বাংলাদেশের সাদা স্বর্ণ ‘রাবার’

ফাইল ছবি

কৃষি অর্থনীতি

বাংলাদেশের সাদা স্বর্ণ ‘রাবার’

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আমাদের দেশের রাবারশিল্প ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে রাবারশিল্প ইতোমধ্যে বিশেষ অবদান রাখতে শুরু করেছে। দেশের রাবারশিল্প মালিকরা লাভের মুখ দেখছেন। দেশে উৎপাদিত রাবার দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। রাবার দিয়ে প্রধানত গাড়ির চাকার টায়ার, টিউব, জুতার সোল, স্যান্ডেল, ফোম-রেক্সিন, হোমপাইপ, গাম, খেলনা, শিল্পকারখানার দ্রব্যসামগ্রী, চিকিৎসাশাস্ত্রের বিভিন্ন সামগ্রীসহ গৃহস্থালি কাজে ব্যবহূত বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী তৈরি হচ্ছে। রাবার দিয়ে তৈরি হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার ধরনের দ্রব্যসামগ্রী। রাবার চাষের উদ্যোক্তাদের দাবি, বাংলাদেশের রাবার বিশ্ব মানের। আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদাও ভালো। বাংলাদেশে মোট ৭০ হাজার একর জমিতে এখন রাবার চাষ হচ্ছে। পার্বত্য এলাকায় ৩১ হাজার একর জমিতে সরকারি বাগান এবং বাকি ৩৯ হাজার একর জমিতে রাবার চাষ হয় বেসরকারি উদ্যোগে। বাংলাদেশে বছরে ১৫ হাজার টন রাবার উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে বিদেশে রপ্তানি করা হয় কমবেশি ৪ হাজার টন। বিশ্বব্যাপী রাবারের তৈরি পণ্যের ব্যবহার ও চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে এ পণ্যের একটা বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এ বাজারে আধিপত্য বিস্তারে বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশেরও অন্যতম রাবার রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। রাবার গাছ থেকে উৎপাদিত রাবার ছাড়াও রাবার গাছকে প্রক্রিয়াজাত করে মূল্যবান আসবাবপত্র তৈরির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।

রাবার বাগান মালিক এবং রাবার বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন এক বিবৃতিতে বলেন, রাবারশিল্প মূলত বিদেশ থেকে এ দেশে এসেছে। ১৯১০ সালের কলকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে রাবার গাছের চারা এনে চট্টগ্রামে বারমাসিয়া ও সিলেটের আমু চা বাগানে লাগানো হয়। দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৫৪ সালের দিকে বন বিভাগ টাঙ্গাইলের মধুপুর চট্টগ্রামের হাজারীখীল ও তেঁতুলিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে কিছু রাবার চারা রোপণ করা হয়। এভাবে আমাদের দেশে রাবার চাষের গোড়াপত্তন ঘটে। পরবর্তীসময়ে ১৯৫৪ সালের দিকে বাংলাদেশে রাবারের বাণিজ্যিক চাষে সম্ভাবনা যাচাই করার জন্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বিশেষজ্ঞ ইউলিয়াম লয়েডকে দায়িত্ব দিলে তিনি তার সমীক্ষায় এ দেশের জলবায়ুও পাহাড়ি এলাকার মাটি বাণিজ্যিক রাবার চাষের উপযোগী বলে এর চাষের অনুকূলে রিপোর্ট দেন। তার সুপারিশের ভিত্তিতে বন বিভাগ ১৯৬০ সালে ৭১০ একরের একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে কক্সবাজারের রামু, আর চট্টগ্রামের রাউজানে যথাক্রমে ৩০ এবং ১০ একর বাজার সৃজনের মাধ্যমে এ দেশের বাণিজ্যিক রাবার চাষ শুরু করেন।

গাছের দুধ-কষ থেকে প্রাকৃতিক রাবার তৈরি

প্রাকৃতিক রাবার হলো রাবার গাছ (ঐবাবধ নৎধংরষরবহংরং) বা একই পরিবারের (ইউফর্বিয়েসি—ঊঁঢ়যড়ৎনরধপবধব) এবং ডুমুর (ঋরম) পরিবারের কয়েকটি গাছের জমাটবাঁধা তরুক্ষীর (খধঃবী)। রাসায়নিকভাবে রাবার হলো বহু আইসোপ্রিন (ওংড়ঢ়ৎবহব) এককজুড়ে তৈরি দীর্ঘ জৈবপলিমার। রাবার গাছের দুধ-কষ থেকে প্রাকৃতিক রাবার তৈরি হয়। এই গাছের কাণ্ডের ছালে কোনাকুনিভাবে কাটা কয়েক মিলিমিটার গভীর গর্ত থেকে কষ সংগ্রহ করা হয়। গাছের প্রয়োজন পর্যাপ্ত রৌদ্রসহ উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ু। সাধারণত ২ বছর বয়সি গাছ থেকে প্রথম কষ সংগ্রহ শুরু হয়। হেক্টরপ্রতি ২৫০টি গাছই যথেষ্ট। লাগানো গাছের মধ্যে কিছুটা ফাঁক থাকা প্রয়োজন, যাতে নিচে নানা জাতের উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ আলো পৌঁছায়। গাছপ্রতি বছরে গড়পড়তা উৎপাদন প্রায় ২ কিলোগ্রাম রাবার। মধ্যম আকৃতি রাবার গাছের কাণ্ড লম্বা, পাতা পুরু ও গাঢ় সবুজ। গাছের বৃদ্ধি ও জাত অনুযায়ী রাবার উৎপাদনে তারতম্য ঘটে। হেক্টরপ্রতি বার্ষিক গড় উৎপাদন প্রায় ৫০০ কিলোগ্রাম, গাছপ্রতি ২ কিলোগ্রাম। কিন্তু উচ্চফলনশীল জাতও আছে। এতে বার্ষিক ফলন হয় হেক্টরপ্রতি প্রায় ২ হাজার ২০০ কিলোগ্রাম। রাবার গাছ সাধারণত ৩২-৩৪ বছর বয়সে উৎপাদন আয়ু শেষ করে। আয়ু অতিক্রান্ত গাছগুলো কেটে পুনরায় বাগান সৃষ্টি করা হয়। এসব গাছ থেকে গড়ে ৫-৮ ঘনফুট গোল কাঠ পাওয়া যায়।

রাবার উৎপাদন এবং  রাবার বাগান

প্রাপ্ত তথ্যানুযযায়ী, সারা দেশে ১৩০৪টি বেসরকারি রাবার বাগান  রয়েছে। সারা দেশে ৩২৬২৫ একর জমিতে রাবার চাষ করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ২৪০০০ টন রাবার উৎপন্ন হচ্ছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৬০০ কোটি টাকা। অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৬৭-৬৮ সালে বাণিজ্যিকভাবে দেশে প্রথম বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফআইডিসি) শূন্য দশমিক ৭ টন রাবার উৎপাদন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭২-৭৩ সালে ৫৫ টন, ১৯৭৮-৮৯ সালে ৪২৯ টন রাবার উৎপাদিত হয়। ২০০৮-০৯ সালে বিএফআইডিসি প্রায় ৬ হাজার ১০০ টন এবং প্রাইভেট সেক্টরে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ টন রাবার উৎপাদিত হয়েছে। বিএফআইডিসির উৎপাদিত রাবার খোলা টেন্ডারে প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ওই হিসাবে কেবল ২০০৮-০৯ সালে দেশে উৎপাদিত ১১ হাজার ৬০০ টন রাবারের গড় বিক্রয়মূল্য ২৫৫ কোটি টাকা। ২০০৯-২০১০ সালে দেশে রাবারের চাহিদা ছিল ৪৪ হাজার ৪০০ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয়েছ ১৩ হাজার ৫০০ টন এবং আমদানি হয়েছে ৩০ হাজার ৯০০ টন। বর্তমানে দেশে ২৪ হাজার টন রাবার উৎপন্ন হচ্ছে। এর বর্তমান বাজারমূল্য ৬০০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে সরকারি রাবার বাগান ১৮টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জোনে নয়টি, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ জোনে পাঁচটি, সিলেট জোনে চারটি বাগান রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে প্রায় ৭০ হাজার একর ভূমিতে রাবার চাষ হয়। দেশে বছরে ১৬ থেকে ২০ হাজার টন রাবার উৎপাদন হয়। আর দেশীয় বাজারে এ পণ্যের চাহিদা বছরে ৩০ হাজার টন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে রাবার চাষ হচ্ছে। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে-চট্টগ্রামের রামু, রাউজান, ডাবুয়া, হলুদিয়া, কাঞ্চন নগর, তারাখো, দাঁতমারা, সিলেটের ভাটেরা, সাতগাঁও, রূপাইছড়া, শাহী বাজার, ময়মনসিংহের মধুপুর, শেরপুর, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এলাকাসহ লামার বিস্তীর্ণ এলাকা। ২০১২ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে রাবারের চাহিদা ৩% হারে বাড়ছে, যার চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ৭%।  বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ রাবার উৎপন্ন হচ্ছে তা অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে ২০ হাজার টন রাবার বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। একটি পরিসংখ্যনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর বিদেশে রাবার রপ্তানি করে একশত কোটি থেকে দেড়শ কোটি টাকা আয় করেছে। বর্তমানে দেশের রাবারশিল্পের স্বার্থে বিদেশ থেকে রাবার আমদানি বন্ধ করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। রাবার বাগান মালিকরা রাবার উৎপাদনে সফলতা করতে রাবার চাষিদের স্বার্থ সংরক্ষণ উৎপাদিত রাবারের মান উন্নয়ন, বিপণন, ভবিষ্যতে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করা এবং রাবারের আন্তর্জাতিক মূল্যের সাথে সমন্বয় করে দেশীয় রাবারের বাজার মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার স্বার্থে জাতীয় রাবার নীতি ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন। রাবার শিল্পের উন্নয়নে রাবার গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন করাও প্রয়োজন।

ন্যায্যমূল্য পান না চাষিরা

আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে রাবার চাষিদের বিশেষ রপ্তানি সুযোগ এবং ভর্তুকি সুবিধাসহ সহজশর্তে ঋণ প্রদান এবং উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে অনুদান প্রদান করে যেখানে রাবার চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে, যা আমাদের দেশে এখনো সম্ভব হয়নি। অনুসন্ধানে জানা যায়, রাবার উৎপাদনে ইন্দোনেশিয়া সবার শীর্ষে রয়েছে। সে দেশে রাবার চাষের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে সেখানে রাবারশিল্প দিন দিন উন্নতি লাভ করছে। এদিকে আমাদের দেশের রাবারশিল্পে বিরাজ করছে অজস্র সমস্যা। আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে রাবার উৎপন্ন হওয়া সত্ত্বেও প্রতি বছর বিদেশ থেকে রাবার আমদানি করা হচ্চে। এ কারণে আমাদের দেশের রাবারশিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পদে পদে। বিদেশি রাবারে বাজার সয়লাব হয়ে থাকায় দেশি রাবারের বাজার চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে না। দেশি রাবার অবিক্রীত থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাবার চাষ করে রাবারচাষিরা ন্যায্যমূল্য পান না।

আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে

প্রাকৃতিক কাঁচা রাবার আমদানির ক্ষেত্রে ব্যয়িত কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। রাবার গাছ রোপণের পর ৬ বছর পরিচর্যা শেষে ৮ম বছরে উৎপাদনে আসে এবং ২৫ বছর অব্যাহত উৎপাদন দেওয়ার পর ৩২-৩৩ বছর বয়সে গাছগুলো অর্থনৈতিক জীবনচক্র হারায়। ঐসব গাছ কেটে প্রাপ্ত কাঠ প্রক্রিয়াজাতকরণের পর শক্ত ও টেকসই ১ম শ্রেণির পর্যায়ের কাঠ হতে উন্নত মানের আসবাবপত্র এবং কাঠজাত সামগ্রী তৈরি করা হয়। রাবার বাগানগুলো অত্যন্ত শ্রমঘন কৃষিশিল্প হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত বাগানগুলোতে অশিক্ষিত/অর্ধশিক্ষিত নারী-পুরুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও গ্রামীণ জনপদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। কার্বন শোষণ ও মাটির ক্ষয়রোধের মাধ্যমে রাবার বাগান পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

ধ্বংসের পথে সম্ভাবনাময় শিল্প

মূলধনের অভাব, অবকাঠামো দুর্বলতা, জমির স্বল্পতা ও যথাযথ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে রাবার চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন দেশের উদ্যোক্তারা। ফলে দেশীয় পর্যায়ে এর উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। তা ছাড়া বিদ্যুৎ, গ্যাস ও কাঁচামাল স্বল্পতায় রাবারশিল্প মালিকরা পারছেন না চাহিদা অনুযায়ী রাবার পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করতে। অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে গাছ টেপিং করায় গাছের উৎপাদন ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। রাবারশিল্পের উন্নয়নে বোর্ড মিটিংগুলোয় শ্রমিক প্রতিনিধি রাখার বিধান থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা মানছে না। ফলে বাগানের উন্নয়নে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কোনো পরামর্শ প্রদান করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া বাগানের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে শূন্যপদ পূরণসহ দক্ষ লোকবল যথাযথ স্থানে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। দেশের মাটিতে সাদা স্বর্ণের (রাবার) বিপ্লব ঘটলেও দরপতনের কারণে রাবারশিল্প বর্তমানে হুমকির মুখে। জনবলের অভাবে সংকটে পড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিবহনের অভাব ও রাবার পাচার। নানা সমস্যায় দিন দিন ধ্বংসের পথে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় এ শিল্প। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ শিল্পটি বাঁচাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সময়োপযোগী কোনো পদক্ষেপ নেই। যথাযথ পরিচর্যা করলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে রাবার রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। রাবার বাগান মালিকরা রাবার উৎপাদনে সফলতা আনতে রাবারচাষিদের স্বার্থ সংরক্ষণ, উৎপাদিত রাবারের মান উন্নয়ন, বিপণন, ভবিষ্যতে রপ্তানি সুযোগ সৃষ্টি করা এবং রাবারের আন্তর্জাতিক মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশীয় রাবারের বাজারমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার স্বার্থে জাতীয় রাবারনীতি ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন। রাবারশিল্পের উন্নয়নে রাবার গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন করারও প্রয়োজন রয়েছে।

বড় শিল্পে হিসেবে পরিণত হতে পারে

ভৌগোলিক সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের পক্ষে অন্যতম রাবার রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। রাবার আমদানিকারক পশ্চিমা দেশগুলোর গন্তব্য আগে হওয়ার কারণে তাদের অনেকেরই সহজ গন্তব্য হতে পারবে বাংলাদেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি রাবারের ভালো চাহিদা রয়েছে। রাবার বাগান মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ হাজার টন রাবার উৎপাদনের ক্ষমতা থাকলেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে উৎপাদিত হচ্ছে মাত্র ১৫ হাজার টন। আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য প্রায় ৭ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। প্রতি মাসে ৫০০ টন রাবার রপ্তানির অর্ডার পাওয়া গেলেও উৎপাদন ঘাটতির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।  অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্বে প্রাকৃতিক রাবারের মোট চাহিদার ৯৪ শতাংশ পূরণ করে এশিয়া। এর মধ্যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে উৎপাদন হয় ৭২ শতাংশ। বাংলাদেশের রাবার যেসব দেশে রপ্তানি হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আফগানিস্তান, বেলজিয়াম, সেন্ট, চীন, মিসর, ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, ফিজি, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, ভারত, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মরিশাস, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, নেপাল, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, কাতার, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনাম। আশার খবর, সরকার রাবার চাষের উন্নয়ন ও গবেষণায় নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে সাধারণ মানুষ পাহাড়ি ও সমতল ভূমিতে রাবার চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। আমাদের দেশের গবেষক ও বিজ্ঞানীরা সফল গবেষণার মাধ্যমে রাবার গাছের উন্নত প্রজাতি উদ্ভাবনে সাফল্য দেখিয়েছেন। ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ রাবার বোর্ড গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রামে রাবার চাষের সম্ভাবনা ও গুরুত্ব বেশি থাকায় চট্টগ্রামেই রাবার বোর্ডের সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়েছে।

লেখক : কৃষি-অর্থনীতি বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads