বাচ্চা ফুটল মহাবিপন্ন মদনটাকের

শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মহাবিপন্ন মদনটাক দুটি বাচ্চা ফুটিয়েছে

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বাংলাদেশ

শেখ মুজিব সাফারি পার্ক

বাচ্চা ফুটল মহাবিপন্ন মদনটাকের

  • রেজাউল করিম সোহাগ, শ্রীপুর
  • প্রকাশিত ৫ নভেম্বর, ২০১৮

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মহাবিপন্ন মদনটাক দুটি বাচ্চা ফুটিয়েছে। এর আগে গত বছর আবদ্ধ পরিবেশে প্রথমবার এ সাফারি পার্কে চারটি  মদনটাকের বাচ্চা জন্ম নেয়। বছর ঘুরেই আবার দুই দিনে আরো দুটি বাচ্চার জন্ম হয়েছে। আরো এক দম্পতি তিনটি ডিমে নিয়ম করে তা দিচ্ছে। এ নিয়ে সাফারি পার্কে দুইবার মদনটাকের বাচ্চা ফুটল।

বৃহদাকৃতির জলচর পাখি মদনটাক। জলবায়ু পরিবর্তন, বাসস্থান বিনষ্ট হয়ে যাওয়াসহ খাদ্যচক্রের সমস্যার কারণে মহাবিপন্ন এ পাখি। সিঙ্গাপুর ও চীন থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে পাখিটি। তবে বাংলাদেশে বড় নদ-নদী ও সুন্দরবনে মাঝেমধ্যে দেখা মেলে বিপন্নপ্রায় এ মদনটাকের। এমন পরিস্থিতিতে মদকটাকের ছানা ঘিরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে রীতিমতো খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড কৌতূহল আর আনন্দ দর্শনার্থীদের মধ্যেও।

সাফারি পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ সুপারভাইজার আনিসুর রহমান জানান, ডিম থেকে ফোটা মদনটাকের দুটি বাচ্চাই সুস্থ রয়েছে। বাচ্চারা ওদের মাকে ঘিরেই হাঁটাচলা করছে। বিশাল খাঁচার মধ্যেই মা-পাখি খাদ্য খুঁজে বাচ্চাদের মুখে তুলে দিচ্ছে। পাশেই আরেক দম্পতি তিনটি ডিমে তা দিচ্ছে।

তিনি জানান, মদনটাক সাধারণত তিনটি ডিমই দেয়। কখনো কখনো চারটি ডিম দেওয়ার ঘটনাও রয়েছে। ডিমে ২৮ দিন তা দেওয়ার পর বাচ্চা ফোটে। এর প্রায় তিন মাস পর বাচ্চা উড়তে সক্ষম হয়। তিনি আরো জানান, প্রজনন মৌসুম ছাড়া এরা সাধারণত একাকী চলাফেরা করে। এদের প্রজনন মৌসুম অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর।

বৃহদাকৃতির মদনটাকের সম্মুখাংশে নগ্ন বা টেকো মাথা এবং ঘাড় ছাড়াও বড় ধরনের অনুজ্জ্বল হলদে চক্ষু রয়েছে। গড়পড়তা এদের দৈর্ঘ্য ৩৪-৩৭ ইঞ্চি হয়ে থাকে। ওজন চার থেকে ৫ দশমিক ৭১ কিলোগ্রাম, পায়ের উচ্চতা ৪৩-৪৭ ইঞ্চি।

পাখি দেখভালের দায়িত্বে থাকা মো. হাসান জানান, ছোট দুটি বাচ্চা একটু পর পর মায়ের কাছে গিয়ে পালকের নিচে লুকিয়ে পড়ে। মা-পাখি ঠোঁটে মাছ তুলে নিলেই ছুটে আসছে বাচ্চাগুলো। কিছু সময় পর পর মা-পাখিও বাচ্চাদের ঠোঁটে তুলে দিচ্ছে ছোট মাছ। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন বড় পাখির জন্য এক কেজি করে নলা, রুই, মাছ দেওয়া হয়। নিয়ম করে খাবার দেওয়া হয় মদনটাকগুলোকে। বাচ্চাসহ মদনটাক দেখে দর্শনার্থীরা খুবই আনন্দ পায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আবদ্ধ পরিবেশে মদনটাক পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটা নিঃসন্দেহে খুশির খবর। বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশেই চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এরা।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, আবদ্ধ পরিবেশে এ পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটায় এদের অস্তিত্ব রক্ষায় আশা জেগেছে। যেকোনো মূল্যে এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখা হবে। এদেরকে বড় নদ-নদী ও হ্রদ এলাকায় দেখা যায়। এদের আবাসস্থল ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, লাওস, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়া। সিঙ্গাপুর ও চীনে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এ মদনটাক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads