পড়ার জন্য বইয়ের কোনো বিকল্প নেই: নাহিদ হাসান রবিন

ফাইল ছবি

ফিচার

পড়ার জন্য বইয়ের কোনো বিকল্প নেই: নাহিদ হাসান রবিন

  • প্রকাশিত ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

নাহিদ হাসান রবিন, সম্পাদক ও গল্পকার। সম্পাদনা করেন সাহিত্য ভাবনার ছোটকাগজ ‘অপরাজিত’ ও গল্পবিষয়ক পত্রিকা ‘পারাপার’। সম্প্রতি দেশের দুজন কথাকারকে ‘পারাপার গল্প পুরস্কার’ও প্রদান করেছেন। রাজধানী থেকে দূরবর্তী জেলা শহর বগুড়ার শেরপুর থেকে এই নিরলস সাহিত্যকর্মী ও লেখক ছোটকাগজের নানা বিষয় নিয়ে একান্ত আলাপচারিতা করেন বাংলাদেশের খবর-এর ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতির খবর’-এর সঙ্গে।

প্রশ্ন : কবে কীভাবে ছোটকাগজ সম্পাদনা শুরু করছেন?

নাহিদ হাসান রবিন : ছোটকাগজ সম্পাদনা শুরু করেছি ২০১০ সালে। আমার লেখালেখির শুরুটা নব্বই দশকের প্রথম দিকে। তখন বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটা ছোটকাগজে লিখতাম। মাঝখানে দীর্ঘ বিরতি। নতুন করে শুরু করি ২০০৮ সালে। তখন নিজের লেখা প্রকাশের জন্য সেরকম কোন পত্র-পত্রিকায় জায়গা পাইনি। দু-একটা ছোটকাগজেই লিখতাম। তখন বুঝতে পেরেছিলাম, নতুনদের জন্য ছোটকাগজই একমাত্র পথ। সেই ভাবনা থেকে কয়েক বন্ধু মিলে ২০১০ সালে সাহিত্য ভাবনার ছোটকাগজ ‘অপরাজিত’ প্রকাশনা শুরু করি। মাত্র দু-একটা সংখ্যা প্রকাশ হওয়ার পরই বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে ‘অপরাজিত’ বেশ পরিচিতি লাভ করে। দেশের কয়েকটি সংগঠন থেকে ‘অপরাজিত’ সম্মাননা লাভ করে। বেড়ে যায় দায়িত্ব। নতুনদের সঙ্গে ‘অপরাজিত’র পাতায় প্রকাশ হতে থাকে প্রথম সারির লেখকদের লেখা। যে সাহস নিয়ে প্রকাশনা শুরু করেছিলাম, তা বৃথা যায়নি। ১২ বছরে প্রকাশ পেয়েছে ‘অপরাজিত’র ২৫টি সংখ্যা। প্রকাশনার বাইরে ‘অপরাজিত’ প্রতিবছর অনেক লেখককে সম্মাননা দিতে সক্ষম হয়েছে। এরপর ২০২১ সালের জুন মাসে শুরু করি ‘পারাপার’ নামক গল্পবিষয়ক আরেকটি পত্রিকা। মাত্র ৮ মাসে ‘পারাপার’-এর ৪টি সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে। ‘পারাপার’ কর্তৃক প্রথমবারের মতো দুজন গল্পকারকে পুরস্কার প্রদান করা হলো।

প্রশ্ন : ‘অপরাজিত’ ও ‘পারাপার’-এর মাধ্যমে তরুণদের কেউ মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরেছে কী?

নাহিদ হাসান রবিন : নিশ্চয় পেরেছে। আমি তাদের নাম বলছি না। তবে অনেক লেখকের প্রথম লেখাটি ‘অপরাজিত’তে প্রকাশ পেয়েছে। তাদের অনেকেই আজ মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরেছে। অনেকেরই মৌলিক গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে। সর্বোপরি বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে একজন লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের সার্থকতাটা এখানেই।

প্রশ্ন : তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ছোটকাগজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

নাহিদ হাসান রবিন : আমরা অনেকেই মুখে বলে থাকি, অনলাইনের যুগে কেউ বই পড়ে না, অনলাইনেই সবাই পড়ে। আসলে এই কথার সঙ্গে আমি একমত না। অনলাইনে সব পাওয়া গেলেও, তা পড়া হয়ে ওঠে না কারোরই। যদি তাই হতো তাহলে পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তে অনলাইনে পড়ার ব্যবস্থা থাকতো। আসলে পড়ার জন্য দরকার একেবারে নিরিবিলি একটা সময়। যা মোবাইল ফোনে বা কম্পিউটারে সম্ভব না। পড়ার জন্য বইয়ের কোনো বিকল্প নেই, কোনদিন থাকবেও না। পড়ার জন্য দরকার বই, একমাত্র বই এবং শুধুই বই।

প্রশ্ন : ছোটকাগজ সম্পাদনায় নিজের লেখার ওপর কোনো প্রভাব পড়ে কি?

নাহিদ হাসান রবিন : মোটেও না। বরং আমি মনে করি সম্পাদনা করলে অনেক লেখা পড়া যায়। যেখান থেকে নিজের লেখার আগ্রহটা আরও বেশি বেগবান হয়।

প্রশ্ন : লেখা সংগ্রহ ও প্রকাশনা ব্যয়ের জন্য বেগ পেতে হয় কেমন?

নাহিদ হাসান রবিন : লেখা সংগ্রহ করতে প্রথম দিকে অনেক বেগ পেতে হতো। তরুণরা নিজ থেকে লেখা দিলেও, প্রতিষ্ঠিতরা লেখা দিতে চাইতেন না। আবার কিছু প্রতিষ্ঠিত লেখক আছেন, যারা বলার সঙ্গে সঙ্গেই লেখা দিতেন। তাদের দু-একজনের কথা না বললেই না। বাংলা সাহিত্যের অতি পরিচিত মুখ কবি ওমর আলী, বজলুল করিম বাহার, মাহমুদ কামাল, ফরিদ আহমদ দুলাল, গোলাম কিবরিয়া পিনু, রোকেয়া ইসলাম, মনি হায়দার, সমীর আহমেদ, চন্দন আনোয়ার অন্যতম। তাদের কাছে লেখা চাইলে কখনো না শব্দটি শুনতে হয়নি। এছাড়া পরবর্তী সময়ের অনেকেই আছেন, তারাও চাইলেই লেখা দেন। এখন অবশ্য লেখা সংগ্রহ নিয়ে মোটেও বেগ পেতে হয় না। আর প্রকাশনা ব্যয়ের যে বিষয়টি, তা হলো এমন— কোনো ভালো কাজ টাকার জন্য থেমে থাকে না। আমাদের প্রকাশনাও থেমে নেই। লেখক-পাঠকদের ভালোবাসায় প্রকাশনা চলছে, আগামীতেও চলবে।

প্রশ্ন : আপনার ‘অপরাজিত’ ও পারাপার’-এর জন্য রইলো শুভকামনা। আপনার লেখক-জীবন সমৃদ্ধ হোক।

নাহিদ হাসান রবিন : বাংলাদেশের খবর-এর পাঠকদের জন্য আমার শুভেচ্ছা। আপনাদেরও সমৃদ্ধি কামনা করি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads