পুষ্টি নিরাপত্তায় ছাদ কৃষি

ছাদ কৃষিতে সাফল্য আনতে চান উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নাসরীন আখতার

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

পুষ্টি নিরাপত্তায় ছাদ কৃষি

  • প্রকাশিত ২৬ নভেম্বর, ২০১৮

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি

দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। আবাদী জমিতে নির্মিত হচ্ছে ঘর-বাড়ি, শিল্প-কারখানা। জমি কমে যাচ্ছে। কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার, বিষ, কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে ফসলে। আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। খাদ্যের সবকয়টি উপাদান আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে না। পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে ব্যাপক। ফল ও সবজি খাদ্য তালিকায় সবার থাকছে না। আবাদী জমিতে ফল ও সবজি চাষে কৃষকের আগ্রহ রয়েছে কম। তাই এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের একমাত্র উপায় ছাদ কৃষি। কম খরচে বাড়তি জমি ছাড়াই ছাদে কৃষি পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ একেবারে সহজ উপায়। বাংলাদেশের সকল ভবনের ছাদে ফল ও সবজি আবাদে মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারলে কৃষিতে আরো একটি বিপ্লব ঘটবে। শহরের জমি অত্যন্ত মূল্যবান। কেউ খালি রাখেন না। শুধু ভবন আর ভবন। তবে কিছু সৌখিন সচেতন ব্যক্তি বাড়ির ছাদে সখের কিছু গাছ রোপন করে থাকেন।

এই সখই এখন শেরপুর জেলাশহর সহ নালিতাবাড়ীতে বেশ চমক সৃষ্টি করেছে। কৃষির সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে দিন দিন। আগে ছিল ছাদে বাগান এখন নাম ধারন করেছে ‘ছাদ কৃষি’। ছাদে শোভা পাচ্ছে বাহারি ফল ও সবজি গাছ। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ২ বছর ধরে বেশ কিছু ভবনের ছাদে উৎপাদন হচ্ছে বিভিন্ন ফল ও সবজি। শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর, নালিতাবাড়ীর পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট, নাকুগাঁও কাস্টমস অফিস ডরমিটরী ভবনের ছাদে রয়েছে-বারোমাসী আম, বারোমাসী আমড়া, মিষ্টি আমড়া, মাল্টা, কমলা, ড্রাগন, জামরুল, মিষ্টি কামরাঙা, পেয়ারা, বাতাবী লেবু, কাগজি লেবু, মিষ্টি লেবু, চেরিফল, পেঁপে, লাউ, শিম, পুঁইশাক, বারোমাসী টমেটো সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও সবজি গাছ। এসব ফলজ ও সবজি বাগান এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এসব বাগানগুলোতে নিয়মিত পরিচর্যা করার কারণে অনেক গাছের ফল পরিপক্ক হয়েছে। পাকা ফল খাওয়া শুরু করেছেন অনেকে।

মানুষ ছাদের উপর গড়ে তুলতে পারেন বিভিন্ন ফলজ ও সবজি ক্ষেত। এতে ভেজালমুক্ত ও সুস্বাদু খাবারের সংকুলান হবে। ছাদে এসব আবাদ দেখে নালিতাবাড়ী ও শেরপুরের অনেকে ছাদে ফল শাক সবজি উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

শেরপুর জেলা কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘এখনো আমাদের পুষ্টির চাহিদার ঘাটতি আছে। পুষ্টির চাহিদা পূর্ণ করতে গেলে আমাদের সবজি ও ফল চাষের বিকল্প নেই। যেহেতু আমাদের জমি কম জনসংখ্যাও বাড়তেছে দিন দিন। সেই হিসেবে আবাদী জমি যে আমরা ফল চাষে বা সবজি চাষে নিয়ে আসবো সেই সুযোগও আমাদের নেই। সেই ক্ষেত্রে আমরা অফিস বা বাড়ির ছাদ যদি ব্যবহার করতে পারি, ছাদ কৃষিতে যদি আমরা সৌখিন কৃষক বা কৃষাণীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারি। তাহলে আমাদের বছরভিত্তিক পারিবারিক সবজির চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে।  আমরা বাণিজ্যিকভাবেও ছাদ কৃষিতে লাভবান হতে পারবো। ইতোমধ্যে আমরা অফিসের ছাদ থেকে মাল্টা, আমড়া, কামরাঙা, ড্রাগন ও সবজি নিজে খেতে পারছি । এভাবে সবাই এগিয়ে আসলে ছাদ কৃষির মাধ্যমে আমরা পুষ্টির একটা নিরাপত্তা দিতে পারবো এবং নিরাপদ পুষ্টি এবং বিশেষ করে বিষমুক্ত ফল উৎপাদন করতে সক্ষম হবো এবং বাজারে  এর চাহিদা বৃদ্ধি পাব ‘।

উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিনা উপকেন্দ্র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাসরীন আখতার বলেন, ‘ছাদ কৃষি বর্তমান সময়ে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। শুরু থেকে ছাদ কৃষিটা সখের বসে করলেও বর্তমানে এটা অর্থনীৈতিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বাড়ছে জমি বাড়ছে না। প্রতিটা জমি ধান চাষে ব্যবহার হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে শাকসবজি আবাদ হচ্ছে খুব কম। তাই পারিবারিক প্রয়োজনে যদি আমরা বাড়ি বা অফিসের ছাদে সবজি, ফল চাষ করি তাহলে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে দারুণভাবে’।

ছাদ কৃষিতে মানুষ উদ্বুদ্ধ হলে দেশে আরো একটি কৃষি বিপ্লব ঘটবে বলে ধারণা করেন অনেকে। তাছাড়া কৃষকের পাশাপাশি কৃষাণীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই কৃষিতে সম্পৃক্ত করতে পারলে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এবং বাণিজ্যিকভাবে করতে পারলে বেশ লাভবানের সম্ভাবনা বিরাজমান।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads