে দারিদ্র্যের হানায় উন্নয়ন তো বাড়ির জানালা দিয়ে পালাবে!

বাঙালির প্রধান খাদ্যই ভাত। দারিদ্র্য যখন সব কেড়ে নেয়, তখন পেটের শান্তির জন্য শুধু চাল সেদ্ধ করেও খাওয়া যায় কিন্তু সেই চালই যদি মানুষের গলা কাটতে শুরু করে তবে মানুষ বাঁচবে কীসের ওপর ভিত্তি করে? সম্প্রতি চালের বাজারের দিকে তাকালে মনে হয় যেন চালের মূল্য স্বর্ণতুল্য। বিগত কয়েক মাসে চালের দামের দিকে লক্ষ করলে, গত জানুয়ারি ২০২০-এ মোটা চালের কেজি ছিল ৩২-৩৫ টাকা, মাঝারি চালের কেজি ছিল ৪০-৪৩ টাকা ও মিনিকেট চালের কেজি ছিল ৫৬-৫৮ টাকা। সেই চালই গত সেপ্টেম্বরে এসে মোটা চাল হয় ৪০-৪২ টাকা কেজি, মাঝারি চাল হয় ৫২-৫৪ টাকা কেজি ও মিনিকেট চালের দাম তুলনামূলক কম বেড়ে হয় ৫৭-৫৮ টাকা কেজি। ডিসেম্বর মাসের দিকে এসে দেখা যায় সেই মোটা চালের দাম আরো বৃদ্ধি পেয়ে হয় কেজিপ্রতি ৫০-৫২ টাকা, মাঝারি চালের দাম হয় কেজিপ্রতি ৫৬-৫৮ টাকা ও মিনিকেটের দাম আগের দামকে হার মানিয়ে হয় ৬৫ টাকা কেজি। চালের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে তেলের দামও। যেখানে জানুয়ারি ২০২০-এ তেল ছিল লিটারপ্রতি ১০০-১০৫ টাকা, মার্চে এসে হয় লিটারপ্রতি ১১০-১১৫ টাকা, জুন থেকে সেপ্টেম্বরে দাম কিছুটা কমলেও নভেম্বরে এসে আবার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে যা ডিসেম্বরে এসে হয় লিটারপ্রতি ১২০ টাকা। তা সত্ত্বেও মিলমালিকরা তেলের দাম নাকি আরো বৃদ্ধি করতে চান বলে শোনা যায়। আরো একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি লক্ষ করা যায় আলুর বাজারে। বাংলাদেশের মতো একটি দেশ যেখানে আলুর উৎপাদন এত বেশি, সেদেশের মানুষকেই যদি পকেট কাটা মূল্যে আলু কিনে খেতে হয় তবে এ শোক আর প্রকাশের অপেক্ষা রাখে না।

ডিএই’র একটি হিসাব অনুযায়ী গত ২০১৮-১৯-এ আলুর উৎপাদন ছিল ৯৬.৫৫ লাখ টন এবং ২০১৯-এর জুলাই মাসের একটি হিসাব অনুযায়ী আলুর দাম ছিল ২০-২৫ টাকা কেজি। কিন্তু ২০১৯-২০-এ যেখানে আলুর উৎপাদন বেড়ে হয়েছিল ১০৯ লাখ টন, সেখানে ২০২০-এর জুলাই মাসের একটি হিসাব অনুযায়ী আলুর দাম হয় কেজিপ্রতি ৩৫-৪০ টাকা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, হিমাগারে রাখা আলুর মৌসুমের কেনা দাম, হিমাগার ভাড়া ও অন্যান্য খরচ মিলে প্রতি কেজি আলুর হিমাগার গেটে দাম পড়ে ১৮ টাকা ৯৯ পয়সা। সে হিসাবে হিমাগার থেকে ২০ টাকা বিক্রিতেই লাভবান হতে পারেন হিমাগার মালিকরা। ফলে হিমাগার পর্যায়ে মুনাফা যোগ করে আলুর দাম ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে মুনাফাসহ ২৫ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে মুনাফাসহ সর্বোচ্চ ৩০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এই দাম বাড়িয়ে হিমাগারে প্রতি কেজি আলু ২৭ টাকা দরে, পাইকারি ৩০ টাকা ও খুচরা কেজিপ্রতি ৩৫ টাকায় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অথচ দাম নির্ধারণ করে দেওয়া সত্ত্বেও গত নভেম্বরে আলুর দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৪০ টাকা যা ডিসেম্বরে এসে কিছুটা কমলেও ৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত ঠেকেছে যা নির্ধারিত দামের চাইতে অনেক বেশি। তাই আলুর বাজারে এ ধরনের উত্থান-পতনের সুনির্দিষ্ট কারণ কী! আর শুধু চাল-তেল-আলুই নয় বরং অন্যান্য দ্রব্যের দামেও এ ধরনের উত্থান-পতন পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের মানুষ যদি তাদের আয়সীমার মধ্যে খেয়ে বাঁচতেই না পারে তবে বাহ্যিক উন্নয়ন দিয়ে তারা কতটা লাভবান হবে এটা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। খাদ্য মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি চাহিদা।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারী মানুষের আয়-রোজগারের ওপর যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে শুধু স্বল্প বা মধ্যবিত্ত নয় বরং অনেক উচ্চবিত্তরাও তাদের পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এর ওপর যদি মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম এমন লাগামহীনভাবে ধাবমান হতে থাকে তবে তো দেশের সাধারণ জনগণ খাদ্য মজুত থাকা সত্ত্বেও দুর্ভিক্ষে ভুগবে। পক্ষান্তরে লাভবান হবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, যারা সবসময় অনৈতিক কাজের সুযোগসন্ধানী। খাদ্যদ্রব্যের দামের এমন ধাবমান গতির পথে বাধা দেওয়ার জন্য সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বাজার তদারকি করা ও আইনের কঠোর প্রয়োগে অসাধু ব্যবসায়ী ও কুচক্রীদের নির্মূল করতে হবে। খাদ্য উৎপাদনে আরো অধিক বিনিয়োগ, উৎপাদন ও মজুত বাড়াতে হবে। জনগণের আয়সীমার মধ্যে খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads