ফিচার

প্রকৃতির সমুদ্র ভাটিয়ারী

  • কাজী সুলতানুল আরেফিন
  • প্রকাশিত ১০ নভেম্বর, ২০১৮

এক ছুটির দিনকে কাজে লাগিয়ে আমরা সহকর্মীরা ঘুরে আসার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। পূর্বপরিকল্পনার সঙ্গে একটি যাত্রীবাহী বাস রিজার্ভ করেছিলাম। সকাল ৮ ঘটিকায় সবাই ছাগলনাইয়া বাজারে এসে উপস্থিত হলাম। দুই ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর আমরা গন্তব্যে এসে পৌঁছে গেলাম। চট্টগ্রাম শহরের সিটি গেট থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটারের দূরত্ব এই ভাটিয়ারী। আমরা যেহেতু ফেনী থেকে গিয়েছিলাম তাই একটু সময় লেগেছিল।

আমি মাইক্রোফোনে ঘোষণা দিতেই সবাই আনন্দে হইচই করে উঠল। আমাদের সঙ্গে অনেকের পারিবারিক সদস্য ও শিশুরা ছিল। তারা বেশি খুশি হলো। সেনা নিয়ন্ত্রিত এলাকা তাই আমি সবাইকে শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়ে সচেতন থাকতে পরামর্শ দিলাম। ভাটিয়ারীর মূল ফটকে বড় গাড়িগুলো সাধারণত প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। আমরা বাস থেকে নেমে ছোট ২ খানা জিপ গাড়ি রিজার্ভ করলাম। প্রতিটির জন্য আমাদের ২৫০ টাকা করে গুনতে হলো। আমাদের অর্থের ফান্ড ছিল সহকর্মী সুমনের কাছে। জিপ গাড়িতে যেতে যেতে দুই পাশের পাহাড় আর সবুজের প্রকৃতি আমাদের দুই চোখ জুড়িয়ে দিল। সবচেয়ে নয়নাভিরাম ছিল পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া লেক। পথে চোখে পড়ল ‘গলফ ক্লাব’।

এই গলফ ক্লাবের কথা অনেক শুনেছি। আমরা ‘ক্যাফে টুয়েন্টি ফোর পার্ক’ নামে একটি পার্কের সামনে এসে নামলাম। লেকের এক পাশে খুব সুন্দর করে গড়ে উঠেছে পার্কটি। মন জুড়ানো লেকের ওপর থেকে চোখ যেন সরানোই যাচ্ছিল না। পার্কের সামনেও দুজন সৈনিক দাঁড়িয়ে আসা গাড়িদের শৃঙ্খলা রক্ষার করছেন। কারণ ছুটির দিন হওয়ায় আমাদের মতো আরো অনেকেই ভ্রমণে এসেছেন। পার্কের প্রবেশের শুরুতে খুব সুন্দর একটি কাঠের তৈরি নৌকা চোখে পড়ল। সঙ্গে অনেক বাহারি ফুলগাছ। হাতের ডানেই উঁচুতে ৩-৪টা ছাউনি দিয়ে কাঠের ঘর। এগুলোতে বসে খাবার খাওয়া যায়। আমরা সবাই সেলফি আর ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। পার্কে প্রবেশ ফি জনপ্রতি ৩০ টাকা। আমার কাছে মনে হয়েছে এই পার্কটিতে ফ্রিতে প্রবেশ দেওয়া উচিত ছিল।

যাহোক, পার্কের ভেতরটায় নানা রঙের ফুলগাছ আর বয়ে যাওয়া লেকটি আমাদের মনে সুখের ঢেউ এনে দিল। প্রায় দুই ঘণ্টা প্রকৃতির কোলে ঘুরেফিরে আমরা আবার নির্দিষ্ট স্থানে সমবেত হলাম। এরপর সবাই একসঙ্গে খাবার খেলাম। প্রকৃতির মাঝে খাবার খেতেও যে কি সুখ তা বলে বুঝানো যাবে না! খাবার শেষে আবারো সবাইকে দুই ঘণ্টা ঘুরার সময় দেওয়া হলো। আমাদের সন্ধ্যের আগেই নীড়ে ফিরে আসার তাগাদা ছিল। কারণ আমাদের সঙ্গে অনেক শিশু ছিল। শিশুরা বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সময় শেষে আবার সবাই ফিরে যাওয়ার জন্য জিপে চেপে বসলাম। সবার মনটা একটু যেন খারাপ মনে হচ্ছিল। জিপ ছুটে যাচ্ছিল বাসের উদ্দেশ্যে আর প্রকৃতি আমাদের পেছন থেকে যেন ডাকছিল। আমাদের মাঝে রিতু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলে উঠল, ‘ইস যদি থেকে যেতে পারতাম!’ জীবনে বৈচিত্র্য আনার জন্য সবার উচিত একবারের জন্য হলেও প্রকৃতির কোল থেকে ঘুরে আসা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads