পিরোজপুরের খেতাবপ্রাপ্ত ৫ মুক্তিযোদ্ধার কেউ বেঁচে নেই

প্রতীকী ছবি

সারা দেশ

পিরোজপুরের খেতাবপ্রাপ্ত ৫ মুক্তিযোদ্ধার কেউ বেঁচে নেই

  • এস এম আকাশ, পিরোজপুর 
  • প্রকাশিত ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বহস্তে স্বাক্ষর করে যাদের মহাবীর আখ্যা দিয়েছিলেন সেই পিরোজপুর জেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের আর কেউ বেঁচে নেই। তাদের বীরত্বগাঁথা কাহিনী সবার জানা থাকলেও তাদের স্বরণে নেই কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। এমনকি বিশেষ দিনেও তাদেরকে স্মরণ করে না কেউ।  মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখা ৫ খেতাব প্রাপ্ত পিরোজপুরের যোদ্ধারা হলেন- মেজর (অব.) মেহেদী আলী ইমাম (বীর বিক্রম), মো. আনিছ মোল্লা (বীর বিক্রম), শহীদ আবুল কাশেম হাওলাদার (বীর বিক্রম), এম এ খালেক (বীর প্রতীক) ও আলী আকবর (বীর প্রতীক)।

মেজর (অব.) মেহেদী আলী ইমাম: আদিনিবাস পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী গ্রামে। ৯নং সেক্টরের বুকাবুনিয়া সাব সেক্টর কমান্ডার মেহেদী ছিলেন পাক হানাদারদের ত্রাস। ১৯৯৬ সালের স্বাধীনতার মাসে তিনি মারা যান। তার বীর বিক্রম খেতাব নং ১৪।

আনিছ মোল্লা (বীর বিক্রম): মঠবাড়িয়ার খায়ের ঘটিচোরা গ্রামে তার জন্ম। রংপুরে ইপিআর উইং এ কর্মরত অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। পুরো নয় মাস ৬নং সেক্টরের সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টরের সবকটি সম্মুখ যুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখেন তিনি। তার বীর বিক্রম খেতাব নং-১০১।

আবুল কাশেম হাওলাদার (বীর বিক্রম)ঃ ভাণ্ডারিয়া উপজেলার রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবুল কাশেম হাওলাদার। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ইপিআর-এ চাকরি করতেন তিনি। ১৯৭১ সালে রাজশাহী ইপিআর সেক্টর হেড কোয়ার্টারে কর্মরত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলে কাশেম ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। ৭নং সেক্টরের যুুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন শহীদ আবুল কাশেম। রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকবাহিনী পিছু হটতে থাকলে কাশেম জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে সামনে এগিয়ে যান। সেই সময় এক পাকসেনার গুলিতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে মাটিতে পড়ে গিয়েও সহযোদ্ধাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বলেন এবং সেখানেই মারা যান। তার বীর বিক্রম খেতাব নং ১০৯।

এম এ খালেক (বীর প্রতীক) ঃ ভাণ্ডারিয়া উপজেলার শিয়ালকাঠী গ্রামে জন্ম নেওয়া এম এ খালেক ছিলেন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারের বৈমানিক। ২৫ মার্চ তিনি বিমান চালিয়ে ঢাকা আসেন এবং সেই রাতেই তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিবাহিনীর নিজস্ব বিমান বাহিনী গঠনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিমান দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। তার বীর প্রতীক খেতাব নং-৩০৪।

 

আলী আকবর (বীর প্রতীক) ঃ ভাণ্ডারিয়ার গৌরীপুরের আলী আকবর ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। সৈয়দপুর সেনানিবাসে ৩১ মার্চ ৩২ জন পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন তিনি। পরে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে জুলাই মাসের মাঝামাঝি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার বীর প্রতীক খেতাব নং-৮২।

মঠবাড়িয়ার সন্তান সুন্দরবন অঞ্চলের ৯ সেক্টর এর ইয়ং অফিসার সাব সেক্টও কমান্ড ও কমান্ডিং অফিসার (আসাদ নগর) মুক্তিযোদ্ধা মজিবুল হক খান মজনু জানান, মেজর (অব.) মেহেদী আলী ইমাম (বীর বিক্রম) ও আনিছ মোল্লা (বীর বিক্রম) বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। কিন্তু তাদের মৃত্যুর পরেও জন্মভূমিতে তাদের নামে কোন স্মৃতিন্তম্ভ নেই। দীর্ঘদিন ধরে অ-মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষমতা দখল করে থাকায় বীর বিক্রমদের নামে এত দিনেও কিছু করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads