পলিথিনের ব্যবহার বেড়েছে তিনগুণ

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

ঝুঁকিতে পরিবেশ

পলিথিনের ব্যবহার বেড়েছে তিনগুণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ জুন, ২০২২

দেশে দিনদিন প্লাস্টিকজাত পণ্যের ব্যবহার বেড়ে চলায় হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। ১৫ বছরে দেশে পলিথিনের ব্যবহার বেড়েছে তিনগুণ। যা যত্রতত্র ফেলায় ভরাট হচ্ছে নদী, খাল ও পয়ঃনিষ্কাশনের নালা। ভেঙে পড়ছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা।

এছাড়া, চায়ের কাপের মতো ওয়ানটাইম প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহারও অনেক বেড়েছে। প্রতিদিন এখানে-সেখানে ফেলা হচ্ছে কোটি কোটি প্লাস্টিকের চায়ের কাপ। যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কাঁচাবাজার, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পণ্য বহনে ব্যবহূত হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। এর রয়েছে আরো নানামুখী ব্যবহার। দিনদিন যা বাড়ছে। একবার ব্যবহারের পর পলিথিন যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে। যা পরিবেশকে ঠেলে দিচ্ছে হুমকির মুখে। পলিথিনের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার, উৎপাদন, বিপণন নিষিদ্ধ হলেও এর ব্যবহার কমছে না।

দেশে কাচ বা সিরামিক কাপের পরিবর্তে প্লাস্টিকের ওয়ানটাইম কাপের ব্যবহারও বেড়েছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির পর। আর ব্যবহার শেষে সেগুলো ছুড়ে ফেলা হচ্ছে রাস্তা, ফুটপাত কিংবা ড্রেনে।

এই সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতার কারণ হিসেবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, আইন প্রয়োগের শিথিলতা ও পরিবেশ রক্ষায় মানুষের চরম উদাসীনতার কথা। পলিথিন বর্জ্যের কারণে ভরাট হচ্ছে খাল-বিল-নদী। দূষিত হচ্ছে জলাশয়ের পানি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল হয়ে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার। দুর্ভোগের শিকার হয় নগরবাসী।

পলিথিন উৎপাদন বন্ধ করে পরিবেশবান্ধব শপিংব্যাগ বাজারজাতকরণের তাগিদ  বিশেষজ্ঞদের। চা-কফি পান করতে প্লাস্টিকের কাপের পরিবর্তে কাচ বা সিরামিকের কাপ কিংবা মাটির ভাড় ব্যবহার করার পরামর্শ তাদের। 

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশের ক্ষতি করে, এমন পণ্য নানা রঙ-বেরঙের বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করা যাবে না। আমরা এগুলোর বিরুদ্ধে প্রচারে নামব। কারণ, পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার আমাদের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। এটা একধরনের আত্মহত্যার শামিল, তাই এগুলোর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। উচ্চ আদালতের এক রায়ে বলা হয়েছে, সব হোটেল-মোটেলে পলিথিন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক বন্ধ করতে হবে।

ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) সেক্রেটারি জেনারেল ড. শাহরিয়ার হোসেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বলেন, প্লাস্টিক মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি হয়। এর জীবনকালের মধ্যে শুধু পরিবেশকে ক্ষতি করে না, এটি গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করছে। এটি পরিবেশের তিনটি প্রধান উপাদান মাটি, পানি ও বায়ুর ক্ষতি করছে। আর প্লাস্টিক পণ্য তিনবারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।

তিনি আরো বলেন, প্রতি ১১ বছরে বিশ্বে সমুদ্রে প্লাস্টিক জমা হওয়ার পরিমাণ দ্বিগুণ হচ্ছে। ভাতের মধ্যেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। আমরা একবেলা ভাত খেলে বছরে শরীরে এক কেজি মাইক্রোপ্লাস্টিক জমা হচ্ছে। এটা ধীরে কাজ করে, এমন একধরনের বিষ। এর ফলে গত ১৫ বছরে দেশে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫গুণ বেড়েছে। এখন শিশুরাও ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। এর প্রধান কারণ কেউ খুঁজে পাচ্ছেন না।

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ইকবাল আহমেদ বলেন, প্লাস্টিকের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। তবে তা বাস্তবায়ন করতে হলে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের অন্য বিভাগগুলোতে তা থাকতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতন করা যেতে পারে।

বেসরকারি সংস্থা ওয়েস্ট কনসার্নের নির্বাহী পরিচালক আবু হাসনাত মো. মাকসুদ সিনহা বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলে রাখার অনেকগুলো জায়গা আমরা চিহ্নিত করেছি। অর্ধেক প্লাস্টিক মাটিতে গিয়ে মিশছে। তবে একবারে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না, পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) মুহাম্মদ সোলায়মান হায়দার বলেন, প্লাস্টিক একটি বড় ধরনের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ। এটি সর্বোপরি মানবস্বাস্থ্যের ওপরে বড় প্রভাব ফেলছে। হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, উপকূলীয় এলাকায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। চা-বাগান এবং মাছের পোনায় ব্যবহারে পলিথিনের পুরুত্বের সীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন হাজার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সেখান থেকে ১৮ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রচার-প্রচারণা দিয়ে মানুষের প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না। আমরা এখন কঠোর হতে যাচ্ছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads