প্রেস কনফারেন্সে মির্জা আব্বাস দম্পতি।

নির্বাচন

ফলাফল যাই হোক নির্বাচন বর্জন করলেন মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাস দম্পতি

  • মো. আসিফ উল আলম সোহান
  • প্রকাশিত ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ নিজ আসনে ভোটের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, তা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাস দম্পতি।
রোববার বিকেল ৪টায় রাজধানীর শাহজাহানপুরে নিজ বাসায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন আব্বাস দম্পতি। তখনও কেন্দ্রে ভোট চলছিল।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে না, সেই নির্বাচন দেশের জন্য প্রয়োজন নেই। এ ধরনের নির্বাচন যদি আগামীতে হয়, তাহলেতাতেও অংশগ্রহণ করব না।’


‘এই নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক আমরা বর্জন করছি,’ বলেন বিএনপির এই হেভি ওয়েট প্রার্থী। কেন আপনি নির্বাচন বর্জন করছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা আব্বাস বলেন ‘আজকে সমগ্র বাংলাদেশের যে চিত্র, এরকম একটা কিছু হবে এটা আমাদের মত বাংলাদেশের প্রায় সবারই জানা। আমরা দেখেছি এই নির্বাচন ঘিরে জনগণের একটা আকাঙ্খা ছিল, ভোটের প্রতি একটা আগ্রহ ছিল, দীর্ঘদিনে ভোটের অধিকার হারা এই জনগনের অধিকার ফিরে পাবার যে তাগিদ আমরা তাদের চোখেমুখে দেখেছিলাম সেটিকে সম্মান দেখিয়ে আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম, কিন্তু জনগণের সেই আগ্রহ ভূলুণ্ঠিত হয়েছে সেই অনুভুতিকে হত্যাকরেছে এই আওয়ামী সরকার।
সারা বাংলাদেশের মত আমাদের ঢাকা ৮ এবং ৯ আসনে সম্ভাব্য যারাই পোলিং এজেন্ট হতেপারে বলে মনেকরেছে, সরকারের বাহিনী দিয়ে তাদের সবাইকে আগেই গ্রেফতাঁর করিয়েছে। এরকম গ্রেফতারের ঘটনা ঘটতে পারে ভেবেই আমরা তিনটা গ্রুপে পোলিং এজেন্ট রেডি করেছিলাম।

Screenshot_20181230-012405_Facebook

প্রথম এবং দ্বিতীয় গ্রুপের সবাইকে তারা গ্রেফতার করে নিয়ে যাবার পর থার্ড গ্রুপটা খুব গোপনে করেছিলাম, তাই এটা আর তারা ধরতে পারেনি। এই থার্ড গ্রুপের পোলিং এজেন্টরা যখন আজকে সকালে কেন্দ্রে যায় তাদের প্রথমে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

এরপর ১০টার দিকে আমাদের কর্মীরা যেয়ে তাদের ঢুকিয়ে দিলেও ১২ টার মধ্যেই তাদেরকে মেরে জোরজবরদস্তি সাদা রেজাল্টশিটে সাইন করিয়েরেখে কেন্দ্রথেকে মেরে বের করে দেয়। দুজন মহিলা তাদের রেজাল্ট শিটে সাক্ষর নাকরে বেরিয়ে চলে এসেছিল, পরবর্তীতে আওয়ামী সন্ত্রাসীবাহিনী ঐ দুজনের বাড়ীতে গিয়ে পরিবারকে জিম্মি করে রেখে রেজাল্ট শিটে সাক্ষর করিয়ে নিয়ে যায়।

আমি যখন আপনাদেরকে প্রেসকনফারেন্সের আমন্ত্রন জানাই তখন আমি মানশিক ভাবে খুবই আহত ছিলাম। আমার বোন সমতুল্য একজন মহিলা এবং আমার নিজের সন্তানের মত একজন মেয়ে এই দুর্দিনে সাহস করে পোলিং এজেন্ট হয়েছে। আমি তাদের কাছে সত্যি খুব ঋণী, আর মনটা ভারাক্রান্ত একারনে যে এই মেয়ে দুজনের সাথে জঘন্ন্যতম আচরন করেছে আওয়ামীলীগের পেটোয়া বাহিনীর লোকজন। মেয়ে দুটোর শরীরে হাত দেওয়া হয়েছে, চুল ধরে টেনে হিঁচড়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এরা আমার সংগে কথা বলতে যেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে, আমিও আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি ।
ভোট কেন্দ্রে আর আমাদের একজনও এজেন্ট অঅবশিষ্ট নাই। রেজাল্ট শিটে সবার সাক্ষর রেখে মেরে বের করে দিয়েছে। গত রাতেও বিভিন্ন কেন্দ্রে আগে থেকেই ব্যালট পেপারে সিল মেরেছে এবং আমি যাতে বের হয়ে ঠেকাতে না পারি সেজন্য আমার বাড়ির চারদিক পুলিশ, ডিবি, আনসার দিয়ে ঘিরে আমাকে আবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। অন্যকেউ বের হলেই গ্রেফতার করছিল, আপনারা  সেই বিষয়ে অবগত আছেন এবং গনমাধ্যমে নিউজও হয়েছে।
এসময় দুজন মহিলা পোলিং এজেন্ট তাদের সাথে ঘটে যাওয়া অত্যাচারের বর্ণনা করেন সাংবাদিকদের সামনে।

মির্জা আব্বাস আরো বলেন 'আমাদের ছেলে এজেন্টদের ঘাড় ধরে মারতে মারতে গেট দিয়ে বের করেছে। কারো মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে রেখে মেরেছে। কাওকে পিস্তলের বাট দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে,।বাচ্চা একটা ছেলেকে মেরে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। দুপুর ২টার মধ্যে ঢাকা ৮ ঢাকা ৯ আসনের সব কেন্দ্র থেকে আমাদের সব এজেন্টদেরকে মেরে বের করে দেওয়া হয়।
এর আগে সকালে ভোটকেন্দ্র থেকে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া ও ভোটারদের বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেরা ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দুই ধানের শীষ প্রার্থী।

উল্লেখ্য বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর মির্জা আব্বাস মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার উদ্দেশে মির্জা আব্বাস এবং আফরোজা গিয়ে দেখতে পান ভোট কেন্দ্রে ঢোকার মুল ফটকে শতাধিক ভোটার ভেতরে ঢুকতে চাইছে কিন্তু তাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছেনা। মির্জা আব্বাস দম্পতিকে দেখামাত্রই সবাই এসে তাদের ঘিরে ধরে হাতের ভোটার স্লিপ এবং আইডি কার্ড দেখিয়ে অভিযোগ করেন যে ঘণ্টার পর ঘন্টা তারা অপেক্ষা করছেন কিন্তু তাদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছেনা। অভিযোগ শুনে মির্জা আব্বাস তাদের বলেন আপনার একটু দাড়ান আমি ভোটটা দিয়ে আসি, তখন ভোট দিতে আসা মহিলা ভোটাররা বলে আমরা ভোট দিতে পারছিনা আপনারা ভোট দিবেন? আমরা সবাই আপনার সাথে ঢুকে ভোট দিব। তখন মির্জা আব্বাস নিজে ভোট না দিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারে সাথে কথা বলে অভিযোগ করলেও কোন সমাধান না পেয়ে বের হয়ে আসার সময় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা আব্বাস বলেন 'আমার এলাকার এইযে সম্মাানিত বয়স্ক সিনিয়র সিটিজেন এত কষ্টকরে ভোট দিতে এসেছে, তাদের ভোট দিতে দিচ্ছেনা, মা–বোনরা ঘড়-সংসার বাচ্চা রেখে ভোট কেন্দ্রে ঘন্টার পর ঘন্টা হয়রানির স্বীকার হচ্ছে তাও নিজের ভোটটা দিতে দিচ্ছেনা, সেখানে আমরাও আর ভোট দিয়ে কি করবো। আমরা ভোট দিব না। 

কেন্দ্রে এসেও ভোট দিতে পারেনি এরকম অনেকেই 


সংবাদসম্মেলনে উপস্থিত এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী রাশেদ খান মেনন অভিযোগ করেছেন যে আপনি মিথ্যে বলেছেন যে আপনি ভোট দেননি। এই বিষয়ে আপনার মতামত কী? সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আফরোজা আব্বাস তাঁর দুহাত দেখিয়ে বলেন ভোট দিলেতো হাতে কালি থাকবে ভাই। দেখেন আমাদের হাতে আমোচনীয় কালি কোঁথায়? আর তাছাড়া আমাদের সাথে সেখানে আপনারাওতো ছিলেন। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া মিলে প্রায় ১৫-১৬ জন সাংবাদিক ছিলেন আপনারা দেখেছেন কি ঘটেছে সেখানে। গতকাল রাত থেকে ওরা ব্যালট পেপারে সিল মারছে, আজকে সকালে কিছুক্ষণ ওরা যখন দেখল বেশির ভাগ ভোটই কাস্ট হচ্ছে  ধানের শীষে। এর পরেই শুরু করে ভোট ডাকাতি। আমাদের সকল লোকদের বেরকরে দিয়ে দরজা বন্ধকরে সিল মারা শুরুকরে। আমাদের নায়িন্টি পার্সেন্ট কেন্দ্রে এজেণ্টকে বেরকরে দিয়ে ওরা নিজেরাই সিল মেরেছে। কাজেই আমারা যখন দেখলাম ওরা সবার ভোটই নিজেরাই সিল মেরে নিয়ে নিচ্ছে তাহলে আমরা আর বাকি থাকবো কেন। আমাদের দুজনের ভোটতাও তারা নিজেরাই সিল মেরে দিয়ে দিক। সেজন্য আমরা ভোট না দিয়ে চলে এসেছি।
এসময় মির্জা আব্বাস বলেন ‘আমি আর কি বলব ভাই কচুরি পানা পানির উপর ভাসে, এদের কোন স্থায়িত্ব নাই আর এদের কথারও কোন স্থায়িত্ব নাই। সত্যিকথা বলতেও এরা শেখেনি। যারা মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত তাদের থেকে সত্যকি আশা করা যায়? আপনারইতো ছিলেন সেখানে আমাদের সাাথে। আমি শুধু বলবো আর কত? এবার চোখটা বন্ধকরে বুকের ভেতর হাত রেখে নিজের বিবেকের কাছে নিজেই প্রশ্ন করুণ যদি বিবেক মরে যেয়ে না থাকে ভেতর থেকেই এর সঠিক উত্তর পেয়ে যাবেন।

উল্লেখ্য সকাল ৮টা থেকে সারা দেশে একযোগে ভোট শুরু হয়। আজ ২৯৯টি আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল থেকে কিছুক্ষণ সুষ্ঠু ভোট হলেও দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে বলে অভিযোগ এসেছে বিএনপির পক্ষ থেকে। এর পর থেকেইদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রার্থীদের ভোট বর্জনের ঘোষণা আসতে থাকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads