জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার ঘনিষ্ট সহচর, যশোর সদর উপজেলার জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক খোকন এবং বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত সিঙ্গিয়া স্টেশনের ইতিহাস ভুলতে চলেছে বর্তমান প্রজন্ম। তাই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিমাখা স্টেশনের ঐতিহ্য তুলে সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, কলকাতার পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) যশোর সদর উপজেলার জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের বাসিন্দা আজহারুল হক চাকুরি সূত্রে কলকাতায় অবস্থান করতেন। তার বড় ছেলে আজিজুল হক খোকন ১৯২২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার চাকুরির সুবাদে এবং কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়াশোনার করার কারণে প্রায় যশোর সিঙ্গিয়ার রেল স্টেশন থেকে ট্রেনযোগে কলকাতায় যেতেন। এসময় তিনি থাকতেন কলকাতার বেকার হোস্টেলে। বেকার হোস্টেলে থাকার সুবাদে এবং ট্রেনযোগে সিঙ্গিয়া স্টেশন থেকে কলকাতায় যাতায়াতের সুবাদে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আজিজুল হক খোকনের পরিচয় হয়। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে কালনাঘাট হয়ে সিঙ্গিয়া স্টেশনে আসতেন। সেখান থেকে কলকাতায় যেতেন। সিঙ্গিয়া স্টেশনে বিজয় ময়রা, ভোলা ময়রা, আতাউর রহমান আতা মিয়ার টি স্টলে বসতেন বঙ্গবন্ধু। এক পর্যায়ে তারা সবাই বঙ্গবন্ধুর ভক্ত হয়ে যান। আজিজুল হক খোকন, মাঝে মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে তাদের জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতেন। যাওয়ার সময় খোকনও মাঝে মধ্যে টুঙ্গিপাড়ায় যেতেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালে আজিজুল হক খোকন বসুন্দিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর সিঙ্গিয়া স্টেশন থেকে কলকাতায় যাতায়াতের সময় আরেকজন থাকতেন, তিনি হলেন কলকাতার হাইকোর্টের আইনজীবী জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের বাসিন্দা জমিদার সুরেশ চন্দ্র বসু। ২০১১ সালে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর আজিজুল হক খোকন ২০০৮ সালে মারা গেলে তাকে জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
প্রেমবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাকিম সিঙ্গিয়া স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু কলকাতায় যাতায়াত করতেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজাড়িত সিঙ্গিয়া স্টেশনটি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি সংরক্ষণ করা বিশেষ প্রয়োজন।
জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের আফজাল হোসেন মনি, মাতব্বর আবুল কাশেম জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতায় যাতায়াত করতেন জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি সুলতান মোল্যা, উজির মোল্যা, এরাদত মোল্যা, লতিব মোল্যা, কিব্বার শেখ, ইব্বার শেখ জীবিত থাকা অবস্থায় টি-স্টলে বসে গল্প করতেন এবং এই স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতায় যাতায়াত করতেন।