পরিবারই আমার অনুপ্রেরণা

ছবি সংগৃহীত

শোবিজ

পরিবারই আমার অনুপ্রেরণা

  • প্রকাশিত ১৭ জুন, ২০১৯

পুরো নাম খান আসিফুর রহমান আগুন। ১৯৯৩ সালে ‘বাবা বলে ছেলে নাম করবে’ এবং ‘ও আমার বন্ধু গো...’ গান দিয়ে তিনি ছড়িয়ে পড়েছিলেন বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে, সব শ্রেণির মানুষের কণ্ঠে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা খান আতাউর রহমান ও কণ্ঠশিল্পী নিলুফার ইয়াসমীনের সন্তান তিনি। আশির দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত দেশের সংগীতাঙ্গনে যে ক’জন শ্রোতাপ্রিয় সংগীতশিল্পী আছেন, আগুন তাদের মধ্যে অন্যতম। সংগীত, চলচ্চিত্র, নাটক, উপস্থাপনা অর্থাৎ সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে তার অবাধ পদচারণা। আগুনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রবিউল কমল

গায়ক আগুন হয়ে ওঠার শুরুর গল্প

১৯৮৮ সালে আমরা সাডেন নামে একটি ব্যান্ড দল করি। আমাদের দলে পাঁচজন সদস্য ছিল। আমরা ওই ব্যান্ড থেকে ১৯৯০ সালে প্রথম অ্যালবাম বের করি। অ্যালবামটির নাম ছিল অচেনা। তখন শ্রোতাদের কাছে এটি খুব হিট হয়েছিল। এভাবেই আমার শুরু, তারপর থেকে তো চলছেই।

প্লে-ব্যাকে এলেন যেভাবে-

আমি ১৯৯২ সালে চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক শুরু করি। আমার গাওয়া গান নিয়ে প্রথম রিলিজড সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। একদিন সুরকার আলম খান আমাকে ডেকে বললেন, ‘গান গাইতে হইবো!’ আমি ছবির নাম জানতে চাইলে চাচা বললেন, ছবির নাম ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। তিনি আরো বললেন, আমার সঙ্গে গান গাইবেন রুনা লায়লা। রুনা লায়লার সঙ্গে এটিই আমার প্রথম গান গাওয়া। একই সঙ্গে ৪টি গানের রেকর্ড করা হয়। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর ভীষণ হিট করেছিল। ছবির গানগুলোও শ্রোতারা খুব পছন্দ করেছিল। অনেকে বলেন, ছবিটি ভারতীয় ছবির নকল। আসলে কথাটি সত্য নয়। ছবিটির কপিরাইট কিনে নেওয়া হয়েছিল।

আপনার অনুপ্রেরণা?

আমার বড় অনুপ্রেরণা ছিল আমার পরিবার। আসলে আমাদের পাঁচ ভাই-বোনের কাউকেই আব্বা-আম্মা জোর করে কিছুই করাননি। আমি ছোটবেলা থেকে সারাদিনই বাসায় দেখতাম আম্মা সংগীতচর্চা করছেন এবং বিকেলে আব্বা চলচ্চিত্রবিষয়ক মিটিং করছেন। সবসময় সাংস্কৃতিক আবহে বেড়ে ওঠাটাই আমার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এমন একটি পরিবেশে বেড়ে উঠেছি বলেই হয়তো শিল্পী না হয়ে কিংবা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে না এসে কোনো উপায় ছিল না।

নিজের পরিবার নিয়ে মন্তব্য-

আমার মা, খালা ও বাবা নিয়ে আসলে নতুন করে বলার মতো কিছু নেই। তাদের নিয়ে বলাটা নতুনত্বের পর্যায়ে পড়ে না। তাদের সবাই চেনেন। তাদের সম্পর্কে আসলে সবাই জানেন।

দীর্ঘ সংগীতজীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা-

বিচিত্র অভিজ্ঞতা বলতে গেলে বলতে হয় প্রতিটি অভিজ্ঞতা একটি অপরটি থেকে আলাদা। কতটুকু আলাদা, তা এর গভীরে প্রবেশ না করলে বোঝা যাবে না। বিচিত্র ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে এই শিল্পাঙ্গনে একজন শিল্পী আরেকজন শিল্পীর পেছনে কতটা কুৎসা রটনা করতে পারে তা দেখেছি। এ ধরনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। আরেকটি কথা, তাহলো- সংগীতজীবন তথা শিল্পজীবন মানুষকে ব্যাপক সমৃদ্ধ করতে পারে; যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমি নিজেই। আমি মানুষের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।

মজার স্মৃতি-

আমার নাম নিয়েই তো অনেক মজার স্মৃতি রয়েছে। এ মুহূর্তে একটা ঘটনা মনে পড়ল। ঘটনা বলার আগে একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে। আমি তখন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে একটা শো করতে গিয়েছিলাম। সালটা মনে নেই। তবে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মাত্র রিলিজ হয়েছে। বছরখানেক হবে হয়তো। আমি সিরাজগঞ্জ শহরের ভেতর মাত্র ঢুকেছি। তখন মুখে মুখে প্রচার হয়ে গেছে অমুক গাড়িতে করে আগুন ভাই আসছে। তো সেই শহরে পা দেওয়ার পর আগুন আসছে আগুন আসছে রব উঠে গেছে। চারদিকে আগুন আগুন শব্দ আর মানুষের ছোটাছুটি। পরে ফায়ার সার্ভিস চলে এসেছে এবং শুধু এটিই না- বেশ কয়েকটি জায়গায় এমন হয়েছে যে আমি গেছি আর আগুন আগুন বলায় এলাকা ফাঁকা হয়ে গেল। আমি আরামে স্টেজে উঠেছি। আমার নামটা আগুন হওয়ায় কত মহাযন্ত্রণা থেকে বেঁচে গেছি। আগুন আসছে বললে আমাকে দেখতে যাওয়ার আগে আগুন লাগছে মনে করে সবাই আগুন নেভাতে দৌড় দিয়েছে। আর আমি সেখান থেকে নিরাপদে চলে এসেছি। এ ধরনের অনেক হাস্যকর মজার ঘটনা আমার জীবনে আছে।

গায়ক, অভিনেতা, উপস্থাপক, সুরকার ও গীতিকার- এর মধ্যে প্রিয় পরিচয়?

এক্ষেত্রে আমি বলব, সবার আগে আমি একজন গায়ক। তারপর অভিনেতা বা অন্যকিছু।

একসময় পত্রিকায় লিখতেন। লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?

আমি সাধারণত ব্যঙ্গাত্মক লেখা লিখতাম। সামাজিক বিভিন্ন সমস্যাকে কেন্দ্র করে গল্পের আকারেই লেখাগুলো লিখেছি। যারা লেখাগুলো পড়েছেন, তারা বুঝতে পারতেন যে, সমাজের কোন বিষয়টিকে সেখানে আঘাত করা হয়েছে এবং তুলে আনা হয়েছে। পাশাপাশি পত্রিকায় কলাম লিখেছি। এখন লেখালেখি থেকে বেশ দূরে আছি। বর্তমানে অসংখ্য মানুষের মধ্যে মঞ্চে পারফর্ম করার সময় কথাচ্ছলে মেসেজ পৌঁছে দেওয়াটাই আমার এই মুহূর্তে বেটার মনে হচ্ছে। যেহেতু শিক্ষিত ও ভালো পাঠক-শ্রোতা আমরা দিন দিন হারাচ্ছি, তাই সরাসরি শ্রোতা-দর্শকদের কাছে মেসেজ পৌঁছে দেওয়াটাই বেশ উপযোগী বলে আমি মনে করি।

প্রিয় লেখক?

আমি একসময় প্রচুর বই পড়তাম। রবীন্দ্রনাথ আমার প্রিয় লেখক। এছাড়া নজরুল ও শীর্ষেন্দুর লেখাও পড়তাম। তবে এখন আর বই পড়া হয় না। পড়ব কীভাবে, বই পড়ার সংস্কৃতিই তো দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

অবসর যেভাবে কাটে?

আমি সবসময় গানি নিয়ে থাকি, গিটারে টুংটাং করি। তাই আমার কোনো অবসর নেই।

নতুনদের জন্য আপনার পরামর্শ?

নতুন প্রজন্ম সম্পর্কে আমি ভীষণভাবে আশাবাদী। কিন্তু নৈরাশ্য আমার মধ্যে কাজ করে যে, একটি মানুষের জ্ঞানভান্ডার পূর্ণ হওয়ার আগেই সে যদি অতিরিক্ত লাফালাফি করে এবং সোসাইটি তাকে নিয়ে যদি অতিরিক্ত লাফালাফি করে, তাহলে সে ছিটকে পড়তে বাধ্য। মানুষের ধারণক্ষমতাটা বুঝতে হবে। একজন যদি গান গাইতেই থাকে গাইতেই থাকে, তাহলে তার নতুন কী দেওয়ার থাকে? ফলে শ্রোতারা মুখ ফিরিয়ে নেন। তার পরও কিছু কিছু মানুষ আছে সুপারম্যানের মতো। তবে আধুনিকতাকে ধারণ করে তারা কেন শেকড়ে ফিরে যাচ্ছে, সেটা আমার কাছে বড় বিস্ময়। গান নিয়ে আমার চিন্তা হলো আধুনিকতাও থাকবে, শেকড়টাও থাকবে। আমরা বড় বড় রেস্টুরেন্টে গেলে দেখি মাটির বাসনে করে খাবার দেওয়া হচ্ছে। সবাই শেকড়ে ফিরে যাচ্ছে। তাহলে সংগীতে কেন নয়? এখন আমি যে ঘর থেকে এসেছি, আমি তো যা ইচ্ছা করতে পারি না। রাজপুত্র হওয়াটাও বিরাট দোষের। রাজপুত্র মানে রাজ্যটাকে দেখভালের দায়িত্ব তার। দশজনকে বোঝানোর দায়িত্ব তার। আমি চাই সংগীত তার সঠিকপথে থাকুক। সব দায়িত্ব আমার কাঁধে এখনো আসেনি। আল্লাহ জানেন কবে সেই দায়িত্বটা কাঁধে আসবে। আমি মনে করি এ দায়িত্বটা আমাদের মতো কিছু মানুষের কাঁধে আসার সময় ঘনিয়ে আসছে। আমি সবসময় সুবীর নন্দী চাচা, নিলয় দা, সঞ্জীব দা তাদের বলতাম কিছু একটা করতে। আর নতুনদের বলব, তারা সততা নিয়ে কাজ করুক। গানটা ভালোভাবে শিখে তারপর এই জগতে আসুক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads