ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি এবং নতুন মৌসুমের চাল আসায় গত দুই সপ্তাহে পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি দাম কমেছে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা। পাইকারি পর্যায়ে কমলেও খুচরা বাজারে কিন্তু তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। এদিকে, ঈদুল ফিতরের পর রাজধানীর বাজারে আবারো বেড়েছে পেঁয়াজ-রসুন, আলু ও ডিমের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা, রসুনের ৭ টাকা, আলুর ২ থেকে ৪ টাকা এবং হালিপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা। তবে দাম কমেছে মুরগি, গরুর মাংস ও সবজির।
রাজধানী এবং খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বাজার পরিস্থিতির এমন চিত্র দেখা গেছে। খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে মাত্র ২-৩ টাকা কমেছে। অথচ কেজিতে কমপক্ষে ৫-৭ টাকা কমার কথা ছিল। এক্ষেত্রে পুরোনো চালের তুলনায় নতুন চালের দাম কিছুটা কম। গত প্রায় এক বছর ধরে দেশের চালের বাজার অস্থির সময় পার করেছে। বোরো মৌসুমে বাজারে নতুন চাল আসতে শুরু করলে বাজার নিম্নমুখী হতে থাকে। তবে নতুন চালের বাজার কমলেও পুরোনো চালের দাম আগের মতোই বাড়তি অবস্থায় স্থির রয়েছে।
সরকারিভাবে আমদানির সুযোগ বাড়ানো, শুল্ক কমানো ছাড়াও দেশব্যাপী ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রি ও সরবরাহ বাড়ানোর ফলে বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে আশা ছিল বাজারে নতুন চাল আসার পর দাম কমবে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন আসা ৫০ কেজির স্বর্ণা সিদ্ধ চালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও পুরোনোটা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ টাকায়। গুটি সিদ্ধ, মোটা সিদ্ধ, মিনিকেট, পারি সিদ্ধ, জিরাশাইল ও নাজিরশাইলের নতুনের তুলনায় পুরোনো চালের দাম প্রতিটি ৫০ কেজির বস্তায় দেড়শো থেকে আড়াইশো টাকা বেশি। একইভাবে আতপ চালের মধ্যে নতুন আসা বেতি চালে প্রতি বস্তায় প্রায় ৪০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার এক খুচরা দোকানি জানান, হয়তো চালের মূল মোকামে দাম কমেছে। কিন্তু আমরা যেসব আড়ত থেকে চাল কিনি তারা দাম না কমালে আমরা কীভাবে কমাবো। তবে উত্তর বাড্ডার আড়তদাররা জানান, মূলত খুচরা দোকানদাররা সব সময়ই বেশি লাভ করে। এদিকে, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা আমদানি বন্ধ থাকাকে দায়ী করেছেন। আর রসুন, আলু এবং ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য আড়তদারদের দায়ী করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। এছাড়া চীন থেকে আমদানি করা রসুন রাজধানীর বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ১১২ টাকা থেকে ১১৫ টাকা কেজিতে। অথচ দুদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকা কেজিতে। তবে দেশি রসুন ৬০-৭০ টাকা দরেই বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও গত সপ্তাহে ১৮০ টাকা পাল্লায় বিক্রি হওয়া সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পাল্লায়। অর্থাৎ, সাদা আলুর পাইকারি দাম ১৯-২০ টাকা কেজি। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২২-২৫ টাকা কেজিতে।
ব্রয়লার মুরগির ডিমের হালি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা হালিতে। তবে চড়াদামে দেশি হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা হালিতে।
হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মধ্য বাড্ডার ব্যবসায়ী রাইসুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আনা বন্ধ এমন অজুহাতে দাম বাড়ছে। গত তিনদিন ধরেই ৪২ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করছি পেঁয়াজ। আব্দুর রহিম নামের আরেক ব্যবসায়ী জানান, পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে সাত টাকা। ঈদের আগে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৪০-৪২ টাকা কেজিতে। এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৪৫ টাকা কেজিতে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজিতে। রামপুরা কাঁচাবাজারে বাছাই করা ভালো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে, আমদানি করা (চায়না) রসুনের দাম বেড়েছে ৫ টাকা।
এদিকে, ঈদের পরপরই সবজির দাম চড়া থাকলেও বর্তমানে কিছুটা কমতে শুরু করেছে তা। কোনো কোনো সবজি কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। গত তিনদিন আগেও ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া করলা, পটল, বরবটি, ধুন্দল, ঝিঙে, চিচিংগা, কাঁকরোল এবং শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫৫ টাকা কেজি দরে। আর ঢ্যাঁড়স, বেগুন, পেঁপে এবং টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজিতে। অন্যান্য সবজির পাশাপাশি লাউ এবং জালি কুমরা বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪৫ টাকা পিস। আর কিছুটা বড় ও ভালো মানের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা পিস। এছাড়াও পাটশাক, পুঁইশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা আঁটি।