পদ্মা-যমুনায় নতুন করে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা পাড়ের ফসলী জমি ও ঘরবাড়ি বিলিন হতে শুরু করেছে। হুমকির মুখে পড়েছে দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তীব্র নদী ভাঙনে গত এক সপ্তাহে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ঢল্লাপাড়া ও জলিল মন্ডলের পাড়া এবং দেবোগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়াজানি গ্রামের নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে কয়েকশ বিঘা ফসলী জমি। ইতিমধ্যে ভাঙন আতঙ্কে নদীর তীরবর্তী শতাধিক বসতবাড়ি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকির মুখে পড়েছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ও ঘাট সংলগ্ন বসতবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা।
আজ বুধবার সরেজমিনে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট সংলগ্ন ঢল্লাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদী ভাঙন দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ সেখানে ভীর করেছে। ক্ষতিগ্রস্থদের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক পরিবার তাদের দীর্ঘদিনের ঠিকানা থেকে সহায় সম্বল গুটিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। কোথায় যাচ্ছেন জানতে চাইলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক হানিফ প্রামানিক নামে একজন কাজ হতাশা নিয়ে বলেন, ‘কুনজাগা যামু জানিনা, গাঙে সব যাওয়ার আগে যতদুর পারি সরাই, হেরপর ঠিক করবানে কই যামু।’
অপরদিকে উপজেলার দেবোগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়ালজানি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চোখের নিমিশেই বিলিন হচ্ছে ফসলী জমি। এ সময় কাওয়াজানি গ্রামের বাসিন্দা ফরিদ শেখ বলেন, গত এক সপ্তাহ যাবত এই এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কমপক্ষে একশত বিঘা ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে গত একসপ্তাহে কমপক্ষে ১শ বসতবাড়ি সরিয়ে নিতে হয়েছে। অনেকে জমিজমা না থাকায় অন্যের জমি অথবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
দেবোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতর আলী সরদার বলেন, ‘কয়েক বছরের পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে ইউনিয়নটির অর্ধেকের বেশী নদীতে চলে গেছে। এই ইউনিয়নের প্রতি কারো কোন নজর নেই। মানুষের হাহাকার দেখে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রশাসনের কাছে বার বার গিয়েছি। আমাদের একটিই চাওয়া ছিলো ত্রান নয়, নদী শাসন চাই। কিন্তু কার্যকর কোন ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে এখন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সফিকুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের বর্ষা মৌসুম শুরুতে রাজবাড়ী জেলার ১৯ টি পয়েন্টে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছিলো। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে কাজ করেছে। নতুন করে গত এক সপ্তাহে ৩০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে জরুরী ভিত্তি গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের জন্য দুটি প্যাকেজে ১২ হাজার ৮ শত বস্তা জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।