মোহাম্মদ রেজুয়ানুল হক:
বাংলাদেশে শিক্ষার কয়েকটি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে প্রাথমিক স্তর একটি। প্রাথমিক শিক্ষা হলো উচ্চ শিক্ষার ভিত্তি। যারা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ পাবেনা তাদের জন্য এটি প্রান্তিক শিক্ষা। কাজেই প্রাথমিক শিক্ষা শেষে যাতে একজন ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক তথা জাতীয় জীবনে যথাযথ ভুমিকা রাখতে পারে তাই বাংলাদেশে সকল শিশুর জন্য যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রমে প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রান্তিক যোগ্যতা, বিষয় ভিত্তিক প্রান্তিক যোগ্যতা, শ্রেণিভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা, শিখনফল এভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে।
একজন শিক্ষক প্রতিটি পাঠের শিক্ষাক্রম কর্তৃক নির্ধারিত শিখনফল অর্জন করাতে বদ্ধ পরিকর। শিখনফল গুলো অর্জন করতে পারলেই শিশুর ঐ নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জন হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। যোগ্যতা হলো জ্ঞান, দক্ষতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ এ তিনের সমষ্টি। একজন শিক্ষার্থী শিখনফল অর্জন করতে পারলো কিনা তার জন্য প্রয়োজন মূল্যায়ন। শিখনফলে যে নির্ধারিত ক্রিয়াপদ গুলো থাকে যেমন- কোন কিছু বলতে পারলো বা পারলো না, লিখতে পারলো বা পারলোনা, শ্রেণিকরণ করতে পারলো বা পারলোনা ইত্যাদি আমরা মূল্যায়নের মাধ্যমে বুঝতে পারি। মূল্যায়নের মাধ্যমে শিশুর সাফল্য বা ব্যর্থতা পরিমাপ করা হয়।
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরের মূল্যায়ন পদ্ধতিকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। তারই সূত্র ধরে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ হতে প্রাথমিক স্তরে ১ম শ্রেণিতে ধারাবাহিক মূল্যায়ন শুরু হয়। বিভিন্ন পদ্ধতি বা কৌশলের মাধ্যমে পাঠের শুরুতে, পাঠ চলাকালীন, পাঠ শেষে শিক্ষার্থীকে মূল্যায়নের প্রক্রিয়াই হলো ধারাবাহিক মূল্যায়ন। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীকে প্রতিটি পিরিয়ডের জন্য মূল্যায়ন নির্দেশক জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ দেয়া থাকে তার উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করতে হয়। এটি কোন আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন নয়। এর মূল লক্ষ্য হলো মূল্যায়ন নির্দেশক অনুযায়ী মূল্যায়ন করে শিশুর শিখন দুর্বলতা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ফলাবর্তন ও পুনঃমূল্যায়ন করে শিখন অগ্রগতি নিশ্চিত করা। তাই প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের প্রতিটি পাঠ কে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলেই একজন শিশু প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। সে ভবিষ্যতে একজন দক্ষ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ঊঠবে। তাই প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে ধারাবাহিক মূল্যায়নের গুরুত্ব অপরিসীম।