মহানগর

অকার্যকর পোস্টার নিয়ন্ত্রণ আইন

পোস্টার ব্যানারে শ্রীহীন ঢাকা

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ৫ মার্চ, ২০২২

দেশে ‘দেওয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২’ পুরোটাই অকার্যকর। ফলে দেয়াল লিখন থেকে শুরু করে যত্রতত্র পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে রাজধানী। বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি স্থাপনা, বাসাবাড়ি থেকে মসজিদ-মন্দির কিছুই বাদ যায়নি। বৈদ্যুতিক খুঁটির পর এখন ফুটপাতে বাঁশ পুঁতে লাগানো হচ্ছে বিলবোর্ড, ফলে সৌন্দর্যহানির সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সম্পদ।

নগরবিদরা বলছেন, পরিবেশ দূষণের ন্যায় ‘দৃশ্য দূষণ’ এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যত্রতত্র ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে চাক্ষুষ দূষণের সংস্পশের্র প্রভাবগুলো নগরবাসীর চোখের ক্লান্তি, মতামতের বৈচিত্র্য হ্রাস এবং পরিচয় হ্রাস পাচ্ছে। তাছাড়া এ ধরনের দৃশ্য দূষণের আরেকটি ফলাফল হচ্ছে পর্যটন বিমুখতা। তাই জাতীয় স্বার্থে দৃশ্য দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ তাদের। 

সাধারণত রাজনৈতিক নেতাদের পোস্টার, ব্যানার, অবৈধ দেয়াল লিখন, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডের ছড়াছড়ি দেখা যায় রাজধানীসহ সারা দেশে। নির্বাচন থাকুক বা না থাকুক সারা বছর ধরে বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছ ও দেয়ালে ঝুলতে থাকে এসব পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড। নেতাদের ছবি যুক্ত করে এগুলো তৈরি করা হয়। জাতীয় নেতা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা এ ধরনের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড ছাপিয়ে এভাবেই জনগণের সামনে নিজেকে জাহির করছেন।

এ ছাড়া রয়েছে বিদ্যালয়, কলেজ, কোচিং সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা বিজ্ঞাপন। আর তা দৃশ্যমান থাকে জনবহুল স্থানগুলোতে। এতে ব্যাপকভাবে দৃশ্য দূষণ হচ্ছে এবং যা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরক্তি তৈরি করে। আমাদের দেশ ও প্রতিবেশী দু-একটি দেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও এ ধরনের চিত্র দেখা যায় না। পরিবেশ বা নগরীর সৌন্দর্য বিনষ্টকারী এসব উপকরণ এখন যেমন মানুষের মাঝে বিরক্তিভাব নিয়েছে, তেমনি বিব্রতকর পরিস্থিতির মাঝে ফেলে দিচ্ছে এর বিষয়বস্তু ও উপস্থাপনের ধরন। রাস্তাঘাটে যানবাহনে চলার সময় দেখা যায় যে, বিভিন্নভাবে ভাড়া দেওয়া বা ওয়েবসাইটের পোস্টার লাগানো থাকে। তাছাড়া অনেক ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়াও হয়, যা কি না আমাদের মতো মেয়েদেরও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

নগরীর সৌন্দর্য রক্ষায় সরকার ২০১২ সালে ‘দেওয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২’ প্রণয়ন করে। এ আইনের ধারা ৪ অনুযায়ী নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে দেওয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো যাবে না। কিন্তু বিগত নয় বছরেও এ আইনটি বাস্তবায়নে সরকারি কোন সংস্থার কার্যকরী উদ্যোগ নেই। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মাঝে মাঝে নিজ উদ্যোগে এসব পোস্টার ব্যনার অপসারণ করে থাকে। কিন্তু যারা এসব ব্যনার, ফেস্টুন ও পোস্টার লাগান তাদের বিরুদ্ধে আইনি কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। ফলে অপসারণের কয়েক দিনের মধ্যেই আবার এগুলো নগরীতে ছেয়ে যায়।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইডেন কলেজের দেওয়ালে রাজনৈতিক নেতার প্রচার, তেলাপোকা মারার ওষুধ, বাড়িভাড়া, চাকরির সুযোগসহ বিচিত্র ধরনের বিজ্ঞাপনে প্রায় ঢাকা পড়েছে। এতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর চেনা দায়।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে অনেক সুন্দর। দেখলেই যেন মনে হয় এটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু দেওয়ালে পোস্টার থাকার কারণে চেনাই কষ্ট হয়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, আমাদের সদিচ্ছা ও সচেতনার অভাব রয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও কর্তৃপক্ষের সচেতনতারও অভাব আছে।

শুধু দেয়াল বা প্রাচীরই নয়, রাজধানীবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেলের পিলারও পোস্টারের কবল থেকে রক্ষা পায়নি। যে যেভাবে পেরেছেন নিজের প্রচারের স্বার্থে পোস্টার লাগিয়েছেন। রাজধানীর আজিমপুর মোড়ে দেখা যায়, ফুটপাতে বাঁশ পুতে লাগানো হয়েছে বিলবোর্ড। যার কারণে পথচারীদের পথ চলা দায়।

এদিকে দেওয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২ সম্পর্কে জানেন না ঢাকার অনেক জনপ্রতিনিধি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক জানান, তাকে সিটি করপোরেশন থেকে এ বিষয়ে কোন কিছু লিখিত ভাবে জানানো হয়নি। তাছাড়া, নগর কর্তৃপক্ষ প্রচারের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা না রাখায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নগরীতে কিছু ব্যক্তিত্বর মাধ্যমে এমনভাবে পোস্টার-ব্যানার লাগানো হয়, যাদের কিছু বলাও যায় না। মানা করতে গেলে একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। আমি চাই না অন্তত আমার ওয়ার্ডে কেউ ব্যানার-পোস্টার লাগাক। আমাকে যদি সিটি কর্পোরেশন থেকে কোনো নির্দেশনা দেয় এবং সেখানে যদি কোনো আইন করে দেয় তাহলে তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যত্রতত্র পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টু স্থাপনের কারণে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এমন দিক বিবেচনায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পিভিসি ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন স্থাপন করার কারণে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য ব্যাহত হচ্ছে। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বজায় রাখার স্বার্থে পিভিসি ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন আগামী ১৭ মার্চ ২০২২, বৃহস্পতিবার তারিখের মধ্যে নিজ দায়িত্বে অপসারণের অনুরোধ জানান তিনি।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ক্যাম্পাস পরিদর্শন করে দেখা যায়, জবি’র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৭ দিনও এসবের কোনটিই সরিয়ে নেওয়া হয়নি বা সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এ দিকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে চলতি সপ্তাহেই। নবীনদের কাছে ক্যাম্পাসের এমন সৌন্দর্যহীনতা ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছে।

এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল জানান, যারা এসব বিজ্ঞাপন টানিয়েছে, তারা নিজ উদ্যোগে সরিয়ে না নিলে আমাদের পক্ষ থেকে সরিয়ে ফেলা হবে। যদিও ২১ ফেব্রুয়ারির আগে কিছু পরিষ্কার করা হয়েছিল। বাকিগুলো আবার পরিষ্কার করা হবে।

দেওয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২ ধারা ৪ অনুযায়ী নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে দেওয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো যাবে না। আইনের ধারা ২ এর উপধারা-১ এ বলা হয়েছে— ‘দেওয়াল’ অর্থ বাসস্থান, অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসাকেন্দ্র, শিল্প কারখানা, দোকান বা অন্য কোন স্থাপনা, কাঁচা বা পাকা যাহাই হউক না কেন, এর বাহিরের ও ভিতরের দেওয়াল বা উহাদের সীমানা নির্ধারণকারী দেওয়াল বা বেড়া, এবং বৃক্ষ, বিদ্যুতের খুটি, খাম্বা, সড়ক দ্বীপ, সড়ক বিভাজক, ব্রিজ, কালভার্ট, সড়কের উপরিভাগ ও বাড়ির ছাদও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে। উপধারা-২ এ বলা হয়েছে— ‘দেওয়াল লিখন’ অর্থ প্রচার বা ভিন্নরূপ কোন উদ্দেশ্যে, যে কোন রং এর কালি বা চুন বা কেমিক্যাল দ্বারা, দেওয়াল বা যানবাহনে কোন লিখন, মুদ্রণ, ছাপচিত্র বা চিত্র অংকন করা। ধারা-৩ এ বলা হয়েছে, ‘পোস্টার’ অর্থ কাগজ, কাপড়, রেক্সিন বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমসহ অন্য যে কোন মাধ্যমে প্রস্ততকৃত কোন প্রচারপত্র, প্রচারচিত্র, বিজ্ঞাপনপত্র, বিজ্ঞাপনচিত্র এবং যে কোন ধরণের ব্যানার ও বিলবোর্ডও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে।  উপধরা-৫ এ বলা হয়েছে, ‘ব্যক্তি’ অর্থ কোন কোম্পানী, প্রতিষ্ঠান, অংশীদারী কারবার, সমিতি, সংঘ, সংগঠন, এবং সংস্থাও, সংবিধিবদ্ধ হউক বা না হউক, অন্তর্ভুক্ত হইবে।

ধারা-৪ বলা হয়েছে, কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দেওয়াল লিখন বা পোস্টার লাগাইবার জন্য প্রশাসনিক আদেশ দ্বারা স্থান নির্ধারণ করিয়া দিতে পারিবে এবং উক্তরূপে নির্ধারিত স্থানে দেওয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো যাইবে। তবে শর্ত থাকে যে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে, উল্লিখিত নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোন স্থানে বিধি দ্বারা নির্ধারিত শর্ত ও পদ্ধতিতে এবং নির্দিষ্ট ফি প্রদান সাপেক্ষে, দেওয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো যাইবে।

বিদ্যমান দেওয়াল লিখন বা পোস্টার সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণ, ইত্যাদি ৫। (১) এই আইন কার্যকর হইবার পর বিদ্যামান দেওয়াল লিখন বা, ক্ষেত্রমত, পোস্টার মুছিয়া ফেলিতে বা অপসারণের জন্য সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, সময়সীমা নির্ধারণ করিবে।

ধারা-৫ এর উপধারা-২ এ বলা হয়েছে, ‘(২) উপ-ধারা (১) অনুযায়ী সময়সীমা নির্ধারণ করা হইলে, উক্তরূপ সময়সীমার মধ্যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সুবিধাভোগীকে তাহার দেওয়াল লিখন বা, ক্ষেত্রমত, পোস্টার মুছিয়া ফেলিতে বা অপসারণ করিতে হইবে।’

এর ধারা-৫ এর উপধারা-৩ এ বলা হয়েছে— নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে, কোন দেওয়াল লিখন বা, ক্ষেত্রমত, পোস্টার মুছিয়া ফেলা না হইলে বা অপসারণ করা না হইলে, উক্ত সময়সীমা অতিবাহিত হইবার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, স্ব-উদ্যোগে, অননুমোদিত যে কোন দেওয়াল লিখন বা, ক্ষেত্রমত, পোস্টার মুছিয়া ফেলিতে বা অপসারণ করিতে পারিবে এবং উক্ত কার্যক্রমের আনুষঙ্গিক ব্যয়ের সমুদয় অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সুবিধাভোগীর নিকট হইতে নগদ আদায় (জরিমানা) করিবে।

অপরাধ ও দ্ল বিষয়ে আইনের ধারা ৬ এর উপধারা-২ এ বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি ধারা ৩ ও ৪ এর বিধান লঙ্ঘন করিয়া দেওয়াল লিখন বা পোস্টার লাগাইলে উক্ত অপরাধের জন্য উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অন্যূন ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা এবং অনূর্ধ্ব ১০ (দশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা যাইবে, অনাদায়ে অনধিক ১৫ (পনের) দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদ্ল প্রদান করা যাইবে এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাহার নিজ খরচে সংশ্লিষ্ট দেওয়াল লিখন বা, ক্ষেত্রমত, পোস্টার মুছিয়া ফেলিবার বা অপসারণের জন্য আদেশ প্রদান করা যাইবে।

এছাড়া উপধারা-৩ এ বলা হয়েছে,  কোন সুবিধাভোগীর অনুকূলে ধারা ৩ ও ৪ এর বিধান লঙ্ঘন করিয়া দেওয়াল লিখন বা পোস্টার লাগাইলে উক্ত অপরাধের জন্য উক্ত সুবিধাভোগীর বিরুদ্ধে অন্যূন ১০ (দশ) হাজার টাকা এবং অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা যাইবে, অনাদায়ে অনধিক ৩০ (ত্রিশ) দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা যাইবে এবং উক্ত সুবিধাভোগীকে তাহার নিজ খরচে সংশ্লিষ্ট দেওয়াল লিখন বা, ক্ষেত্রমত, পোস্টার মুছিয়া ফেলিবার বা অপসারণের জন্য আদেশ প্রদান করা যাইবে।

নগরবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা অনেকেই দেশ বিদেশে ভ্রমণে গেলে কোথাও এই ধরনের দৃশ্য দূষণ তথা যত্রতত্র পোস্টার, বিলবোর্ড, আবর্জনা, অ্যান্টেনা, বৈদ্যুতিক তার, ভবন এবং অটোমোবাইলগুলোর উন্মুক্ত অবস্থান দেখতে পাই না, শুধু আমাদের দেশ ও প্রতিবেশী দু-একটি দেশ ছাড়া। দৃশ্য দূষণ না থাকার কারণে ওইসব দেশে পরিবেশ দূষণ যেমন কমছে, তেমনি শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে তাদের পর্যটনশিল্প। ওই দেশগুলোর তুলনায় পরিবেশ রক্ষা ও পর্যটন উভয় ক্ষেত্রেই আমরা দিন দিন পিছিয়ে পড়ছি। যা কখনোই আমাদের দেশের জন্য ইতিবাচক নয়। একটি নগরীতে এ ধরনের ব্যানার পোস্টারের দৃশ্য দূষণের ফলে নগরীটি পর্যটন বিমুখ হয়ে যায়। তাই জাতীয় স্বার্থে দৃশ্য দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, পরিবেশ দূষণের কথা এলেই বায়ু, পানি ও শব্দদূষণের কথা বলা হয়। কিন্তু এসব ছাড়াও বর্তমানে এখন আরেকটি দূষণের কথা বলা হচ্ছে, সেটি হলো ‘দৃশ্য দূষণ’। দৃশ্য দূষণ একটি নান্দনিক সমস্যা। এটি দূষণের প্রভাবগুলোকে বোঝায়, যা একটি দৃশ্য বা দৃষ্টিভঙ্গি উপভোগ করার ক্ষমতা হ্রাস করে। দৃশ্য দূষণ প্রাকৃতিক পরিবেশে ক্ষতিকারক পরিবর্তন তৈরি করে মানুষের দর্শনীয় স্থানগুলোকে বিরক্ত করে। যত্রতত্র পোস্টার, বিলবোর্ড, অবৈধ দেয়াল লিখন, আবর্জনা, অ্যান্টেনা, বৈদ্যুতিক তার, ভবন এবং যানবাহনগুলোর উন্মুক্ত অবস্থান প্রায়শই দৃশ্য দূষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই এর বিরুদ্ধে ব্যক্তি এবং সামষ্টিক উদ্যোগে নিয়ে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে রুখে দাঁড়াতে হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মাদ জানান, সংস্থাটি দুটি নিজেদের উদ্যোগে নগরীর এসব ব্যনার, পোস্টার ও ফেস্টুন অপসারণ করেন। তবে আইনানুযায়ী কারো বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে এ ব্যাপারে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার-প্রচারণা চালাবেন তারা। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads