পীরগঞ্জে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে নতুন বিপ্লবের অগ্রযাত্রা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

কৃষি অর্থনীতি

পীরগঞ্জে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে নতুন বিপ্লবের অগ্রযাত্রা

  • পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২ মার্চ, ২০২০

পরিশ্রমী আত্মপ্রত্যয়ী মোঃ মানিক মিয়া পীরগঞ্জের রায়পুর ইউনিয়নে পীরগঞ্জ উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অনুপ্রেরনায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে কাজ করছে। কৃষির সঠিক দিকনির্দেশনা আর কৃষির উন্নত প্রযুক্তিগুলো এ এলাকায় সম্প্রসারিত করে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে সাফল্যর পথে। ইতোমধ্যে কৃষি সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ তার মাঠভিত্তিক কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

থেমে নেই তার পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে নতুন বিপ্লবের অগ্রযাত্রা। সরকারি দায়িত্ব পালনে নেই কোনো অবহেলা, নেই কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশ পালনে নেই কোন কার্পণ্যতা। চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমিতে পাঁচ থেকে সাতটি চাষ দিয়ে মাটি ক্ষুদ্র আকার করে বেড তৈরী করতে হয়। সেইসাথে বেডের পাশ দিয়ে ছোট ছোট নালা তৈরী করতে হয়। যাতে করে জমিতে পানি আটকে থাকতে না পারে। এরপর বিঘাপ্রতি প্রায় ছয় মন করে দেশী (ছাঁচি) জাতের পেঁয়াজের আল জমিতে রোপন করতে হয়। আল রোপনের সময় বিঘাপ্রতি পরিমান মত জৈব সার, দস্তা ২ কেজি, পটাশ ২০ কেজি, বরুন ২ কেজি ও ইউরিয়া সার ১০ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। এতে চারা ভাল হয় এবং বীজও ভাল ও উন্নত মানের হয়।

তিনি আরো বলেন, পেঁয়াজে ফুল আসা মাত্রই মশা, জাব পোকা ও ল্যাদা পোকার আক্রমণ হয়। এরমধ্যে ল্যাদা পোকা সবথেকে মারাত্বক। দেখতে কদম ফুলের মত পেঁয়াজ ফুল। এই ফুল থেকেই বের হয় কালো রঙ্গের দানা। যাকে কৃষকেরা বলে কালো সোনা। উপজেলায় দুই একর জমিতে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামুলকভাবে এ বছর পেঁয়াজ বীজের আবাদ করছে ডাল তেল ও মসলা বীজ সংরক্ষন প্রকল্প (৩য় পর্যায়) কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের আওতায়। অন্য ফসল থেকে পেঁয়াজের বীজের চাষ অধিক লাভজনক এবং পেঁয়াজ উৎপাদনে সাবলম্বী করার জন্য এই উদ্যোগ। মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ বীজ চাষের উপযোগী হওয়ায় এবং বাইরের বীজের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাষিদের এই পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। গুণ ও মানের দিক দিয়ে এই বীজ উন্নত স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতে আগামীতে সহায়ক হবে বলে জানান চাষী মানিক মিয়া। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পেঁয়াজ বীজের ভালো ফলন হবে বলে আশা চাষিদের।

জমি চাষ থেকে শুরু করে বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, দিনমজুর, ফসল উত্তোলনসহ বিঘাপ্রতি ব্যয় হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘা (৫০শতাংশ) বীজ পাওয়ার সম্ভবনা এক থেকে দেড় মণ। বর্তমানে প্রতি কেজি বীজের বাজার দর দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। সেই হিসাবে বিঘা প্রতি উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ পেয়ে থাকেন এক থেকে দেড় মণ। প্রতি মণ বীজ ৯০ থেকে একলক্ষ টাকায় তারা বিক্রি করেন। এই পেঁয়াজ বীজের আবাদে অধিক লাভবান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, আমাদের দেশে যে পেঁয়াজ উৎপন্ন হয় তা দিয়ে দেশের মোট চাহিদার মাত্র ৫৭.১৪% মিটানো সম্ভব। এ থেকে বোঝা যায় যে, দেশে পেঁয়াজের বিশাল ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বছর চাহিদা পূরণের জন্য বিপুল পরিমাণ কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা (৫০০-৬০০ কোটি টাকা) ব্যয় করে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। পেঁয়াজের ফলন বৃদ্ধির জন্য মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ। চলতি বছরে স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন দিয়ে প্রায় ৩শত বিঘায় চাষ করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads