প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে করণীয়

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

প্রাকৃতিক বিপর্যয় হ্রাস দিবস

প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে করণীয়

  • মো. আবু তালহা তারীফ
  • প্রকাশিত ১২ অক্টোবর, ২০১৮

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। দিগন্তবিস্তৃত বন-বনানী আর সবুজের সমারোহ এই সোনার দেশ। ফুল-ফলে শস্য-শ্যামলে ভরা এই দেশের মাঠ। আমাদের দেশের সৌন্দর্য যে কোনো পর্যটকের হূদয়ে স্থান করে নেয়। বিশ্ব ঐতিহ্য বালাদেশ সৌন্দর্যের রানি বলা হয়। এই অফুরন্ত নিয়ামত দান মহান আল্লাহর। সুন্দর এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহতায়ালা। সৃষ্টি করেছেন শুধু আমাদের জন্য। তাঁর সুন্দর সৃষ্টির যা কিছু আজ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়, সবই চোখ জুড়ায়। সাজিয়েছেন প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান দিয়ে এই ধারা। এই প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানে যা কিছু ঘটে, সবকিছু মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায়। আমরা দেখি, প্রায় সময় আমাদের প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের বিপর্যয় ঘটে থাকে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় হলো আমাদের জন্য দুঃসময়, দুর্দিন ও অশুভ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলতে আমরা বুঝি ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, প্রবল বাতাস, ভূমিকম্প, সাগরের পানি বিপদসীমায় পৌঁছানো, খাদ্যের অভাবে মানুষের মৃত্যুবরণ, কোনো মহামারীতে দেশের অসংখ্য মানুষের অসুস্থ হওয়া। সমাজে অন্যায় অনাচার বেড়ে গেলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা যায়, যা আমরা কোরআন থেকে জানতে পারি। এই বিপর্যয়কে বিপদ-আপদ বলা হয়। এর জন্য দায়ী আমরা মানুষ। যে বিপদ-আপদ আছে, তা আমাদের দুই হাতের কামাই। মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনুল করিমে সুরা শুরার ৩০ নং আয়াতে বলেন, ‘হে মানব! যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই এবং তা সত্ত্বেও আল্লাহ তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেন।’ প্রাকৃতিক বিপর্যয় কেন হয়, এর কারণ কী- সে বিষয়ে বলতে গেলে একটি হাদিস স্মরণ করা যেতে পারে। রসুল (সা.) প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, আমানতের খিয়ানত করা হবে, পিতাকে দূর করে বন্ধুকে কাছে টেনে নেওয়া হবে, মদ পান করা হবে, শেষ বংশের লোকজন তাদের পূর্ববর্তী মানুষগুলোকে অভিশাপ দেবে, তখন তারা যেন গরম বাতাস প্রবাহিত হওয়া বা ভূমিধস সংঘটিত হওয়া বা চেহারা বিকৃত হওয়ার অপেক্ষা করে।’ (তিরমিজি-৪/৯৮)

প্রাকৃতিক বিপর্যয় দিয়ে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার ঈমানি পরীক্ষা করেন। বিপর্যয়ে পড়ে বান্দা আল্লাহর ওপর ধৈর্য ধারণ করে কি-না, তা তিনি অবলোকন করেন। তার বান্দারা যখন কিছু ভুল পথে চলতে থাকে তখন বিভিন্ন বিপর্যয় দিয়ে বিপদ-আপদের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা সতর্ক করে দেন যাতে বুঝতে পারে যে তারা ভুল পথে আছে। মহান আল্লাহতায়ালা একথাই বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণেই দুনিয়ায় বিপর্যয় ও বিপদ-আপদ দেখা যায়, যাতে মানুষ তাদের কৃতকর্মের কিছু শাস্তি ভোগ করে এবং যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা রুম, আয়াত : ৪১)

আজ আমাদের দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় ও অপব্যবহার হচ্ছে। যার ফলে দূষিত হচ্ছে জলবায়ু, বেড়ে গেছে ভূমিকম্প, গাছ কেটে উজাড় করে দেওয়ার ফলে আজ আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পশুপাখিসহ হাজারো জীব। প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই এই সম্পদ অপচয় করা যাবে না। কেউ অপচয় করলে তাকে বারণ করতে হবে।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে রসুল (সা.) বিচলিত হয়ে পড়তেন। আল্লাহতায়ালার শাস্তির ভয় করতেন। বেশি করে তওবা ইস্তেগফার করতেন এবং অন্যদের তা করার জন্য নির্দেশ দিতেন। মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে  প্রার্থনা জানাতেন।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় যতই আসুক, জীবন যে অবস্থায়ই চলুক না কেন, কোনো রকম বিচলিত না হয়ে সবসময় মহান আল্লাহপাকের দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে হবে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের বিষয়টি বড়ই অদ্ভুত! যখন তার সুখের কিছু হয় আর সে শোকর আদায় করে, সেটাও তার জন্য কল্যাণকর আবার যদি কোনো কষ্টের কিছু হয় আর সে সবর করে ধৈর্য ধারণ করে, সেটাও তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। সবকিছুর মধ্যে তার কল্যাণই কল্যাণ, অকল্যাণ বলে মুসলমানদের কিছুই নেই।’ (মুসলিম)

 

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads