পাঠাওয়ের বিরুদ্ধে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

লোগো শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাও

অপরাধ

প্রতারণায় আইনি নোটিশ

পাঠাওয়ের বিরুদ্ধে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

  • শাহাদাত হোসেন
  • প্রকাশিত ৮ নভেম্বর, ২০১৮

গ্রাহকের অজান্তেই স্মার্টফোনে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাও এর বিরুদ্ধে। ফোনে থাকা এসএমএস, ফোনবুকে সংরক্ষিত নম্বর, ইনস্টলড অন্যান্য অ্যাপের নাম, নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে এ তালিকায়।

এদিকে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে গতকাল একটি আইনি নোটিশও পাঠানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। তবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গ্রাহকের স্বার্থেই তথ্যগুলো সংগ্রহ করে তারা। 

তথ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষক আশিক ইসতিয়াক ইমন পাঠাও অ্যাপের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি সম্প্রতি ফেসবুকে তুলে ধরেছেন। একটি ভিডিওর মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন কোন তথ্য কীভাবে নিচ্ছে পাঠাও।

ইমন জানিয়েছেন, কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই এসব তথ্য নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। পাঠাও বা এ ধরনের অ্যাপের সেবা প্রদানের জন্য স্মার্টফোনের শুধু লোকেশন ব্যবহারের অনুমতি নেওয়াই পর্যাপ্ত। কিন্তু পাঠাও অ্যাপ এসবের বাইরেও অনেক তথ্য সংগ্রহ করছে।

সাধারণত অ্যান্ড্রয়েড ফোনে কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার আগে কিছু তথ্য নেওয়ার বিষয়ে ব্যবহারকারীর অনুমতি নিতে হয়। পাঠাও অ্যাপও গ্রাহকের অনুমতিতে এসএমএস পড়া, ফোন স্ট্যাটাস ও আইডেন্টিটি দেখা, ছবি ও অন্যান্য মিডিয়া ফাইল দেখা, ইউএসবি স্টোরেজে থাকা কোনো ফাইল পরিবর্তন কিংবা মুছে ফেলা, ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি ও ভিডিও ধারণ, কন্টাক্ট লিস্ট দেখতে পারে। তবে ফোনে থাকা এসএমএস ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করার কোনো অনুমতি তারা নেয় না।

ইমন পাঠাও এর বিরুদ্ধে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার যে অভিযোগ করেছেন বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন একাধিক সাইবার নিরাপত্তা গবেষক ও অ্যাপ নির্মাতা।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপের (বিডিনগ) ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য সুমন আহমেদ সাবির বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বর্তমানে স্মার্টফোনে থাকা কমবেশি সব অ্যাপই ব্যবহারকারীর বিভিন্ন তথ্য নিয়ে থাকে যার বেশিরভাগই নেওয়া হয় কোনো প্রয়োজন ছাড়াই। অনেক ক্ষেত্রেই এসব তথ্য সংগ্রহ করার বিষয়টি অনৈতিক এবং আইনের লঙ্ঘন। তিনি বলেন, গ্রাহকদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে আমাদের অনেক গোপন তথ্য তাদের হাতে চলে যাচ্ছে। নৈতিক দিক থেকে এটি সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন। পাঠাও যদি এসব তথ্য সংগ্রহ করে থাকে তাহলে তাদের উচিত ব্যবহারকারীদের জানানো যে এসব তথ্য কীভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং কেন সংগ্রহ করা হচ্ছে। গ্রাহক যদি রাজি থাকে সেক্ষেত্রে তারা নিতে পারে। পুরো বিষয়টিতেই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর একজন তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষক বলেন, অ্যাকাউন্ট খোলা কিংবা লগইন করার জন্য যে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড পাঠানো হয়, সেটি দেখার জন্যই মূলত পাঠাও এসএমএস অ্যাকসেস নিয়ে থাকে। এ অ্যাকসেসটি খুব একটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। শুধু লোকেশন ছাড়া অন্য কোনো তথ্যই পাঠাও অ্যাপের প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে এ বিশ্লেষক বলেন, বাংলাদেশে এখনো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা আইনের বিষয়টি ততটা শক্তিশালী না হওয়ায় ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে বা কাউকে বিপদে ফেলার জন্য এসব তথ্য ব্যবহারের ঝুঁকি থেকে যায়।

অস্ট্রেলিয়ার লা ট্রব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার নিরাপত্তা গবেষক জাবেদ মোর্শেদ জানান, ইমন যে বিষয়গুলো সামনে এনেছে তার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ নেই। পাঠাওর উচিত এসব তথ্য কেন নেওয়া হচ্ছে এবং এর ব্যবহার কী হবে সে বিষয়গুলো স্পষ্ট করা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে পাঠাও এর প্রডাক্ট ডিভিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ ফাহাদ বাংলাদেশের খবরকে জানান, অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করার জন্য ব্যবহারকারীর এসএমএস দেখার প্রয়োজন পড়ে। এ ছাড়া ফোনবুকে থাকা সকল নম্বরও ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার জন্যই নেওয়া হয়ে থাকে। কোনো গ্রাহক রাইডে থাকা অবস্থায় কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে যেন পরিচিত কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় সেটিই এর মূল উদ্দেশ্য।

তবে এসব তথ্য না নিয়েও তো সেবা দেওয়া সম্ভব, সেক্ষেত্রে এসব তথ্য নিজস্ব সার্ভারে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু- এমন প্রশ্নের জবাবে ফাহাদ বলেন, ব্যবহারকারীদের আরো উন্নত সেবা প্রদানেই এ তথ্যগুলো নেওয়া হচ্ছে। এসব ব্যক্তিগত তথ্য কোনোভাবে ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হবে না। তিনি বলেন, বর্তমানে শুধুমাত্র ডাটা এনকোড করা হচ্ছে। শিগগিরই এনক্রিপশন প্রযুক্তি যুক্ত করা হবে।

আইনি নোটিশ

এদিকে অ্যাপসে প্রদর্শিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় এবং যাত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগে রাইড শেয়ারিং অ্যাপস পাঠাও লিমিটেডকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে এর সঠিক ব্যাখ্যাসহ জবাব না দিলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে গতকাল বুধবার পাঠানো ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। আফজাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি আইনজীবীর মাধ্যমে পাঠাও এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রযুক্তি কর্মকর্তাকে এই আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads