ফিচার

পবিত্র কোরআন পড়া শিখুন মাত্র ২৭ ঘণ্টায়

  • প্রকাশিত ২৩ নভেম্বর, ২০১৮

পবিত্র কোরআনুল করিম লওহে মাহফুজের অধিপতি আল্লাহ মহানের কালাম। এর ভাষাশৈলী ও শিল্পমান সবই আল্লাহতায়ালার নিজস্ব শান অনুযায়ী নির্মিত। পবিত্র কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্বও মহান রাব্বুল আলামিন তার নিজ জিম্মায় রেখেছেন। এই মর্মে তিনি ইরশাদ করেছেন- ইন্না নাহনু নাজ্জালনাজ জিকরা ওয়া ইন্না লাহু লা হাফিজুন অর্থাৎ আমিই নাজিল করেছি কোরআন এবং আমিই তার সংরক্ষণকারী। (সুরা হিজর, আয়াত-৯)

মহান আল্লাহর বান্দা হিসেবে পবিত্র কোরআন সংরক্ষণ, লিপিবদ্ধকরণ এবং কোরআন শেখার বিভিন্ন পথ ও পদ্ধতি আবিষ্কারের মহান কাজ দিতে গিয়ে মানুষ এমনসব কৃতিত্ব দেখিয়েছে, যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের অধ্যায় আলোকিত করে রেখেছে যা। রসুল (সা.)-এর স্বর্ণযুগ থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত প্রত্যেক যুগেই এমন কিছু লিপিকারের আবির্ভাব-উপস্থিতি ছিল, যাদের একমাত্র কাজই ছিল পবিত্র কোরআন লিপি ও সংরক্ষণ করা এবং পবিত্র কোরআন শেখার পথ ও পদ্ধতি আবিষ্কার ও সহজ করা। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ভাষায় কোরআন ভাষান্তরিত হয়েছে এবং প্রায় প্রত্যেক ভাষাতেই আবিষ্কৃত হয়েছে কোরআন শেখার অভিনব ও বিজ্ঞানসম্মত বিভিন্ন পদ্ধতি।

পবিত্র কোরআন শেখা ও শেখানোর বিভিন্ন মাধ্যম আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরাও কোনো অংশে পিছিয়ে থাকেননি। বাংলা ভাষায় বিভিন্ন পদ্ধতির কোরআন শেখার মাধ্যম আবিষ্কৃত হয়েছে এবং প্রায় সব পদ্ধতিই কমবেশি মুসলমানদের কাছে সমাদৃত হয়েছে। সহজভাবে খুব অল্প সময়ে পবিত্র কোরআন শেখার অভিনব ও বিজ্ঞানভিত্তিক একটি পদ্ধতি সংকলন করেছেন প্রকৌশলী মইনুল হোসেন। তার সংকলিত পদ্ধতিটির নাম ‘নূরানী পদ্ধতিতে ২৭ ঘণ্টায় কোরআন শিক্ষা’। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে মীনা বুক হাউজ। অভিনব এই আয়োজনটি নিয়ে কথা হয় মইনুল হোসেনের সঙ্গে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি একজন প্রকৌশলী। কোরআন গবেষণা করা বা কোরআন নিয়ে কাজ করার ভাবনাটা আপনার মধ্যে কীভাবে এলো? তিনি বলেন, ‘২০০৫-০৬ সালের দিকে আমার মনে হলো কোরআনটা ভালো করে শেখা প্রয়োজন। তখন আমার এক আপা মাওলানা আবদুল বাতেন নামের একজন আলেমেদ্বীনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনিসহ আরো কয়েকজন আলেমেদ্বীনের কাছে কোরআন পড়া শিখেছি। কিন্তু তার পড়ানোর পদ্ধতিসহ সবকিছু আমার যতটা ভালো লেগেছে, অন্য কারোরটা ততটা ভালো লাগেনি। এরপর ২০১৩ সালের দিকে আব্বা বলেন, তুমি আমাকে কোরআন শেখাও। আমি তাকে কোরআন শেখাতে শুরু করলাম। একদিন বাবা বললেন, আমার তো বয়স হয়েছে, অক্ষরের নাম মনে থাকে না। তুমি আরবি হরফের নিচে বাংলায় উচ্চারণগুলো লিখে দাও এবং কিছু হোমওয়ার্ক দাও। আমি বাজার থেকে কোরআন শিক্ষার অনেক বই কিনে আনলাম কিন্তু কোনোটায় হোমওয়ার্কের কোনো বিষয় পেলাম না। তখন কিছুটা সমস্যায় পড়ে যাই। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে হোমওয়ার্কভিত্তিক কোরআন শেখার পদ্ধতি তৈরি করতে থাকি এবং বাবাকে পড়াতে থাকি। এভাবে কিছুদিন পড়ানোর পর মনে হলো, এভাবে যদি একটি বই করি তাহলে সাধারণ মানুষ, যারা কোরআন শিখতে চায়, তাদের কাজে লাগবে।

আপনি তো বেশকিছু বই ঘাঁটাঘাঁটি করে আপনার বইটি প্রকাশ করেছেন। অন্যান্য বই থেকে আপনার বইয়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী?

মইনুল হোসেন : আমার বইটিতে আমি এমন অনেক বিষয় যুক্ত করেছি, যা বাজারে থাকা সাধারণ কোনো কোরআন শিক্ষাবিষয়ক বইতে পাওয়া যাবে না। আমার বইয়ের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, আমি এটাকে কোনো বই বলি না। আমি বলি, এটি কোরআন শিক্ষাবিষয়ক একটি হোমওয়ার্কের খাতা। মানুষ শিখতে শিখতে লিখবে এবং লিখতে লিখতে শিখবে। এছাড়া বর্তমানে পাঠকের চাওয়া হচ্ছে স্পেসিফিক। আমার বইয়ে সেই স্পেসিফিক বিষয়টি রয়েছে। আমার বইয়ের মূল বিষয়টি হচ্ছে ২৭ ঘণ্টায় কোরআন শিক্ষা। কোনো একজন পাঠক যদি দৈনিক এক ঘণ্টা করে বইটি পড়েন, তাহলে তিনি ২৭ দিনে ২৭ ঘণ্টায় মোটামুটিভাবে কোরআন শুদ্ধভাবে পড়তে পারবেন। বইটির আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, প্রত্যেক এক ঘণ্টা পড়ার পরে একটা পরীক্ষা রয়েছে। এমন পদ্ধতি আরো কোনো বইয়ে নেই এবং এই বইয়ে প্রশ্নের উত্তরও দেওয়া আছে। সুতরাং পরীক্ষা দেওয়ার পর পাঠক কতটুকু পড়লেন, সেটা চেক করতে পারবেন।

 

আপনার বইয়ের একটা আলাদা ভারতীয় সংস্করণ দেখছি, এটা কেন করেছেন?

মইনুল হোসেন : বাংলাদেশে ভালো চলার পর লক্ষ করলাম ভারতেও বেশ ভালো চলছে। তা ছাড়া ভারতেও বাংলা ভাষাভাষী অনেক মুসলিম আছে, তাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। যা হোক, বইটি অনেক হাত ঘুরে যখন ভারতের একজন পাঠকের হাতে যায়, তখন বইটির মূল্য দাঁড়ায় ভারতীয় ১৭০ রুপির মতো। তাতে করে বইটির দাম অনেক বেশি পড়ে যায়, যেটা সাধারণ একজন পাঠকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। তাই আমি ভারতীয় একজন প্রকাশকের সঙ্গে কথা বললাম এবং সেখান থেকে বইটি প্রকাশের ব্যবস্থা করলাম।

 

আপনার বইটি পড়ার বিষয়ে পাঠকদের প্রতি বিশেষ কোনো দিকনির্দেশনা আছে?

মইনুল হোসেন : পাঠককে বলব, বইটি পড়ার আগে দৃঢ় নিয়ত করতে হবে যে আমি বইটি পড়ে শিখব। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, একটা সময় নির্দিষ্ট করে নিতে হবে, যেন প্রতিদিন একই সময়ে পড়া হয়। সেটা হতে পারে ফজর নামাজের পরে বা এশারের পরে। তৃতীয় বিষয় হচ্ছে, বইটি পড়ার মাঝে নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় রাখতে হবে।

 

বাংলা ভাষায় রচিত কোরআন শিক্ষাবিষয়ক সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য গ্রন্থ ‘নূরানী পদ্ধতিতে ২৭ ঘণ্টায় কোরআন শিক্ষা’। এটি এখন শুধু একটি গ্রন্থই নয়, আপামর জনসাধারণের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে প্রকৌশলী মইনুল হোসেন বইটির আলাদা ওয়েবসাইট, উচ্চারণসমৃদ্ধ মোবাইল অ্যাপস এবং সফটওয়ার তৈরি করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। লাখ লাখ প্রযুক্তি জাহান্নামের দিকে যাচ্ছে। আমরা কেন প্রযুক্তি ব্যবহার করে জান্নাতের দিকে যেতে চেষ্টা করব না?

 

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন : মিরাজ রহমান

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads