পদ্মাসেতুর ২১০০ মিটার দৃশ্যমান

লৌহজংয়ের মাওয়া প্রান্তে শনিবার বিকারৈ পদ্মাসেতুর ১৪তম স্প্যান বসানো হয়েছে। এর ফলে দৃশ্যমান হল ২১০০ মিটার

ছবি : বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

১৪ তম স্প্যান স্থাপন

পদ্মাসেতুর ২১০০ মিটার দৃশ্যমান

* মূল সেতুর ৮০ শতাংশ কাজ সম্পূর্ন্ন

  • লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৯ জুন, ২০১৯

মো. মানিক মিয়া, সেতু এলাকা থেকে ফিরে

পদ্মাসেতুতে ১৪তম স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) বসানো হয়েছে। শনিবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে টার দিকে স্প্যানটি বসানো হয়। স্প্যানটি বসানোর ফলে এখন সেতুর ২ হাজার ১০০ মিটার দৃশ্যমান। পদ্মা নদীর মাওয়া প্রান্তে ১৫ ও ১৬ নম্বর খুঁটিতে স্প্যানটি বসানো হয়। এখন পর্যন্ত সেতুর জাজিরা প্রান্তে নয়টি, মাওয়া প্রান্তে তিনটি স্থায়ী, একটি অস্থায়ী ও নদীর মাঝে একটি স্প্যান বসানো হয়।

সেতু বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ূন কবির জানান, গত বৃহস্পতিবার ৩-সি নম্বর ১৪তম স্প্যানটি বসানোর নির্ধারিত দিন ছিল। এজন্য ওই দিন সকালে মাওয়ার কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ৩৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন ‘তিয়ান ই’ দিয়ে ১৫ ও ১৬ নম্বর পিয়ারের কাছে নেওয়ার কাজ শুরু হয়। বৈরী আবহাওয়ার ও পলি জমার করণে সেদিন বসানো যায়নি। এবং বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয় ড্রেজিংয়ের কাজ। এরপর গত শুক্রবার ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় ৩৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন ‘তিয়ান ই’ দিয়ে ১৫ ও ১৬ নম্বর পিয়ারের কাছে নেওয়ার সম্ভব হয়নি। ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ করে এবং বৈরী আবহাওয়া ভালো থাকায় শনিবার সকাল থেকে স্প্যানটি ওঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি আরো বলেন, আজকে (শনিবার) যেকোন মূল্যে স্প্যানটি বসানোর জন্য বদ্ধপরিকর ছিলাম।

এ দিকে এ নিয়ে চলতি বছরের ছয় মাসে আটটি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়। সবশেষ গত ২৫ মে ১৩তম স্প্যানটি বসানো হয়েছিল। এদিন মাওয়া প্রান্তে ১৪ ও ১৫ নম্বর পিয়ারের ওপর বসানো হয় এই স্প্যান। তখন সেতুর ১ হাজার ৯৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মাসেতু। ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যানটি। গত বছরের ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান। একই বছরের ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়। গত বছরের ২৯ জুন পঞ্চম স্প্যান বসানো হয় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়। গত বছরের শেষ দিকে মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর একটি স্প্যান বসানো হয়। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের ষষ্ঠ স্প্যান বসে। গত ২০ ফেব্রুয়ারিতে জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৫ নম্বর পিলারের ওপর অষ্টম স্প্যান বসানো হয়। সেতুর ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর গত ২২ মার্চ নবম স্প্যান বসে। চলতি বছরের ১০ই এপ্রিল মাওয়া প্রান্তে ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের ওপর দশম স্প্যান, ২৩ এপ্রিল শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারের ওপর ১১তম স্প্যান। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝামাঝি স্থানে ২০ ও ২১ নম্বর পিয়ারের ওপর ১২তম স্প্যান বসানো হয়েছে।

মূল সেতুর ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। দ্রুত কাজ এগিয়ে যাওয়ার কারণে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছে, ২০২০ সালের মধ্যে পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হবে।

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতুতে মোট ২৯৪টি পাইল রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে ২৮৮টি পাইল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৬টি পাইল বসানোর কাজ এ মাসেই শেষ হতে পারে বলে আশাবার্দী সংশ্লিষ্টরা। ২৯৪টি পাইলে থাকবে মোট ৪২টি খুঁটি। এতে ৪১ টি (সুপার স্ট্রাকচার) স্প্যান বসবে।

দ্বিতল পদ্মাসেতু হচ্ছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশসহ ধরলে সেতুটি প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন।

পদ্মাসেতুর বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূল সেতু নির্মাণ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন কোম্পানি। আর নদী শাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads