প্রথম ভেনামীর পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে পাইকগাছায়

ছবি: বাংলাদেশের খবর

কৃষি অর্থনীতি

প্রথম ভেনামীর পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে পাইকগাছায়

  • আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা (খুলনা)
  • প্রকাশিত ১৩ এপ্রিল, ২০২১

দেশে এই প্রথমবারের মতো খুলনার পাইকগাছায় ভেনামীর পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট লোনা পানি কেন্দ্রের গবেষণা পুকুরে পরীক্ষামূলক এ চাষ করা হচ্ছে। দেশে এটিই প্রথম কোনো ভেনামীর পরীক্ষামূলক চাষ। মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরীক্ষামূলক এ চাষ করছে যশোরের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমইউ সী ফুডস লি.। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড থেকে পোনা এনে পুকুরে মজুত করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক এ চাষে সফলতা আসলে সরকারি অনুমোদনের পর চাষি পর্যায়ে সম্প্রসারিত হলে দেশে রপ্তানিযোগ্য চিংড়ির উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

ভেনামী মূলত বাগদা ও অন্যান্য চিংড়ির ন্যায় চিংড়ি প্রজাতি। আমাদের দেশে এটি নতুন মনে হলেও বিশ্বের অনেক দেশে ভেনামী একটি জনপ্রিয় চিংড়ি। চীন, থাইল্যান্ড ও ভারতসহ অনেক দেশে চিংড়ি প্রজাতির মধ্যে ৮০ ভাগেরও বেশি ভেনামীর চাষ হচ্ছে। অল্প লবণাক্ততায় স্বল্প খরচে চাষ করা যায় এবং উৎপাদন ও বাগদার চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভেনামী চাষের অপর সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাগদার পরিবর্তে ভেনামী চাষে চিংড়ি চাষিদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে দেশে ভেনামীর সম্ভবতা যাচাই, পরিবেশের  জন্য কতটা ক্ষতিকর, ভাইরাস বহন করে কিনা ও অন্য কোন চিংড়িসহ মৎসের জন্য ক্ষতিকর কিনা সেটা যাচাই-বাছাইয়ের লক্ষে সরকার ভেনামীর পরীক্ষামূলক এ চাষের ব্যবস্থা করেছেন।

এমইউ সী ফুডস লি.-এর সমন্বয়কারী সুরেন্দ্র নাথ মন্ডল বলেন, আমরা পরীক্ষামূলক এ চাষের জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে কার্যক্রম শুরু করি। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও করোনার কারণে বিদেশ থেকে পোনা আনা সম্ভব হয়নি। এজন্য  আমাদের পোনা মজুত করতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়।

তিনি জানান, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট লোনা পানি কেন্দ্রের ৬টি পুকুর প্রস্তুত করে ৪টি পুকুরে গত ৩১ মার্চ থাইল্যান্ড থেকে পোনা এনে মজুত করা হয়েছে। ৪টি পুকুরে মোট ৮ লাখ পোনা ছাড়া হয়েছে। প্রতি স্কয়ার মিটারে ৪০টি পোনা ছাড়া হয়েছে। বাগদার থেকে এর খাবার একটু আলাদা এবং ভাসমান ধরনের। এর যাবতীয় খাবার ও ভারত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা নিজেরাই নিবিড় পরিচর্যা করছি পাশাপাশি মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের  বিজ্ঞানীরা সার্বিক তদারকি করছেন। এ ছাড়া মাঝে মধ্যে ভারতের বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আশা করছি ১শ দিন পর প্রথম কিস্তির ভেনামী হারভেস্ট করতে পারবো এবং বছরে ন্যূনতম ৩টি ক্রপ নিতে পারবো।

ভারতের এ্যাকোয়া কালচার এক্সপার্ট অ্যান্ড কনসালটেন্ট দীপান বিশ্বাস জানান, ভেনামী ১ থেকে ৪৫ পিপিটি লবণাক্ততায় চাষ করা যায়। বাংলাদেশের পরিবেশে ভেনামী চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উপকূলীয় নদী কেন্দ্রিক মাটি ভেনামী চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। যদি অ্যামোনিয়া না থাকে টিউবওয়েল এর পানিতেও ভেনামী চাষ করা সম্ভব।

ভেনামী চাষের ঝুঁকি ও রোগবালাই প্রসঙ্গে দীপান বিশ্বাস জানান, বাগদার চেয়ে ভেনামীর পোনা একটু ছোট এজন্য প্রথম ১ সপ্তাহ একটু রিস্ক বেশি তবে বাগদার চেয়ে পরিবেশগত সমস্যা সক্ষমতা ভেনামীর ১০ গুণ বেশি। বাগদার মতো কোনো রোগবালাই ভেনামীকে সহজে আক্রমণ করতে পারে না। তবে এর দুটি রোগ ক্ষতির কারণ হতে পারে যার একটি হচ্ছে কেরাম (বেঁকে যাওয়া) ১ থেকে ১০ দিন ও ৩১ থেকে ৪০ দিন বয়সে পরিবেশগত ও ভিটামিন এবং মিনারেলের অভাবে এ রোগ দেখা দেয়। আরেকটি রোগ হচ্ছে সাদা পায়খানা। খাদ্যের সমস্যার কারণে এ রোগ দেখা দেয়। একটু যত্ন এবং বায়ো সিকিউরিটি সঠিক থাকলে তেমন কোনো রোগ হয় না। বাগদার তুলনায় ভেনামীর পরিচর্যা ও অন্যান্য উপকরণ খুবই কম লাগে। অল্প জায়গায় স্বল্প খরচে চাষ করা যায় এবং দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় ভেনামী চাষ অনেক লাভজনক। পরীক্ষামূলক এ চাষে সফলতা আসলে আশা করছি সরকার এটি চাষি পর্যায়ে খুব তাড়াতাড়ি চাষের অনুমোদন দিবে। চাষি পর্যায়ে  ভেনামী চাষ সম্প্রসারিত হলে দেশের চিংড়ি চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য চিংড়ির উৎপাদন অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে ভারতের এ বিশেষজ্ঞ অভিমত ব্যক্ত করেন। এক্ষেত্রে ভেনামী আমাদের পরিবেশের জন্য কতটা উপযোগী এবং রোগজীবাণু বহন করার মাধ্যমে আমাদের দেশীয় প্রজাতীর চিংড়ির ওপর বিরূপ কোনো প্রভাব ফেলে কিনা সব কিছু ভালো করে যাচাই-বাছাই করে দেশে ভেনামী চাষের অনুমোদন দেওয়া উচিত বলে দেশের মৎস্য বিশেষজ্ঞ অনেকেই মনে করেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads