পাওনাদারের সামনেই গৃহবধূর আত্মহত্যা!

চাঁদপুরের সদর উপজেলায় কামরাঙ্গা গ্রামে আত্মহননকৃত গৃহবধূ ফাতেমা বেগমের এনজিও থেকে নেয়া ঋণের বইগুলো সংবাদকর্মীদের দেখান তার স্বামী দুলাল খাঁন

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে

পাওনাদারের সামনেই গৃহবধূর আত্মহত্যা!

  • চাঁদপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮

এনজিও’র কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পাওনাদারের বাড়িতে গিয়ে ফাতেমা বেগম (৩৫) নামের এক অসহায় গৃহবধূর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় চাঁদপুরের সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের স্থানীয় কামরাঙ্গা গ্রামের গাজী বাড়ি থেকে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপতালের মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ।

এর আগে দিনের কোন এক সময়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ফাতেমা বেগম। তিনি একই গ্রামের খাঁন বাড়ীর দুলাল খাঁনের স্ত্রী। তার ২ মেয়ে ও ১ ছেলে সন্তান রয়েছে। ফাতেমা বেগম প্রতিবেশী ও পাওনাদার গাজী বাড়ির প্রবাসী ফজলুল হকের রান্না ঘরের আড়ার সাথে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

নিহতের স্বামী দুলাল খাঁন জানান, প্রতিদিনের ন্যায় সোমবার ফজর নামাজ পড়ে তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম বের হন। মানুষের বাড়িতে কাজ-কর্ম করেন এবং প্রতিবেশী ও গ্রামের মানুষ তাদের সহযোগিতা করে থাকেন। এরপর ১০/১১টার দিকে ফিরে আসে। কিন্তু আজ (সোমবার) দুপুর পার হলেও ফিরে আসেনি। যার ফলে আমি মেয়েদের নিয়ে স্ত্রীকে খুঁজতে বের হই। এরপর আনুমানিক ৩টায় পাশের বাড়িতে (গাজী বাড়ি) খুঁজতে গেলে পাওনাদার প্রবাসী ফজলুল হকের রান্নাঘরের আড়ার সাথে আমার স্ত্রীকে ঝুলে থাকতে দেখি।

তিনি আরো জানান, প্রবাসী ফজলুল হকের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৪৫) তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমের নামে চারটি এনজিও সংস্থা (আশা, ব্রাক, আপ ও ইসলামী ব্যাংকের আরডিএস) থেকে পৃথকভাবে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ঋণের কয়েক কিস্তি পরিশোধ করার পর, গত মাসে জাহানারা বেগম তার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান। তারপর থেকে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় প্রতিদিন কিস্তি অফিসের (এনজিও) স্যারেরা এসে আমার স্ত্রী ও আমাকে চাপ-সৃষ্টি করতে থাকে।

কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। খুঁজি-বিচারী (ভিক্ষা করে) খাই, এতো টাকা দিমু কই থেকে (পরিশোধ করবো কিভাবে ?)। এই চিন্তায় আমার স্ত্রী জীবন দিছে (আত্মহত্যা করেছে)। এই সময় তিনি ও তার ২ মেয়ে, ১ ছেলের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।

স্থানীয়রা জানান, প্রবাসী ফজলুল হকের স্ত্রী জাহানারা বেগম নিজ নামে এবং এলাকার লোকজনের সাথে প্রতারণা করে, বিভিন্ন জনের নামে ও তাদেরকে জামিন করে বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ এবং মানুষের কাছ থেকে নগদ টাকা হাওলাত করে আনুমানিক এক মাস আগে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে অসহায় ও দরিদ্র দুলাল খাঁনের স্ত্রী ফাতেমা বেগমের নামেও ১ লাখ ৩৫ টাকা ঋণ নেয়া হয়। এই ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে, অসহায় ফাতেমা বেগম আত্মহত্যা করেন।

স্থানীয়রা আরো জানান, পলাতক জাহানারা বেগমকে নিয়ে এলাকার কিছু মানুষ ভিলেজ পলিটিক্স করে। জাহানারার কিছু সম্পত্তি (ভূমি) বিক্রি করে, কয়েকজন পাওনাদারের টাকা পরিশোধ করা হলেও নিহত ফাতেমা বেগমের ঋণের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। অথচ অসহায় ও দরিদ্র এই মহিলার ঋণের টাকা পরিশোধের কথা ছিলো।

অলি আহমেদ (৪০) নামের এক ভুক্তভোগি জানান, তার সাথে প্রতারণা করে এবং তাকে জামিনদার বানিয়ে ৯ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পালিয়ে যায় জাহানারা বেগম।স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইয়েদ বেপারী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে আসি এবং থানায় অবহিত করি।

চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদ হাছান জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads