প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা

  • শহিদ জয়, যশোর
  • প্রকাশিত ২৪ জানুয়ারি, ২০২২

ভৈরব নদ খনন কাজ প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত একটি মেগা প্রকল্প। ২০১৬ সালে ২৭২ কোটি টাকার একটি খনন প্রকল্প গ্রহণ করে পাউবো। অথচ প্রায় ছয় বছরেও বহুল প্রত্যাশিত এ খনন কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কখনো করোনার অজুহাত, আবার কখনো ঠিকাদার জটিলতার অজুহাতেই প্রকল্পের কাজের মেয়াদ তিন দফা বাড়ানো হয়েছে। তবে সর্বশেষ নদের শহরাংশের গুরুত্বপূর্ণ অংশসহ ১০ কিলোমিটার অংশ খনন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম জটিলতা। ষষ্ট দফা ঠিকাদারের জন্য দরপত্র আহ্বান করে তিন জন ঠিকাদার পাওয়া গেলেও এখনো শহরাংশের কাজ শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ফলে সরকারের মেগা এ প্রকল্পটি অনেকটাই অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার জটিলতার কারণে ভৈরব নদ খনন কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। যে কারণে দ্বিতীয় দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ আগামী ২২ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এ সময়ের মধ্যে খনন কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

তবে নদী সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন বলেন, পাউবো কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের টাকা নয়-ছয় করার জন্য একবার করোনা, আরেকবার বৃষ্টি, আবার ঠিকাদার জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে খনন কাজের গতি কমিয়ে দিচ্ছে।

পাউবোর সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ভৈরব নদের শহরাংশের খনন কাজের মূল ঠিকাদার ছিল মেসার্স এসএস অ্যান্ড এমটি (জেভি) নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই সময়ে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে খনন কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ে কাজ করতে ব্যর্থ হন। এ কারণে ওই ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর থেকেই নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জন্য পাউবো ফের দরপত্র আহ্বান করে। তবে বারবার দরপত্র আহ্বান করার পরও কোনো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাড়া পাওয়া যায়নি। ৫ম দফা দরপত্র আহ্বানের পর ষষ্ট দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। সর্বশেষ দরপত্রের শেষ দিন গত ২০ ডিসেম্বর এতে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এই তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো মেসার্স উন্নয়ন ইন্টার ন্যাশনাল, মেসার্স লিটন ট্রেডার্স ও এসএস আই লিমিটেড। পরে পাউবো যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার পর তাদেরকেই কাজের অনুমোদন দেয়। তবে এ সময়ে মধ্যে মেসার্স লিটন ট্রেডার্স শহরের নীলগঞ্জ থেকে কাজ খনন কাজ শুরু করলেও এখনো পর্যন্ত বাকি দুইজন ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারেনি।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন পর ঠিকাদার পেয়েছি। ইতোমধ্যে একজন ঠিকাদার শহরের নীলগঞ্জ ব্রিজের অংশ থেকে কাজ শুরু করেছে। বাকি দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কয়েকদিনের মধ্যে কাজ শুরু করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে ঠিকাদার পাওয়া গেলেও প্রকল্পের নির্ধারিত এ সময়ের মধ্যে আদৌ কাজ শেষ করা যাবে কী না, বা আবার কাজের মেয়াদ বাড়ানো হবে তা নিয়ে, খোদ পাউবো কর্তৃপক্ষের মধ্যেই হতাশা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত বছর করোনার কারণে খনন কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়। আবার পানি সমস্যাও বড় বিষয় ছিল। এবছরও ঠিক সেই পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে। তিনি বলেন, একেতো এখনো পর্যন্ত ঠিকাদাররা খনন কাজ শুরু করতে পারেনি। তারপর করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে পরিস্থিতি ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা যদি খুব দ্রুত কাজ শুরু করতে না পারি তাহলে আগামী এপ্রিলে বর্ষা মৌসুম আসলে ফের অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। তিনি বলেন, প্রকল্পটির কাজ দ্রুত শেষ করার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও জোর তাগিদ থাকা সত্ত্বেও নানা জটিলতার কারণে সম্ভব হচ্ছে না।

ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, এতদিন পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার ও করোনার অজুহাত দেখিয়ে খনন কাজ বন্ধ রেখে জনগণের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করে। এখন যদি ঠিকাদার পাওয়ার পরও দ্রুত কাজ শুরু করতে না পারে তাহলে এ বিষয়ে মানুষের মাঝে চূড়ান্তভাবে অবিশ্বাস তৈরি হবে। তাই কোনো অজুহাত না দেখিয়ে দ্রুত কার্যকর খনন কাজ শুরু করার জন্য তিনি পাউবো কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads