জীবনে অনেকেই অনেক কিছু হতে চায়। কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউবা ইঞ্জিনিয়ার। আবার কেউ কেউ শিক্ষক। তবে কারো যদি সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন থাকে; অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সেই সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করে নিজের স্বপ্নকে সত্যি করতে পারবে যে কেউ। ইতোমধ্যে অনেকেই সেই স্বপ্ন পূরণও করেছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও সাংবাদিকতায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা যাচ্ছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগে সাফল্যের সাথে সুনাম অর্জন করে চলেছে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ। ২০০৫ সালের ৮ এপ্রিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সম্প্রতি সাফল্যের ১৬ বছর পেরিয়ে ১৭-তে পা দিয়েছে এই বিভাগ। এই বিভাগেরই সাবেক শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ এখন পত্রিকায়, কেউ নিউজ প্রেজেন্টার, কেউবা মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক, আবার কেউবা ব্রডকাস্ট সাংবাদিক হিসেবে সাংবাদিকতা পেশায় সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। গ্রাম থেকে সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা এসেছিলেন সাইফুল মাসুম। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হওয়ার মধ্যদিয়ে সেই স্বপ্নের ভিত্তিও রচনা করেছেন তিনি।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাইফুল মাসুম বলেন, ‘এখানে স্বপ্ন পূরণে সহায়ক বড় একটা পরিবার পেয়েছি। চার বছরের স্নাতক কোর্সে সাংবাদিকতা বিষয়ে অনেক জেনেছি ও হাতে-কলমে শিখতে পেরেছি। পাঠ্য বইয়ের বাইরে সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়ারও সুযোগ হয়েছে।’
সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী কাশফিয়া আলম ঝিলিক বলেন, ‘কাজ করতে করতে শেখা আর আগে শিখে এসে কাজ করার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ে এরপর চাকরি ক্ষেত্রে তা কীভাবে কাজে লাগাব এটা সম্পূর্ণ নিজের ওপর নির্ভর করে। কারণ সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই বদলায় আর এই বদলের সাথে যে তাল মিলিয়ে সঠিক পথে চলতে পারলেই ভালো করা সম্ভব।’
এই বিভাগে পড়ে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। সাংবাদিকতায় পড়ার সুবাদেই গণমাধ্যমগুলোতে সহজে লেখার সুযোগ পাচ্ছি। আমি এখন বাংলাভিশনের অনলাইনে কাজ করছি। এর আগে প্রথম আলোতে কন্ট্রিবিউটিং করেছি। এই সবকিছুর পেছনেই সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী এই পরিচয় মূখ্য ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ও শিক্ষার্থী হাসান ওয়ালী।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সামিয়া আসাদি বলেন, সাংবাদিকতায় এখন থার্ড স্ক্রিন চলে আসছে। অর্থাৎ যেখানেই যাবেন সবার হাতে মিডিয়া। সাংবাদিকতা এখন একমুখী নয়, দ্বিমুখী। রিপোর্ট দেওয়ার সাথে সাথে ফিডব্যাকও দিচ্ছে পাঠকরা। সে ক্ষেত্রে সাংবাদিকতায় প্রস্তুতি ও পড়াশোনা করেই আসতে হবে।’ স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। এখানে প্রতিনিয়ত নিজেকে আপডেট রাখা জরুরি। আমাদের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত ছাত্রছাত্রীদের নতুন বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত করিয়ে দিচ্ছে। যাতে কর্ম জীবনে তারা ভালো কিছু করে। সাংবাদিকতায় পড়াশোনার বিকল্প নেই। বিভিন্ন বিষয়ে বই পড়তে হবে।’
কোথায় পড়বেন ও যোগ্যতা : স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগে ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক (অনার্স) পড়তে প্রার্থীর যোগ্যতা লাগবে এসএসসি এবং এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ ২.৫০। যে-কোনো গ্রুপের শিক্ষার্থীরা এতে ভর্তি হতে পারবে। এ ছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় পড়ার সুযোগ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘খ’ ও বিভাগ পরিবর্তনকারী ‘ঘ’ ইউনিটের মাধ্যমে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হওয়া যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা অনুষদের মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ পেতে পারেন। তাছাড়া ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ রয়েছে।
ডিপ্লোমা ও স্বল্পমেয়াদি কোর্স : প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশে (পিআইবি) রয়েছে সাংবাদিকতার ওপর এক বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করার সুযোগ। এ ছাড়া জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকতায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
খরচাপাতি : চার বছর মেয়াদি সাংবাদিকতায় স্নাতক করতে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভে প্রায় ২ লাখ টাকা লাগবে। এ ছাড়া এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করতে খরচ হবে প্রায় ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা।
যোগাযোগ : স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ডিপার্টমেন্ট অব জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ, সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা। ফোন : ০১৭৩৮৮৭৯৫৯৮, ০১৮৩৬৯৭৬৯৪১, ০১৭৬৫৭৮১১৮৮, ০১৬৭৫৬৯৪৪৮২, www.stamforduniversity.edu.bd ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ফোন : ৯৬৬১৯০০; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ফোন : ৭৫০৮১৩; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ফোন : (০৩১) ৭২৬৩১১-১৪; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ফোন : ৭১৭৬১৭১, ৭১৭৬১৭৩।
গাজী সানজিদা