বাংলাদেশে পবিত্র কোরআনের ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম

আল-কোরআন : ডিজিটাল-এর বাংলা ভার্সনের কার্যক্রমও সুসম্পন্ন হয়েছে

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

বাংলাদেশে পবিত্র কোরআনের ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম

  • প্রকাশিত ৫ অক্টোবর, ২০১৮

প্রফেসর ড. এ. কে. এম. ইয়াকুব হোসাইন

ইসলামের একমাত্র ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে আল-কোরআন। এটি ঐশীবাণী বা মহান আল্লাহর বাণী। জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ওপর এটি নাজিল হয়। ৬ হাজার ৬৬৬টি আয়াতসহ মোট ১১৪টি সুরা রয়েছে আল-কোরআনে। কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় যেভাবে ছিল, এখনো সেভাবেই আছে। এর কোনো বিন্দু-বিসর্গও পরিবর্তন হয়নি। অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের মতো এতে কোনো বিশেষ অধ্যায় নেই। প্রথম মানব এবং মানবজাতির আদি পিতা হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত যেসব আসমানি কিতাব, সহফি এবং প্রত্যাদেশ নাজিল হয়েছে, এর ধারাবাহিকতায় শেষ ও চূড়ান্ত  আসমানি কিতাব হচ্ছে আল-কোরআন। এরপর আর কোনো কিতাব নাজিল হবে না এবং তার প্রয়োজনও দেখা দেবে না। আল-কোরআন মানব রচিত বা সাহিত্যকর্ম সৃষ্টির কোনো সাদৃশ্য গ্রন্থ নয়; বরং স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল এক অকল্পনীয় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত মহাগ্রন্থ।

মহাগ্রন্থ আল-কোরআন বিশুদ্ধ উচ্চারণে তেলাওয়াত করা বা তেলাওয়াত করার চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ। আল-কোরআনে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন, ‘আপনি তারতিল তথা বিশুদ্ধভাবে কোরআন পাঠ করুন।’ (সুরা আল মুজজাম্মিল, আয়াত: ০৪ )

আল-কোরআনের পঠন-পাঠনের পাশাপাশি এই পবিত্র ধর্মগ্রন্থটি সংরক্ষণ করাও আবশ্যকীয় দায়িত্ব। মহান আল্লাহ আল-কোরআনের প্রধান সংরক্ষক। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি এবং নিশ্চয়ই আমি তার হেফাজতকারী।’ (সুরা আল হিজর, আয়াত : ০৯)

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানরত বাংলাভাষীদের পবিত্র কোরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত অধিকতর সহজ ও সাবলীল করার উদ্দেশ্যে আল-কোরআন : ডিজিটাল-এর বাংলা ভার্সনের কার্যক্রমও সুসম্পন্ন হয়েছে। অনুরূপ ডিজিটাল পদ্ধতিতে আল-কোরআনের সংরক্ষণ সুনিশ্চিত করাও আল-কোরআনের ডিজিটাইজেশনের অন্যতম উদ্দেশ্য। কেননা যে কোনো পর্যায়ের বাংলাভাষী মুসলমান অতিসহজেই আল-কোরআন : ডিজিটাল-এর অডিও, ভিডিও, ডিভিডি, সিডি প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত শিখতে সক্ষম হবেন। পাশাপাশি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোরআনের ডিজিটাল সংরক্ষণ নিশ্চিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায় ও উদ্যোগ : বিশ্ববাসী বিশেষ করে বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর জন্য কোরআনের বাণী সহজ করে উপস্থাপন করা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এই প্রথম সরকারিভাবে আরবি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষাভাষী জনগণ তথা বিশ্ব দরবারে পবিত্র কোরআনের ডিজিটাইজেশন ‘আল-কোরআন : ডিজিটাল’ প্রস্তুত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদয় অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন এবং পবিত্র কোরআন ডিজিটাইজেশনের কার্যক্রম সম্পাদনের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সদয় নির্দেশনা দেন। কমিটির সদস্যরা প্রায় নয় মাস নিরলস পরিশ্রম করে পবিত্র কোরআনের বাংলা ও ইংরেজি প্রতিবর্ণায়ন ও অনুবাদের কাজ সম্পন্ন করেন। 

আল-কোরআন : ডিজিটালে যা যা রয়েছে : ‘আল-কোরআন : ডিজিটাল’-এ রয়েছে দুটি ভার্সন। একটি হলো অনলাইন ভার্সন; অন্যটি অফলাইন ভার্সন। অনলাইন ভার্সন পাওয়া যাবে www.quran.gov.bd ওয়েবসাইটে। আর অনলাইন ভার্সনের সবকিছুই পাওয়া যাবে অফলাইন ভার্সন তথা অডিও ভিজ্যুয়াল ডিভিডিতে। এছাড়া অফলাইন ভার্সন যার একটিতে শোনা যাবে কোরআনের আরবি তেলাওয়াত, বাংলা অনুবাদ ও ইংরেজি অনুবাদ। অন্য অডিও ডিভিডিতে রয়েছে কোরআনের আরবি তেলাওয়াত, বাংলা অনুবাদ ও ইংরেজি অনুবাদ। এছাড়া অন্য একটি অডিও ডিভিডিতে রয়েছে কোরআনের আরবি তেলাওয়াত ও ইংরেজি অনুবাদ।

আল-কোরআন ডিজিটাল-এর শুভ উদ্বোধন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  নির্দেশনার কারণেই ‘আল-কোরআন : ডিজিটাল’-এর এ মহতী উদ্যোগ গৃহীত ও পরিসমাপ্ত হয়েছে। গত ১০ আগস্ট ২০১২, ২৬ শ্রাবণ ১৪১৯, ২১ রমজান ১৪৩৩ হিজরি রোজ শুক্রবার এতদুদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ‘আল-কোরআন : ডিজিটাল’-এর ওয়েবসাইট (www.quran.gov.bd) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া এমপি।

লেখক : আহ্বায়ক, আল-কোরআন ডিজিটাল বাস্তবায়ন কমিটি

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads