পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই

প্রতীকী ছবি

মুক্তমত

পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই

  • প্রকাশিত ৩ অক্টোবর, ২০২০

মারুফ হোসেন

 

 

একটি দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে সে দেশের জনগণের দক্ষতার ওপর। জনগণ সুশিক্ষিত,  দক্ষ, পরিশ্রমী হলে দেশও  উন্নত হয়। অপরদিকে শ্রমবিমুখ অদক্ষ জনগণ রাষ্ট্রের জন্য বোঝাস্বরূপ।  ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’— এ প্রবাদটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি উন্নত। প্রতিষ্ঠিত বা সফল হয়ে এ পৃথিবীতে কেউ জন্মগ্রণ করে না, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষকে প্রতিযোগিতামূলক এ বিশ্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে হয়। কঠোর পরিশ্রম না থাকলে, শুধু প্রতিভা দিয়েও সাফল্য লাভ করা যায় না। দেখা যায়, অনেক দুর্বল  ছাত্রও কঠোর অধ্যবসায়ের দ্বারা ভালো ফল লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। তেমনি অনেক মেধাবী ছাত্রও শ্রমবিমুখতার কারণে পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল করতে ব্যর্থ হয়। জীবনে সফল হওয়ার কোনো শর্ট টেকনিক নেই। পৃথিবীতে যারা সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছেন তাদের সাফল্যের মূলে রয়েছে নিরলস পরিশ্রম আর অধ্যবসায়।

জীবন পুষ্পশয্যা নয়। কঠোর পরিশ্রম, সাধনা, অধ্যবসায় ছাড়া কোনো বিজ্ঞানী,  কবি, সাহিত্যিক বা দিগ্বিজয়ীর পক্ষেই আপন কীর্তিগাথা রচনা করা সম্ভব হয়নি।  আলবার্ট আইনস্টাইনের কথা আমরা সবাই জানি। তিনি পড়াশোনায় ছিলেন অনেক দুর্বল। কোনো কিছুই মনে রাখতে পারতেন না। ফেল করেছেন বারবার। তাই বলে তিনি কিন্তু থেমে যাননি। কঠোর পরিশ্রম আর নিজের চিন্তাশক্তি, মেধাকে কাজে লাগিয়ে করেছেন বিশ্বজয়। জাপানের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদো সুগার কথা ধরা যাক। বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ জম্ম নিয়েছিলেন একজন স্ট্রবেরি চাষির ঘরে। অর্থের অভাবে একসময় তার পড়াশোনা বন্ধ হয়েছিল। তাই বলে জীবনসংগ্রাম বন্ধ করে দেননি। পড়াশোনার খরচ জোগাতে কার্ডবোর্ড ফ্যাক্টরি ও মাছের বাজারে কাজ করেছেন তিনি। মেধা আর কঠোর পরিশ্রমের ফলেই আজ তিনি জাপানের মতো একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন। স্টিভ জবস, যার থাকার মতো ঘর পর্যন্ত ছিল না। বন্ধুদের ঘরের মেঝেতে ঘুমাতে হতো তাকে। একবেলা ভালো খাবার খাওয়ার আশায় সাত মাইল হেঁটে যেতেন মন্দিরে। তিনি আজ বিখ্যাত অ্যাপল কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা। প্রকৃতপক্ষে,  ব্যক্তি ও সামাজিক সকল ক্ষেত্রে উন্নতি লাভের জন্য কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই।

তবে দুঃখের বিষয় হলো, দিন দিন আমাদের দেশের তরুণরা শ্রমবিমুখ হয়ে পড়ছে। ফেসবুক, টিকটক,  ভিডিও গেম ও ইন্টারনেটে অযথা মূল্যবান সময় নষ্ট করছে তারা। পড়ার টেবিলে বসে মেসেজিং, চ্যাটিং করার ফলে বই পড়ার প্রতি মনোযোগ হ্রাস পাচ্ছে তাদের। এছাড়াও বিভিন্ন সাইটে ঢুকে অনৈতিক সব ভিডিও ক্লিপ, ফটো— এমনকি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছে তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটের অতি ব্যবহার শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে। কানাডার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দৈনিক গড়ে ৩০ মিনিটের বেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় ব্যয় করলে তা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ফেসবুক, মেসেঞ্জারে তারা যে সময়টুকু অপব্যয় করছে, যদি সে সময়টুকু তারা পড়াশোনা বা অন্য কোনো মহৎ কাজে ব্যয় করত তাহলে তা দেশের জন্যই কল্যাণকর হতো। কিন্তু বর্তমান এই পরিস্থিতি জাতির জন্য অশনিসংকেতই বটে।

প্রবাদ আছে— ‘সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না’। যে মুহূর্তটি অতীতের গহ্বরে একবার চলে যায় তা আর ফিরে আসে না। তাই সময়কে মূল্য দিতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। তরুণদের সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমরা কিন্তু ঘরেই বসে আছি।  বসে, শুয়ে বা অবহেলায় এ সময়টা নষ্ট না করে, আমরা সৃজনশীল বিভিন্ন কাজে সময়কে লাগাতে পারি। নিঃসঙ্গ সময়ে বইয়ের চেয়ে ভালো বন্ধু কিছু হতে পারে না। তাই বেশি বেশি বই পড়া যেতে পারে। প্রতিযোগিতামূলক এ বিশ্বে বহুমুখী দক্ষতার বিকল্প নেই। দেশের তরুণদের তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এলইডিপি)-এর আওতায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের অধীনে বিনামূল্যে প্রফেশনাল আউটসোর্সিং ট্রেনিং প্রদান করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মধ্যে আছে— গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন ্যাান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং ডিজিটাল মার্কেটিং। আমরা কিন্তু বিনামূল্যে এ কোর্সগুলো করে নিতে পারি।

মোদ্দা কথা হলো, আধুনিক পৃথিবী কর্ম ও শ্রমমুখর। জগতে যারা আপন কীর্তিগাথা ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলেন, তাদের প্রত্যেকের সাফল্যের পেছনে রয়েছে নিরলস পরিশ্রম ও সাধনা। তাই তরুণদের পরিশ্রমী ও উদ্যমী হতে হবে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ধর্মতত্ত্ব অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads