মুফতি কাজী সিকান্দার
দুনিয়ার সবকিছুই আল্লাহর নেয়ামত। যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। জমিনে যা কিছু আছে তা আল্লাহতায়ালা মানুষের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। বাস্তবিকই প্রত্যেক জিনিস আমাদের খেদমতে বা সেবায় নিয়োজিত। এগুলোকে আল্লাহ আমাদের উপকারার্থেই সৃষ্টি করেছেন। মানুষ এগুলো থেকে উপকার হাসিল করবে। তবে অন্যয়ভাবে নয়। ন্যায়সঙ্গতভাবে তা ব্যবহার করতে হবে। ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থার নাম যাতে প্রত্যেক বিষয়ের সব সমস্যার সমাধান রয়েছে। প্রত্যেক কাজের ব্যবহারবিধি রয়েছে। যাতে মানবসমাজ সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে। কিন্তু আমরা অন্যায় করে তার গতিকে ব্যাহত করি। পশুপাখি আমাদের কাছে কী অধিকার রাখে। প্রথমত, পশুপাখির বাঁচার অধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের আয়ত্তাধীন প্রাণীর আহারের ব্যবস্থা করতে হবে।
পশুপাখির বাঁচার অধিকার : যে প্রাণী খাওয়া হালাল তা শরীয়ত মতো জবেহ করে আমাদের খাওয়া যাবে। অপ্রয়োজনে কোনো প্রাণীকে আঘাত করা যাবে না। যেমন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ সেই ব্যক্তির ওপর যে পশুর অঙ্গহানি ঘটায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৫৫১৫) অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জীবজন্তুদের বেঁধে রেখে (তীর বা বন্দুকের নিশানা ঠিক করার জন্য) হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৫৫১৪) বিনা প্রয়োজনে পশুকে হত্যা করার ব্যাপারে অনেক বড় হুঁশিয়ারি রয়েছে। স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে অভিশাপ দিয়েছেন। হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় পাপিষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে খামোখা পশু হত্যা করে। (হাকেম-সহিহুল জামে, হাদিস নং-১৫৬৭) অন্য এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি অধিকার ছাড়া একটি বা তার বেশি চড়ুই হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সে চড়ুই সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন? বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! অধিকার কী? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অধিকার হলো-তা জবাই করে খাওয়া হবে এবং মাথা কেটে ফেলে দেওয়া হবে না। (নাসায়ি-তারগীব, হাদিস নং-২২৬৬)
একদিন এক গাছের নিচে (পূর্ববর্তী) এক নবীকে পিঁপড়ে কামড়ে দিলে তিনি গর্তসহ পিঁপড়ের দল পুড়িয়ে ফেললেন। আল্লাহ তাঁকে ওহীর মাধ্যমে বললেন, তোমাকে একটি পিঁপড়ে কামড় দিল আর তুমি এমন একটি জাতিকে পুড়িয়ে মারলে যারা আমার তাসবীহ পাঠ করতো। তুমি একটিকেই মারলে না কেন? (বুখারি-মুসলিম, হাদিস নং-২২৪১) অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আগুনের মালিক আল্লাহ আর আগুনের মালিক ছাড়া আগুন দ্বারা শাস্তি দেওয়া আর অন্য কারো জন্য সঙ্গত নয়।’ কোনো প্রাণীকে বিনা প্রয়োজনে হত্যা করা বা তার অঙ্গহানি করা জায়েজ নেই। এ প্রাণীগুলোর বেঁচে থাকার অধিকার আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে। আজ আমরা বিভিন্ন প্রাণী হত্যা করে তাদের চামড়া, দাঁত ইত্যাদি বিক্রি করছি। অতিথি পাখি নিধন করছি। তা ইসলামের কাম্য নয়।
পশুপাখির পানাহারের অধিকার : যে পশু পাখি গৃহপালিত এবং যাকে কোনো খাঁচায় আটকানো হয়েছে তাদের পানাহারের ব্যবস্থা করতে হবে তাদের মালিককে। এক ব্যক্তি তার উটকে ঠিকমতো খেতে দিত না। তার পাশ দিয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাচ্ছিলেন, নবীজিকে উটটি দেখে আওয়াজ দিল এবং তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। তিনি উটের মালিককে ডেকে বললেন, তুমি এ জন্তুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর না কেন? আল্লাহ তোমাকে যার মালিক বানিয়েছেন, সে আমার কাছে অভিযোগ করেছে-তুমি তাকে ক্ষুধায় রাখ এবং ক্লান্ত করে ফেলো। (আবু দাউদ)। অন্য হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘এক মহিলাকে একটি বিড়ালের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সে তাকে বেঁধে রেখেছিল এবং অবশেষে সে মারা গিয়েছিল। পরিণতিতে মহিলা এর কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করল। সে যখন বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল, তখন তাকে আহার ও পানি দিত না এবং তাকে ছেড়েও দিত না যে, সে কীট-পতঙ্গ ধরে খাবে। (বুখারি, মুসলিম)
উপরে দুটি হাদিসে দুটি প্রাণীর আলোচনা করা হয়েছে। একটি গৃহপালিত পশু। অন্যটি গৃহপালিত পশু নয়, তবে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, গৃহপালিত পশুর প্রতিপালন অবশ্যই তার মালিককে করতে হবে। আর যে প্রাণী গৃহপালিত নয় তাকে যদি খাঁচায় বা অন্য কোনোভাবে বেঁধে রাখা হয় তখন ওই প্রাণীর আহারের ব্যবস্থা করতে হবে সেই ব্যক্তিকে যে বেঁধে রেখেছে। না হয় বড় ও কঠিন শস্তি হবে। এর বাইরে যে প্রাণী রয়েছে তাদেরকেও যদি আহার করানো হয় তাতে আল্লাহতায়ালা অধিক সাওয়াব দেবেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রত্যেক সজীব প্রাণবিশিষ্ট জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শনে সওয়াব বিদ্যমান। (বুখারি, হাদিস নং-২৪৬৬) উক্ত হাদিসে এক ব্যক্তি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে জান্নাতি হওয়ার সুসংবাদের ঘটনাও বর্ণিত হয়েছে।
লেখক : পরিচালক, ইসলাম বাংলাদেশ আশরাফাবাদ, ঢাকা