জাতীয়

পাকিস্তানি খেতাব বর্জন বুদ্ধিজীবীদের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ মার্চ, ২০২২

১৯৭১-এর ১৫ মার্চ ছিল সোমবার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের আজকের দিনটিও শান্তিপূর্ণ সভা-শোভাযাত্রা ও সরকারি, আধা-সরকারি অফিস-আদালত বর্জনের মাধ্যমে অতিবাহিত হয়।

এছাড়া আন্দোলনে নিহত বীর শহীদদের উদ্দেশে শোক এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে কালো পতাকা উত্তোলিত থাকে।

গত ১৩ মার্চ জারিকৃত ১১৫ নং সামরিক আইন আদেশে সরকারি কর্মচারীদের আজ কাজে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করা হলেও কোনো বিভাগের কোনো কর্মচারী কাজে যোগ দেননি; বরং তারা সামরিক আদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং প্রতিবাদ সভার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ কর্মসূচির প্রতি পুনর্বার একাত্মতা ঘোষণা করেন। অপরদিকে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জনসভায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশে কেবল বাংলার সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই কোনো নির্দেশ জারি করতে পারেন এবং বাংলার জনসাধারণ কেবলমাত্র সেই বিধিই মেনে চলবে। কেননা বঙ্গবন্ধু সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির নির্বাচিত নেতা।’ তোপখানা রোডে বেগম সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদের নারী সমাবেশ থেকেও বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত সকল কর্মসূচির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা হয়।

এমন উত্তাল-অগ্নিগর্ভ পূর্ব পাকিস্তানে আসেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাদা রঙের গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করতে যান। ১৬ মার্চ শুরু হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব-ইয়াহিয়া খানের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক। স্বাধীনতার দাবিতে অটল থেকেই বঙ্গবন্ধু পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারে সঙ্কল্পবদ্ধ।

সমঝোতার নাটক করতে ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে আসলেও মুক্তিকামী বাঙালী তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখে। দেশবাসীকে তাদের অধিকার বঞ্চিত করার প্রতিবাদস্বরূপ শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা তাদের খেতাব বর্জন অব্যাহত রাখেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সাংবাদিক-সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন এবং অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী তাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব বর্জন করেন। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এ খেতাব বর্জনের বিষয়টি ব্যাপক সাড়া ফেলে।

এদিন অধ্যাপক আবুল ফজলের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, সাংবাদিক নূর ইসলাম প্রমুখ। বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি টেলিভিশন নাট্যশিল্পী সংসদ এদিন স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তাদের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আবদুল মজিদ। বক্তব্য রাখেন সৈয়দ হাসান ইমাম, ফরিদ আলী, শওকত আকবর, আলতাফ হোসেন, রওশন জামিল, আলেয়া ফেরদৌসী প্রমুখ।

ঢাকা শহরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন শহরেও সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং চলতে থাকে। এদিন নেত্রকোনায় সুইপার ও ঝাড়ুদাররা ঝাড়ু, দা, লাঠি ও কোদাল নিয়ে মিছিল বের করে। বগুড়া, খুলনা, রংপুর, লাকসাম, কুমিল্লা ও কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে স্বাধীনতার সপক্ষে মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads