আজব খবর

বদলে গেল কেজির সংজ্ঞা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৮ নভেম্বর, ২০১৮

পরিমাপের জগতে শুরু হলো বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ভরের একক কিলোগ্রামকে (কেজি) ধরে যার সাপেক্ষ পরিমাপ নির্ধারণ করা হতো বা সংজ্ঞায়িত হতো, সেটি বদলে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানী ড. ব্রায়ান কিবল ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ মাপার তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে ভরের এককের নতুন একটি সংজ্ঞা বাতলে দিয়েছেন। শুক্রবার ফ্রান্সের ভার্সাইয়ে ওজন ও মাপ নির্ণয়বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিজ্ঞানীরা কিলোগ্রামের নতুন এ সংজ্ঞার সমর্থনে রায় দিয়েছেন।

এ পরিবর্তনের ফলে এখন থেকে একটুকরো সংকর ধাতু নয়, কিলোগ্রামকে সংজ্ঞায়িত করা হবে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের আলোকে। বিবিসি জানিয়েছে, গাণিতিকভাবে ভরের একক নির্ণয়ের পদ্ধতি ঠিক হওয়ায় এখন যে কোনো স্থান থেকে, যে কোনো সময় কিলোগ্রামের ওজন পাওয়া যাবে। তবে বাজারে চাল বা চিনি কিনতে গিয়ে এই পরিবর্তনের কারণে কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না।

শিল্প বিপ্লবের পরে শিল্পায়নমুখী অর্থনীতির বিশ্বায়নের প্রয়োজনে বিকশিত হয় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, প্রসারিত হয় বাণিজ্য। প্রসারমাণ সেই বাণিজ্যকে বৈশ্বিক পর্যায়ে ঝামেলামুক্ত করার কাজে এগিয়ে এলেন বিজ্ঞানীরাও। পদার্থবিদরা বললেন, বাণিজ্যকে বৈশ্বিক করতে হলে পণ্য পরিমাপের একটা সর্বজনীন একক দরকার। আর অর্থনীতিবিদরা বললেন, বিনিময়ের জন্য অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য মুদ্রা। সেই প্রয়োজন থেকেই ১৮৮৯ সাল থেকে পণ্য পরিমাপের বৈশ্বিক একটা মান নির্ধারণ করা হয়। প্লাটিনাম ও ইরিডিয়াম ধাতুর সংকরে তৈরি একটি বাটখারাকে প্রমাণ ধরে শুরু হলো পণ্য পরিমাপ। অর্থাৎ সংকর ধাতুর ওই বাটখারার ভরটিকেই পরিমাপের প্রমাণ একক এক কেজি ধরা হতো। ‘লা গ্রঁদ কে’ নামের বাটখারাটির ছিল একটি পোশাকি নামও। বিজ্ঞানীরাই সেটির নাম দেন ইন্টারন্যাশনাল প্রোটোটাইপ কিলোগ্রাম। পৃথিবীর সর্বত্র একই ওজন ব্যবস্থা প্রচলনের জন্য ওই ধাতবখণ্ডের রেপ্লিকা বানিয়ে তা দেশে দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আর প্রতি দশকে অন্তত একবার ওই ‘লা গ্রঁদ কে’ ও রেপ্লিকাগুলোর ভর মাপা হতো। তবে দশকের পর দশক ধরে ‘ল্য গ্রঁদ কে’র সঙ্গে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা রেপ্লিকাগুলোর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তারতম্য পাওয়া যাচ্ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সে প্রমাণও পান বিজ্ঞানীরা। এরই প্রেক্ষিতে এমন একটি পদ্ধতি খোঁজা হচ্ছিল, যাতে এ ধরনের শঙ্কা থাকবে না। তবে সেই শঙ্কার অবসান ঘটালেন ব্রায়ান কিবল। নোবেলজয়ী জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ মাপার তত্ত্বের ধ্রুবক ‘এইচ’ (প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক)-এর নির্ভুল মান পাওয়ার দিশা দিলেন তিনি। তার সুপার-অ্যাকুরেট সেট অব স্কেল ব্যবহার করে পাওয়া গেল ০.০০০০০১ শতাংশ নির্ভুল এইচ। এই এইচের একক হচ্ছে কিলোগ্রাম বর্গমিটার পার সেকেন্ড। হিসাবটির ভেতরেই কিলোগ্রাম থাকায় কেবল আয়তন আর সময়ের হিসাব পেলেই নির্ধারণ করা যাবে ভরের নতুন একক।

এ আবিষ্কার সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ফিজিকস ল্যাবরেটরির (এনপিএল) পেরডি উইলিয়ামস বলেন, এটি একটি অসাধারণ ঘটনা ও অনবদ্য মুহূর্ত। এ পদ্ধতি অনেক ভালো কাজ করবে বলে মনে হচ্ছে আমার। এনপিএলের আরেক বিজ্ঞানী ইয়ান রবিনসন বলেন, চমৎকার অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে এটিই সঠিক সিদ্ধান্ত। এতে সাধারণের দৈনন্দিন ওজন মাপামাপিতে পরিবর্তন আসবে না। তবে এর ফলে ওষুধ শিল্প, ন্যানো টেকনোলজি ও ধাতব সংমিশ্রণে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads