হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকস বিভাগের শিক্ষকদের গবেষণায় কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পুকুরেই জনপ্রিয় খরকি মাছের পোনা উৎপাদন ও ক্রস-ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে জাত উন্নয়নের কার্যক্রমে সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বৈজ্ঞানিক এই সফলতার মাধ্যমে সুস্বাদু ও জনপ্রিয় খরকি মাছের চাষ ও উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজের নেতৃত্বে একদল গবেষক প্রায় তিন বছর গবেষণা করে দিনাজপুরসহ ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারীর জনপ্রিয় মাছ খরকি পুকুরেই চাষ করে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন ও ক্রস-ব্রিডিং করে জাত উন্নয়নে সাফল্য অর্জন করেছেন। গবেষণা দলের প্রধান ড. ইমরান পারভেজ বলেন, খরকি মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ঈরৎৎযরহঁং ৎবনধ (ঐধসরষঃড়হ ১৮২২) এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে খরকি মাছ পরিচিত। ময়মনসিংহ অঞ্চলে ভাগ্না এবং যশোর অঞ্চলে টাটকিনি নামে পরিচিত। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশে খরকি মাছ একসময় প্রচুর পাওয়া যেত। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে খরকি মাছ আজ হুমকির সম্মুখীন হওয়ায় এ প্রজাতির মাছের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যায়। হুমকির সম্মুখীন এই মাছকে ফিরিয়ে আনতে পুকুরে কৃত্রিম উপায়ে পোনা উৎপাদন ও পোনার লালন-পালনের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পটিতে প্রধান গবেষক ড. ইমরান পারভেজকে সহযোগী গবেষক হিসেবে সহযোগিতা করেন প্রভাষক মৌসুমী সরকার ছন্দা, ড. মাহবুবুল হাসান ও অনুষদীয় শিক্ষকরা।
দিনাজপুর, বগুড়া, ময়মনসিংহ ও যশোর থেকে জীবিত খরকি মাঝের মা-বাবা মাছ সংগ্রহ করা হয় এবং এবং এদের মধ্যে মরফোলজিক্যাল ও জেনেটিক পার্থক্য নিরূপণ করা হয়। ওই গবেষণা থেকে দেখা যায়, এরা একই প্রজাতির মাছ হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের মধ্যে পার্থক্য বজায় রাখছে। চারটি স্টকের মধ্যে জেনেটিক বৈচিত্র্যতার দিক থেকে দিনাজপুর ও ময়মনসিংহের পপুলেশন অন্যতম। গবেষণায় দেখা যায়, একই প্রজাতির মাছ হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের মধ্যে এরা পার্থক্য বজায় রাখে, তাই বিভিন্ন এলাকার মাছের মধ্যে ইন্টার ও ইন্ট্রা ব্রিডিং করানো হয়। গবেষণায় দেখা যায় দিনাজপুরের মহিলা মাছ ও ময়মনসিংহের পুরুষ মাছের মধ্যে প্রজনন ঘটালে তারা সবচেয়ে ভালো ফল দেয়।
প্রধান গবেষক ড. ইমরান বলেন, নিষিক্ত ডিম ফুটে রেণু পোনা বের হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর প্রথম খাবার হিসেবে সিদ্ধ ডিমের কুসুম পানিতে দ্রবণ তৈরি করে প্রদান করা হয়েছে। এ অবস্থায় ৭ দিন লালন-পালন করা হয়। সাত সপ্তাহ তিন ধরনের খাবার প্রদান করে সবচেয়ে উপযুক্ত খাবার নির্বাচন করা হয়। গবেষণা শেষে দেখা যায়, শতকরা ৩২ ভাগ প্রোটিনযুক্ত খাবার নিয়মিতভাবে প্রদান করার মাধ্যমে খুব দ্রুত পোনা উৎপাদন করা সম্ভব। অপর এক গবেষণায় চারা পোনা উৎপাদনের জন্য মাছের মজুত ঘনত্ব নির্ণয় করা হয়। দেখা যায়, প্রতি হেক্টর পুকুরে আড়াই লাখ ৭-১০ দিন বয়সী রেণু পোনা মজুত করলে সবচেয়ে বেশি বর্ধন ও বাঁচার হার পাওয়া যায়।
প্রকল্পটির সফলতার জন্য বর্তমানে কিছু বিশেষ গবেষণা কার্যক্রম, যেমন- কৃষিকাজে ব্যবহূত কীটনাশক মাছের জাইগোটের বৃদ্ধিকে কীভাবে ব্যাহত করে, লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেলে এই মাছের স্পার্মাটোজোয়া কীভাবে এর গতি হারিয়ে ফেলে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এর বৃদ্ধির কী অবস্থা হয় তার ওপর কাজ চলছে।